১৩/০৬/২০২৫, ১২:২৯ অপরাহ্ণ
35 C
Dhaka
১৩/০৬/২০২৫, ১২:২৯ অপরাহ্ণ

ঠাকুরগাঁওয়ে স্বাধীনতার ৫৪ বছরেও ঘোচেনি নারী-পুরুষের পারিশ্রমিক বৈষম্য

পুরুষদের মতো বাংলাদেশের নারীরা কর্মক্ষেত্রেসহ নানা বিষয়ে এগিয়ে থাকলেও পুরুষদের তুলনায় পারিশ্রমিকের দিকে পিছিয়ে ঠাকুরগাঁওয়ের নারী শ্রমিকরা।

যদিও গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ২৮ অনুচ্ছেদের ২ ধারায় রাষ্ট্র ও গণজীবনের সর্বস্তরে নারী পুরুষের সমান অধিকারের কথা বলা হলেও তা এখনো শতভাগ বাস্তবায়িত হয়নি নারী শ্রমিকদের ক্ষেত্রে।

তাদের অভিযোগ বর্তমানে সব কিছুর মূল্য অনুযায়ী তারা তাদের অধিকার ও ন্যায্য পারিশ্রমিক পাচ্ছেন না। এতে চরম কষ্টে জীবন যাপন করতে হচ্ছে ঠাকুরগাঁওয়ের এই নারী শ্রমিকদের।

সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, একই কর্মঘন্টা ও সমান পরিশ্রম করেও পুরুষদের তুলনায় নারী শ্রমিকদের মজুরির বৈষম্য নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে শ্রমিকদের মাঝে। নির্মাণ থেকে শুরু করে মাঠে ঘাটে কাজ করা নারী শ্রমিকদের পারিশ্রমিক তুলনামূলক ভাবে কম।

পুরুষের থেকে কাজ বেশি করেও নারীরা মজুরি পাই কম। বর্তমানে জিনিসপত্রের দাম অনেক ৩০০ টাকা মজুরিতে ঠিকমতো সংসার খরচ হয় না। ছেলে মেয়েদের পড়াশোনার খরচ দিতে পারি না।,

মোছাঃ লাইলাতুন নামে আরেক নারী শ্রমিক বলেন, ‘আমরা তো নারী পুরুষের সমান অধিকার চাই কিন্তু পাই না। তাই মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার কাছে অনুরোধ করছি যাতে তিনি আমাদের এবিষয়ে সহযোগিতা করেন।,

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের গিলাবাড়ি গ্রামের ইটভাটার শ্রমিক মিনি বলেন, ‘সারা দিন কষ্ট করে কাজ করে পাই মাত্র ৩০০ টাকা আর পুরুষরা পায় ৫৫০ টাকা। মালিককে আমাদের মজুরি বাড়িয়ে দেওয়ার কথা বললেও বাড়ায় না। কি করবো আমরা তো গরিব মানুষ তাই এই পারিশ্রমিকেই কাজ করতে হচ্ছে।,

অন্যদিকে পুরুষ শ্রমিকদের অভিযোগ বর্তমান দ্রব্যমূল্যের দাম অনুযায়ী তারা ন্যায্য পারিশ্রমিক পাচ্ছেন না। দ্রব্যমূল্যের দাম বাড়ার আগে যা মজুরি পেতেন এখনো তাই পাচ্ছেন।

পীরগঞ্জ উপজেলার রঘুনাথপুর গ্রামের আজিজুল হক নামে এক রড মিস্ত্রী বলেন, ‘বর্তমানে সারা দিনে কাজ করে যা পাই তাই দিয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। যদি দ্রব্যমূল্য অনুযায়ী আমাদের মজুরিও বাড়ানো হতো তাহলে আমাদের আর এতো কষ্ট হতো না।,

সদর উপজেলার পিলার তৈরির কারখানায় কাজ করেন তুরুকপথা বাজার এলাকার কৈলাশ। তিনি বলেন, ‘আগে একটা পিলার তৈরি করে পেতাম ৩৩ টাকা এখনো সেটাই পাই। জিনিসপত্রের দাম তো বাড়ছে অনেক কিন্তু আমাদের কাজের মজুরি বাড়েনি। আমাদের মজুরি বাড়ানোর জন্য সরকার যদি আমাদের দিকে একটু সুদৃষ্টি দিত তাহলে আমরা খুব উপকৃত হতাম।,

তাই মালিক ও সরকারকে দ্রব্যমূল্যের বাজার অনুযায়ী তাদের পারিশ্রমিক বাড়ানো ও নারী শ্রমিকদের সমান মজুরি দেওয়ার দাবি জানান মাত্রিগাঁও গ্রামের ইটভাটার শ্রমিক মো. মোকবুল ইসলাম।

