24 C
Dhaka
মঙ্গলবার, জানুয়ারি ২১, ২০২৫

দক্ষিণ এশিয়ার দুর্ভাগা নোবেল জয়ীরা!

এ পর্যন্ত নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন ৯৫৪ ব্যক্তি এবং ২৭টি সংগঠন। এ তালিকায় এশিয়ার প্রতিনিধি ৭০ জনের মতো। বিশ্ব মানবসম্পদে এশিয়ার হিস্যার (৬০ শতাংশ) তুলনায় এটা অল্পই বলতে হবে। তার মাঝে ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, মিয়ানমার নিয়ে যে অঞ্চল, তার পুরস্কার-হিস্যা তুলনামূলকভাবে আরও কম। এশিয়ার নোবেলের বড় অংশ গেছে জাপানের ঘরে।

অতীতে নোবেল পাওয়া দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ায় বিশেষ উল্লাসের ব্যাপার ছিল। তবে অং সান সু চি, আবদুস সালাম, মাদার তেরেসা, মুহাম্মদ ইউনূসের নিজ দেশে নানা নিদারুণ অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়ে যেতে হয়েছে।

কবরফলকও সংশোধনের শিকার
দক্ষিণ এশিয়ায় নোবেল বিজয়ীদের দুর্গতি যে মৃত্যুর পরও তাড়া করতে পারে, তার নজির আবদুস সালাম। তিনি আহমদিয়া বা কাদিয়ানি সম্প্রদায়ের মানুষ। যদিও পুরস্কার পেয়েছিলেন তাত্ত্বিক পদার্থবিদ্যায় গবেষণা ও পরিশ্রমের জোরে, কিন্তু তাঁর দেশের নাগরিকদের বড় অংশের কাছে তাঁর ধর্মীয় বিশ্বাসই ছিল মুখ্য, জ্ঞানজগতে তাঁর অবদান নয়। ফলে, একপর্যায়ে এ–ও দেখা গেছে, তাঁর কবরের ফলকে পরিচয়বিবরণী থেকে ‘মুসলমান’ পরিচয় ঘষে তুলে দেওয়া হয়। পাকিস্তানে আহমদিদের ‘অমুসলমান’ ঘোষণার সঙ্গে এ উদ্যোগ সম্পর্কিত ছিল।

পাঁচ দফা কারাজীবন কাটাতে হয় লিউ শিয়াবোকে
মালালা ছাড়াও এ অঞ্চলে আরও তিনজন ‘শান্তি’তে নোবেল পান। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া নোবেল পুরস্কারের বড় এক অংশই গেছে ‘শান্তি প্রতিষ্ঠায় অবদান’–এর জন্য। তবে বিস্ময়কর ও কৌতুককর হলো, এ রকম পুরস্করগ্রহীতারা প্রায় সবাই গুরুতর অশান্তির মধ্যে পড়েছেন বলে তাঁদের নিকটজনদের দাবি।

বিতর্কিত অং সান সু চি
মালালার পুরস্কার পাওয়ার ২২ বছর আগে নোবেল পান মিয়ানমারের অং সান সু চি। তাঁর এই পুরস্কার পাওয়ার পটভূমি তৈরি করেছিল গণতন্ত্রের জন্য তাঁর অতীত সংগ্রাম এবং দীর্ঘ গৃহবন্দিত্ব। দুর্ভাগ্যের দিক, এ লেখা তৈরির সময়ও ৭৭ বছর বয়সী এই নারী গৃহবন্দী। মাঝখানে কিছুদিন নির্বাচনে জিতে সরকার চালালেও তাঁর আপাতত মুক্তির কোনো সম্ভাবনা নেই। ইতিমধ্যে কয়েক দফায় প্রায় ১৭ বছরে জেল জীবন কাটিয়ে ফেলেছেন তিনি। সু চির জীবন মিয়ানমারের পাশের দেশ চীনের লিউ শিয়াবোর পরিণতি স্মরণ করিয়ে দেয় এখন। ২০১০ সালে শান্তিতে নোবেল পাওয়া এই লেখক জেল খাটতে খাটতেই মারা গেলেন ২০১৭ সালের জুলাইয়ে। মৃত্যু নিশ্চিত জানার পরই এক মাস আগে তাঁকে ছাড়া হয়। তার আগে বিভিন্ন সময় অন্তত পাঁচ দফা বন্দী ছিলেন তিনি।

‘ধর্মীয় সাম্রাজ্যবাদী’ বলা হতো তেরেসাকে
মুহাম্মদ ইউনূস, মালালা ইউসুফজাই, অং সান সু চির আগে দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তিতে নোবেল পুরস্কার আসা শুরু মাদার তেরেসার মাধ্যমে।

জন্মগতভাবে দক্ষিণ এশিয়ার মানুষ না হলেও এ অঞ্চলে কাজের জন্যই নোবেল পান মাদার তেরেসা। মৃত্যুর আগে-পরে তিনিও তীব্রভাবে সমালোচিত ছিলেন। কেউ কেউ তাঁকে ‘ধর্মীয় সাম্রাজ্যবাদী’ বলেছে। অনেকে বলেছে, তিনি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য নন—এমন ধনীদের থেকে দানের অর্থ নিতেন। এ রকম সমালোচনাকারীদের তালিকায় খ্যাতনামা মার্ক্সবাদী তারিক আলীও আছেন।

অমর্ত্য সেনকে বসতভিটার একাংশ ছাড়ার নোটিশ
শব্দ হিসেবে ‘প্রতীচী’র মানে পশ্চিম দিক বা পশ্চিমমুখী। শান্তিনিকেতনে সেন পরিবারের যন্ত্রণার ‘পূর্ব দিকে’ রয়েছে অমর্ত্য সেনের ওপর ভারত শাসকদের রাগ-ক্ষোভ। এই ক্ষোভে আরএসএস পরিবার বিশ্ববিদ্যালয়টির কর্তাদের দিয়ে ঘি ঢালছে বলে বিশ্বাস করে অনেক বাঙালি। কোনো ধরনের আর্থিক ত্রুটি না পেয়ে নজর পড়েছে অশোক সেনের বাড়ির দিকে। অথচ ১৯৯৮ সালে অমর্ত্য সেন নোবেল পাওয়ার পরের বছর অটল বিহারির বিজেপি সরকার তাঁকে ‘ভারতরত্ন’ দিয়ে ফায়দা নিতে মোটেও বিলম্ব করেনি। কিন্তু এখন তিনি আপত্তিকর হয়ে উঠেছেন। বেশ কয়েক বছর ধরে এমন চলছে। তাঁর অপরাধ কী, সেটা অনুমান করা কঠিন নয়।

বিজ্ঞাপন

আরও পড়ুন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

বিশেষ প্রতিবেদন