29.5 C
Dhaka
বুধবার, মার্চ ২৬, ২০২৫

আসাদ যুগের সমাপ্তি, দামেস্কে বিদ্রোহীদের উল্লাস

সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আর আসাদ পালিয়ে গেছেন। বিদ্রোহী যোদ্ধারা প্রায় বিনা বাধায় রাজধানী দামেস্কে ঢুকে পড়ার পর বিমানে করে শহরটি ছেড়ে যান আসাদ।

অবশ্য তিনি কোথায় গেছেন তা জানা যায়নি। রোববার (৮ ডিসেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ রোববার একটি বিমানে চড়ে দামেস্ক থেকে অজানা গন্তব্যের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছেন বলে দুই সিনিয়র সেনা কর্মকর্তা রয়টার্সকে জানিয়েছেন।

Bashar al-Assad

দামেস্কের কুখ্যাত সেদনায়া কারাগার ভেঙে বন্দীদের ছেড়ে দিলেন বিদ্রোহীরা

আসাদের দামেস্ক ত্যাগের পরপরই বিমান বন্দর থেকে সরকারি সেনাদের প্রত্যাহার করা হয় বলেও জানা গেছে।

এর আগে থেকেই বিদ্রোহীরা রাজধানীতে ঢুকতে শুরু করেছে বলে খবর আসতে থাকে। সে সময় রাজধানী দামেস্কে সরকারি বাহিনীর উপস্থিতিও দেখা যায়নি।

রাজধানীতে ঢোকার আগে দামেস্কের উপকণ্ঠে অবস্থিত দেশটির সবচেয়ে কুখ্যাত ‘সেইদনায়া’ কারাগার থেকে বন্দিদের মুক্ত করে দেয় বিদ্রোহীরা।

Syrian rebels say President Assad has fled as they declare they have captured capital Damascus

সিরিয়ার সরকারি রেডিও-টিভি, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বিদ্রোহীদের দখলে

সিরিয়ার সরকারি রেডিও ও টেলিভিশন ভবন দখল করে নিয়েছেন সশস্ত্র বিদ্রোহীরা। একইসঙ্গে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে সিরীয় সেনাদের সরিয়ে নেওয়ার পর সেই স্থাপনাও দখলে নিয়েছেন তারা।

মূলত পাবলিক রেডিও এবং টিভি ভবন সিরিয়ার একটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। দামেস্কের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত হওয়ার পাশাপাশি এই ভবনটি সিরিয়ার ১৯৫০ এবং ৬০ এর দশকে ধারাবাহিক অভ্যুত্থানের সময় নতুন সরকার ঘোষণা করতে ব্যবহৃত হয়েছিল।

এদিকে সিরিয়ার বিদ্রোহী সূত্র আল জাজিরা আরবিকে জানিয়েছে, দামেস্কে অবস্থিত প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সদর দপ্তর থেকে সরকারি বাহিনী প্রত্যাহার করা হয়েছে।

দামেস্কে রাস্তায়-রাস্তায় উল্লাস, বিমানবন্দরে ব্যাপক বিশৃঙ্খলা

মধ্যপ্রাচ্যের এই দেশটির রাজধানীতে রাস্তায় নেমে এসেছেন হাজার হাজার মানুষ। রাজধানী দামেস্কে হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে এসেছে। তারা আনন্দ উল্লাসে মেতে উঠেছে, স্বাধীনতার স্লোগান দিচ্ছে এবং শহরের কেন্দ্রীয় এলাকায় তারা হেঁটে ও গাড়িতে করে জড়ো হচ্ছে।

তারা উল্লাস প্রকাশের পাশাপাশি ‘স্বাধীনতা’ নিয়ে বিভিন্ন স্লোগানও দিচ্ছেন। অন্যদিকে দামেস্কের বিমানবন্দরে ব্যাপক বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে।

আলজাজিরার নিশ্চিত করা এক ভিডিওতে দেখা যায়, দামেস্কের উমাইয়াদ স্কয়ারে পরিত্যক্ত সামরিক ট্যাংকের ওপর দাঁড়িয়ে একদল মানুষ গান গাইছে এবং আনন্দ প্রকাশ করছে। শহরের অন্যান্য এলাকাতেও এরকম উদযাপনের চিত্র দেখা গেছে।

আসাদের পতনে বিদ্রোহীরা ঘোষণা করল ‘নতুন যুগ’