কিন্তু মালিক পক্ষের লোকজন বলেছেন, নারী ও পুরুষদের কাজ অনুযায়ী মজুরি কম বেশি দেওয়া হয় এখানে বৈষম্যের কিছু নেই।

পুরুষদের থেকে নারীদের মজুরি কমের বিষয়ে জানতে চাইলে মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের জেএমবি ব্রিকসের ম্যানেজার মো. সলিমুল্লাহ বলেন, ‘পুরুষ ও নারীদের কাজ কখনোই সমান হতে পারেনা। তাই কাজ ভেদে নারীদের ২৫০-৩০০ টাকা ও পুরুষদের ৫০০-৬০০ টাকা পর্যন্ত হাজিরা দেওয়া হয়। আমরা সরকারের সাথে সংগতি রেখেই কাজ করাছি। এখানে বৈষম্যের কিছু নাই।,

জেলার শ্রমিক নেতারা বলছেন, শ্রমিক আন্দোলন আমেরিকার শিকাগো শহর থেকে শুরু হয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫৪ বছর পেরিয়ে গেলেও শ্রমিকরা আমরা আমাদের ন্যায্য অধিকার ও পারিশ্রমিক আদায় করতে পারেন নি। তাই এবিষয়ে সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন তারা।

জেলা ট্রাক, ট্যাংকলরী, কাভার্ড ভ্যান ও পিকআপ শ্রমিক ইউনিয়নের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য মো. রুহুল আমীন বলেন, ‘আমরা শ্রমিক দিবস পালন করি ঠিকই ও স্বাধীনতার ৫৪ বছর পেরিয়ে গেলেও আজ পর্যন্ত আমাদের ন্যায্য অধিকার আদায় করতে পারিনি। আমরা আন্দোলন সংগ্রামে গেলে মালিক পক্ষ আমাদের দাবিয়ে রাখার চেষ্টা করে।,

তিনি আরও বলেন, ‘পণ্যবাহি একটি ট্রাক ঢাকা নিয়ে যেতে ও আসতে একজন চালক পাই ২৫০০ টাকা সময় লাগে ৪ দিন। চালকের সাথে আবার একজন সহকারি থাকেন। তাকে ১ হাজার টাকা দিলে চালকের থাকে ১৫০০ টাকা। ৪ দিন পরিশ্রম করে বর্তমান দিনে দেড়হাজার টাকা দিয়ে আমাদের কিছুই হয় না। ঢাকা আপডাউনে কমপক্ষে ৬ হাজার টাকা পারিশ্রমিক লাগে। তাহলে আমরা কেমন করে ন্যায্য পারিশ্রমিক পাচ্ছি?। আমাদের কথা কেউ কর্ণপাতও করে না। তাই সরকারকে বিনীত অনুরোধ করছি শ্রমিকদের অধিকার আদায়ের জন্য।,

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ ঠাকুরগাঁও জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক সূচরিতা দেবী ব‌লেন, একজন পুরুষ শ্রমিকের সমান কাজ করেও সমমজুরি পাচ্ছেন না নারীরা এটা খুবই দুঃখজনক। এ মজুরি বৈষম্য প্রতি‌রো‌ধে সরকারি বেসরকারি সংগঠন গু‌লো‌কে এ গি‌য়ে আস‌তে হ‌বে।এ‌তে নারী শ্রমিকদের সমমর্যাদা ফি‌রে আস‌বে।

এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁও জেলা মহিলা বিষয়ক উপপরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) জিন্নাত আরা ইয়াছ‌মিন বলেন, জেলায় নারী শ্রমিক কত শতাংশ কাজ ক‌রেন তার কোনো পরিসংখ্যান নেই। তবে পুরুষদের পাশাপাশি নারীরা কৃষিসহ নানা বিষয়ে শ্রম দিয়ে যাচ্ছে। কর্মক্ষেত্রে নারী‌দের ন্যায্য ও সমান মজুরি প্রদান করা উচিত।

এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক ইসরাত ফারজানা বলেন, নারী ও পুরুষ উভয়েই সমান পারিশ্রমিক পাওয়ার অধিকার রাখে। এক্ষেত্রে যদি কোন ব্যত্যয় ঘটে, সম-অধিকারের ভিত্তিতে নারীরা যদি পুরুষদের সমান পারিশ্রমিক না পান তাহলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।, এছাড়াও তিনি দ্রব্যমূল্যের সাথে সংগতি রেখে শ্রমিকদের পারিশ্রমিক দেওয়ার জন্য আহ্বান জানান মালিক ও শ্রমিক নিয়োগকারীদের।

পড়ুন: ঠাকুরগাঁওয়ে কেন্দ্রীয় মসজিদ নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করলেন: মির্জা ফখরুল

দেখুন: হারিয়ে গেল ঠাকুরগাঁও সিনেমা হলের সোনালি অতীত 

ইম/

বিজ্ঞাপন

আরও পড়ুন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

বিশেষ প্রতিবেদন