অবশেষে স্থবির হয়ে পড়া ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনে প্রশাসক নিয়োগ দিয়েছে সরকার। গত ১০ ফেব্রুয়ারি “স্থবির ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন, দূর্ভোগে নগরবাসী” শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশ করে নাগরিক টেলিভিশন। প্রতিবেদিন প্রকাশের দু-দিন পরেই দুই সিটিতে প্রশাসক নিয়োগ দিলো সরকার।
নাগরিক টিভির প্রতিবেদনে বলা হয়, মেয়র কাউন্সিলর না থাকায়, সরকারি বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের দিয়ে চলছে সিটি করপোরেশনের কাজ। নানা কারণে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন এসব এলাকার জনসাধারণ। মশা, যানজটে অতিষ্ঠ আর নানা নাগরিক সেবা বঞ্চিত নগরবাসী যেন হাপিয়ে উঠেছেন।
প্রতিবেদনে নগরবাসীর নানা দূর্ভোগের পাশাপাশি গত ৬ মাসে কর্পোরেশনের দৈন্যতার চিত্র ফুটে ওঠে। প্রতিবেদনে বলা হয়। হাজারো সমস্যায় জর্জরিত ঢাকাবাসী। প্রতিনিয়তই নানা সমস্যার মুখোমুখী হয়ে চলতে হয় তাদের। সীমাহীন ভোগান্তি পোহাতে পোহাতে কষ্টে পাথর নগরবাসীর। যেন এই নগর মানুষের নয়। দুর্নীতি, অনিয়ম, দায়িত্বহীনতা, অব্যবস্থাপনাকে ভোক্তা সেবাগ্রহীতারা নিয়তি বলেই মেনে নিয়েছেন। ঢাকার সেবায় আছে ৭টি মন্ত্রণালয় ও ৫৪টি প্রতিষ্ঠান। ছাত্র জনতার অভ্যুত্থানের আগে ছিলেন দুইজন মেয়র। আর এখন নামমাত্র প্রশাসক বসিয়ে চলছে দায়সারা কাজ।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে হাফ বেলার প্রশাসক থাকলেও দক্ষিণে প্রশাসক নেই প্রায় এক মাস। প্রধান নির্বাহীর পদটিও শূন্য। তাছাড়া প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা, প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা, প্রধান অডিট কর্মকর্তাসহ শীর্ষ পদে কেউ নেই। অনেকটাই অভিভাবকহীনভাবে চলছে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন।
স্থানীয় কাউন্সিলর অফিস চালাচ্ছেন কর্পোরেশন কর্মচারীরা। লোকবল স্বল্পতায় ব্যাহত হচ্ছে সেবা। প্রয়োজনীয় সেবা না পেয়ে ক্ষুব্ধ সেবাপ্রত্যাশীরা তুলে ধরেন নানা অভিযোগ।
চরম ভোগান্তি নিয়ে প্রতিদিন আঞ্চলিক কার্যালয় থেকে ফিরে যাচ্ছেন সেবাপ্রত্যাশী নাগরিকরা। মেয়র-কাউন্সিলর না থাকায় কোনো অভিযোগও দিতে পারছেন না তারা। আঞ্চলিক নির্বাহীরাও স্বীকার করলেন লোকবল স্বল্পতার কথা। তবে কথা বলেননি ক্যামেরার সামনে।
রাজধানীতে দিন দিন বেড়েই চলেছে ডেঙ্গু প্রকোপ। মশার আক্রমণ ক্রমাগত বাড়লেও নেই সেই তুলনায় প্রতিরোধ ব্যবস্থা। দুই সিটি করপোরেশন যেন ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে কাজই করছে না। অনেক এলাকাতে দীর্ঘদিন ধরে মশা নিধনের ওষুধ ছিটানো হচ্ছে না। এমন অভিযোগ করছেন সাধারণ নাগরিকরা।
এছাড়াও এতে বলা হয়, উত্তর সিটির দক্ষিণখান, উত্তরখান ও কাওলা এলাকার মানুষের ভোগান্তি চরমে। রাস্তা সংস্কার ও মেরামতের নামে চলাচলের মূল সড়ক ফেলে রাখা হয়েছে প্রায় বছর খানেক ধরে। এসব ভাঙাচোরা রাস্তা দিয়ে চলতে হয় কষ্ট করে। দীর্ঘদিন এসব কাজ ফেলে রাখলেও কেউই নজর দিচ্ছে না।
এসব বিষয়ে নগরবিদরা বলেন, নগর এলাকার পরিকল্পনা ও উন্নয়নকে টেকসই ও নগরকে বাসযোগ্য করতে তরুণদের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন ভাবনায় আরো ঘনিষ্ঠভাবে সম্পৃক্ত করা প্রয়োজন। এতে নগর পরিকল্পনা প্রণয়ন, উন্নয়ন প্রকল্প নির্ধারণ, সিটি করপোরেশন ও পৌর এলাকার উন্নয়ন বাজেট বরাদ্দ প্রক্রিয়ায় বৈষম্যহীন নগরায়ন ও নগর উন্নয়ন নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।

প্রতিবেদন প্রকাশের দু-দিন পর ঢাকার দুই সিটিতেই প্রশাসক নিয়োগ দিয়েছে সরকার।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রশাসক হিসেবে মোহাম্মদ এজাজকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। আগামী এক বছর তিনি এ পদে দায়িত্ব পালন করবেন। স্থানীয় সরকার বিভাগ এ–সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। মোহাম্মদ এজাজ বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান রিভার অ্যান্ড ডেলটা রিসার্চ সেন্টারের (আরডিআরসি) চেয়ারম্যান।

এদিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে (ডিএসসিসি) নতুন প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. শাহজাহান মিয়াকে। তিনি সম্প্রতি অতিরিক্ত সচিব হিসাবে পদোন্নতি পেয়েছেন। উপ-সচিব মাহবুবা আইরিন স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, নিয়োগকৃত প্রশাসক ‘স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৪’ এর ধারা ২৫ক এর উপ-ধারা (৩) অনুযায়ী ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র এর ক্ষমতা প্রয়োগ ও দায়িত্ব পালন করবেন।
পড়ুন: স্থবির ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন, দুর্ভোগে নগরবাসী
আরও দেখুন- https://www.facebook.com/nagoriktv.media/videos/926553492929166
আরও দেখুন- https://nagorik.com/%e0%a6%a2%e0%a6%be%e0%a6%95%e0%a6%be-18/
ইম/