বিতর্কিত নির্বাচনকালীন দায়িত্বে থাকা পুলিশ সুপারদেরও ডিসিদের পথে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
২০১৮ সালে নির্বাচন যতটা না জনগণের পক্ষে, তার চেয়ে বেশি ছিল রাজনৈতিক ক্ষমতা সুরক্ষায় ব্যবহৃত কৌশল। দেশের সবচেয়ে বড় দুটি দলের মধ্যে একপেশে সমঝোতা, প্রশাসনের সহায়তা এবং ভোটের ফলাফল রাতে ঘোষণা করা—এগুলো সবই ‘রাতের ভোট’ নামে পরিচিতি পেয়েছিল।
প্রহসনের নির্বাচনে জনগণের ছিনতাই হয়ে যাওয়া ভোটাধিকারের গ্লানি এখনো সমাজ ও রাজনীতিতে বিদ্যমান। জনগণ যেভাবে তাদের অধিকার চেয়েছিল, তা পূরণ হয়নি এবং প্রশাসনের একাংশ তার দায় নিতে চায়নি।
৩৩ ডিসির পর এখন সেই ‘রাতের ভোটের’ সহযোগী হিসেবে কাজ করা কর্মকর্তাদের দলে এসপিদের নাম যুক্ত হলো। রাষ্ট্রের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং প্রশাসনের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তারা ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন বলে যে অভিযোগ উঠেছে, তার পরিপ্রেক্ষিতে এই পদক্ষেপ জরুরি ছিল বলেও মনে করছেন অনেকেই।
২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪—এই তিনটি নির্বাচনী ঘটনা একে অপরের সাথে জড়িত। এর মাঝে ২০১৪ সালের নির্বাচনটি ছিল অনেকটাই একপেশে, যেখানে অধিকাংশ বিরোধী দলই অংশগ্রহণ করেনি। ২০১৮ সালের নির্বাচন তো ছিল ভিন্নভাবে চিহ্নিত—নির্বাচন প্রক্রিয়াও আড়াল করা হয়েছিল রাতের অন্ধকারে।
প্রশাসনিক দায়িত্ব পালনকালে এসপিরাও সঠিকভাবে কাজ করেনি বলে অভিযোগ উঠেছে। অতীতে তারা যে ধরনের রাজনৈতিক চাপ বা সুবিধা নিয়ে কাজ করেছে, তাতে জনগণের জন্য সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করা কঠিন হয়ে পড়েছিল।
এভাবে, যারা জনগণের ভোটাধিকারের প্রতি সম্মান দেখায়নি, তাদের বিরুদ্ধে এই সিদ্ধান্ত একটি শক্তিশালী বার্তা দেয়। তবে, এর সঙ্গে আরও বড় প্রশ্ন উঠে, সঠিক বিচার প্রক্রিয়া ও দীর্ঘমেয়াদী রাজনৈতিক সংস্কারের জন্য কি এই পদক্ষেপ যথেষ্ট?
আওয়ামী লীগের শাসনামলে একের পর এক এমন বিতর্কিত নির্বাচন হয়ে আসছে, যেখানে ভোটের স্বাধীনতা ও সুষ্ঠু প্রক্রিয়া প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। এসব ঘটনা দেশের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর ব্যাপক আঘাত হেনেছে, যা সমাজের বিশ্বাস ও আস্থাকে ক্ষুণ্ণ করেছে।
এসপি এবং ডিসিদের একের পর এক ওএসডি বা অবসর পাঠানোর মাধ্যমে যে প্রতিকার নেয়া হচ্ছে, তা জনগণের কাছে একটি সান্ত্বনা হতে পারে। তবে, ভোটাধিকার রক্ষায় আরও কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা এখনও অস্বীকার করা যায় না। যদি শুধু প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের বদলি করা হয়, তবে কি সত্যিকারের পরিবর্তন আসবে? সমাজপাতায় এমন প্রশ্ন তুলছে নেটিজেনদের অনেকেই।
নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে যদি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করা না যায়, তবে জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনা অসম্ভব হয়ে পড়বে। জনগণ তাদের ভোটের অধিকার ফিরে পাওয়ার দাবিতে আরও জোরালো হয়ে উঠছে—যা বাংলাদেশে আগামী দিনের রাজনীতির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দাঁড়াবে।
এনএ/