সিরিয়ার সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী ঘোষণা করেছে যে, আসাদের শাসনের অবসান সিরিয়ার ইতিহাসে নতুন এক যুগের সূচনা করেছে। এক বিবৃতিতে তারা বলেছে, ‘বাথ শাসনের অধীনে ৫০ বছর ধরে চলা দমন-পীড়ন, ১৩ বছরের অপরাধ, নিপীড়ন ও স্থানচ্যুতির পর, আমরা আজ সেই অন্ধকার যুগের অবসান ঘটিয়েছি। সিরিয়ার জন্য নতুন একটি যুগের সূচনা শুরু হলো।’

এটি সিরিয়ার দীর্ঘদিনের গৃহযুদ্ধের পর, দেশটির জন্য একটি নতুন দিগন্তের সূচনা হিসেবে দেখা হচ্ছে। বিদ্রোহীরা তাদের জয়কে ‘ঐতিহাসিক’ মুহূর্ত হিসেবে অভিহিত করেছে, যেখানে দীর্ঘ ১৩ বছর ধরে চলা সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে তারা এক নতুন শুরুর পথে পা রেখেছে।

Three women pose for a photo in Jaramana

পালিয়ে যাননি সিরিয়ার প্রধানমন্ত্রী, বললেন— সহায়তায় প্রস্তুত আছি

বাশার আল আসাদ পালালেও পালিয়ে যাননি সিরিয়ার প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ গাজি আল-জালালি। তিনি দামেস্কে তার বাড়িতেই থাকছেন এবং পালিয়ে যাওয়ার কোনও পরিকল্পনা নেই বলেও জানিয়েছেন।

একইসঙ্গে বিরোধীদের দিকে সহায়তার হাতও বাড়িয়ে দিয়েছেন সিরিয়ার এই প্রধানমন্ত্রী। রোববার (৮ ডিসেম্বর) এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।

পালিয়ে যাননি সিরিয়ার প্রধানমন্ত্রী

দেখুন: সিরিয়া সংকট নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়া দ্বন্দ্ব

বাশার ক্ষমতায় টিকলেন দুই যুগ

মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সিরিয়া। ধন-মান-ঐতিহাসিক পুরাকীর্তিতে একসময়ের বেশ সমৃদ্ধ দেশটি এখন রীতিমতো ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। ২০১১ সাল থেকে চলছে রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধ। ১৩ বছর পরও লড়াই-রক্তপাত থামেনি। এরই মধ্যে ইতিহাসের ভয়াবহতম মানবিক সংকটের মুখোমুখি হয়েছে সিরিয়া। গাজা, লেবানন আর ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে বিশ্ববাসী যখন সরব, ভুগছেন উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায়; তখন নতুন করে আলোচনায় সিরিয়া।

সিরিয়ার কথা বলতে গেলে অবধারিতভাবে আসবে আল-আসাদ পরিবারের কথা। কেননা, টানা পাঁচ দশকের বেশি সময় ধরে সিরিয়া শাসন করছে পরিবারটি। এর মধ্যে ১৯৭১ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট ছিলেন হাফিজ আল-আসাদ। ২০০০ সালে তাঁর মৃত্যু হয়। এরপর ওই বছরই ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হন তাঁর ছেলে বাশার আল-আসাদ। টানা দুই যুগ (২৪ বছর) ধরে তিনি প্রেসিডেন্ট পদে আছেন।

এখন যে গৃহযুদ্ধ চলছে, সেটা শুরু হয়েছিল বাশার আল-আসাদের শাসনকাঠামোর বিরুদ্ধে জনগণ, বিশেষ করে দেশের বেকার তরুণদের প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ থেকে। তারুণ্যের সেই প্রতিবাদ দমাতে খড়্গ হাতে তুলে নেন বাশার। এতে রাজপথে রক্ত ঝরে, অশান্তি ও সংঘাত ছড়ায় দেশজুড়ে। এরপর সিরিয়া সংকটে একে একে জড়িয়ে পড়ে আঞ্চলিক শক্তি থেকে বৈশ্বিক পরাশক্তিগুলো।

অতিসম্প্রতি সিরিয়ায় বাশার আল-আসাদের সরকারি বাহিনীর কাছ থেকে দুটি গুরুত্বপূর্ণ শহরের (আলেপ্পো ও হামা) নিয়ন্ত্রণ নেন বিদ্রোহীরা। পরে কৌশলগত হোমসসহ অন্যান্য শহরের নিয়ন্ত্রণ নেন। বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর নেতৃত্বে থাকা হায়াত তাহরির আল-শামের (এইচটিএস) নেতা আবু মোহাম্মদ আল-জোলানি বলেছেন, কর্তৃত্ববাদী প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদকে উৎখাত করা তাঁদের চূড়ান্ত লক্ষ্য।

বিজ্ঞাপন

আরও পড়ুন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

বিশেষ প্রতিবেদন