দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়া ডেঙ্গুর প্রকোপ এখন ভয়াবহ রূপ নিয়েছে উপকূলীয় জেলা বরগুনায়। হুহু করে বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। ইতোমধ্যে ভয়াবহ ডেঙ্গু কেড়ে নিয়েছে ১৩টি তাজা প্রাণ। পরিস্থিতি মোকালোয় হিমশিম খাচ্ছে স্বাস্থ্য বিভাগ। চিকিৎসক সংকট, অপর্যাপ্ত ওষুধ ও চিকিৎসা সামগ্রীর সংকট পরিস্থিতিকে আরো বেশি বিপদাপন্ন করে তুলছে। সংকট মোকাবেলায় নড়েচড়ে বসেছে স্বাস্থ্য বিভাগ।
সবশেষ বরগুনা জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ১৫ জুন পর্যন্ত বরগুনায় ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে ১ হাজার ৮শ ৩৮ জন। এর মধ্যে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়েছেন ১ হাজার ৬শ ২৩ জন। চিকিৎসাধীন রয়েছেন ২১৫ জন। গত ২৪ ঘন্টায় নতুন রোগী ভর্তি হয়েছে ৭৯জন। সরকারি হিসেবে মৃত্যবরণ করেছেন ৫ জন। এছাড়াও ঢাকা ও বরিশালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বরগুনার বাসিন্দা মৃত্যুবরণ করেছেন ৮ জন। এই রোগীর অধিকাংশই বরগুনা পৌর শহর ও সদর উপজেলার বাসিন্দা। একই সাথে জেলার পাথরঘাটা, বামনা, বেতাগী ও আমতলীতেও বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর প্রকোপ।
রবিবার (১৫ জুন) দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, অধিকাংশ ওয়ার্ডেই শয্যার সংকট দেখা দিয়েছে। বহু রোগীকে মেঝেতে শুয়ে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। নারী ও শিশু ওয়ার্ডসহ মেডিসিন ইউনিটেও একই অবস্থা। অনেক রোগীকে বারান্দা ও করিডোরে বিছানা পেতে রাখা হয়েছে। এতে করে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন। শয্যার পাশাপাশি দেখা দিয়েছে রক্ত পরীক্ষার কিট এবং স্যালাইনের সংকট। অনেক রোগীকেই বাইরে থেকে টেস্ট করাতে ও স্যালাইন কিনে আনতে হচ্ছে।
একজন রোগীর স্বজন বেল্লাল হোসেন বলেন, “তিন দিন ধরে মেঝেতেই চিকিৎসা নিচ্ছে আমার ভাই। জায়গা নেই, ডাক্তার-নার্সরাও খুব ব্যস্ত। আবার হাসপাতালের ল্যাবে টেস্ট করা যাচ্ছে না, বাইরেই করাতে হচ্ছে। স্যালাইনও বাইরে থেকে কিনে আনতে হয়েছে।” এখানকার পরিবেশটা অনেক খারাপ কারণ হচ্ছে এত পরিমাণে রোগী এখানে পা রাখার জায়গা নেই সুস্থ লোক আসলে অসুস্থ হয়ে পড়বে এখানে।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক রেজোয়ানুর আলম বলেন, রোগীর চাপ সামাল দিতে তারা সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা উপকরণ দ্রুত সরবরাহ না হলে পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যেতে পারে।
বরগুনার সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মাদ আবুল ফাত্তাহ বলেন, ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ রুপ ধারণ করায় চিকিৎসা সেবা প্রদানে একটু বিঘ্ন ঘটছে। তারপরও চিকিৎসকদের অক্লান্ত পরিশ্রমে আমরা সার্বিক পরিস্থিতি সামাল দিতে সক্ষম হয়েছি। বরগুনার ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে দফায় দফায় স্বাস্থ্য বিভাগের সাথে যোগাযোগ অব্যহত রয়েছে।
তিনি আরো বলেন, জরুরী পরিস্থিতি মোকাবেলায় বরগুনা ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ৮জন চিকিৎসক ও ১০জন নার্স পদায়ন করা হয়েছে। এছাড়াও স্যালাইন ও রক্ত পরীক্ষার যে কিট সংকট তৈরি হয়েছে সেবিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
এনএ/