27 C
Dhaka
রবিবার, মার্চ ১৬, ২০২৫

দিল্লিতে হাসিনা, তলানিতে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক: এবিসি

বাংলাদেশের স্বাধীনতা পরবর্তী গত পাঁচ দশকে এবারের মতো এমন টানাপোড়েনের সম্পর্ক কখনও হয়নি ঢাকা-দিল্লির। কয়েক দশক ধরেই দুই প্রতিবেশী দেশের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকলেও চলতি বছরের মাঝামাঝি থেকে সেই সম্পর্কে ভাটা পড়েছে।

ক্ষমতাচ্যুত হয়ে দেশ ছেড়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরিবর্তন এসেছে পররাষ্ট্রনীতিতেও, দৃশ্যমান অসামঞ্জস্য এসেছে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রেও।

সম্প্রতি বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের অবস্থা তুলে ধরে এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে আস্ট্রেলিয়ান গণমাধ্যম এবিসি নিউজ।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি বছরের জুলাইয়ে বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে কোটার বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণ ছাত্র বিক্ষোভ শুরু হয়। এই বিক্ষোভে আওয়ামী লীগ সরকারের কঠোর দমননীতি ও শক্তি প্রয়োগের ফলে কোটা আন্দোলন শেষ পর্যন্ত দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করার ‘দেশব্যাপী গণআন্দোলনে’ পরিণত হয়। এই আন্দোলন ‘বিশ্বের প্রথম জেন-জি বিপ্লব’ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। বিশ্বকে চমকে দেয়া এ আন্দোলনে শেষ পর্যন্ত দেশটির প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে হেলিকপ্টারে দেশ ছাড়তে বাধ্য হন।

এরপর থেকে দিল্লিতেই নির্বাসিত আছেন শেখ হাসিনা। এদিকে বাংলাদেশে ইসকন নেতাকে গ্রেপ্তার ও ভারতে বাংলাদেশের একটি কনস্যুলেটে উগ্র হিন্দুদের হামলার পর দু’দেশের সম্পর্কে ব্যাপক টানাপোড়েনের জন্ম দিয়েছে। এর ফলে দক্ষিণ এশিয়ার এই দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে সম্পর্ক তলানিতে নেমেছে। একই সঙ্গে সম্পর্কের মধ্যে ধর্মীয় উত্তেজনাও বিদ্যমান। আলোচনায় এসেছে বাংলাদেশের কথিত সংখ্যালঘু নির্যাতনের বিষয়েও।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, দক্ষিণ এশিয়ার প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় শেখ হাসিনার কট্টর ও স্বৈরাচারী শাসনের অধীনে থাকা বাংলাদেশকে ভারত দীর্ঘদিন ধরে তার অনেক বেশি স্থিতিশীল অংশীদার বলে মনে করেত। যদিও আফগানিস্তান, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা সবাই সাম্প্রতিক রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক উত্থান-পতনের অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে। কিন্তু শেখ হাসিনার ১৫ বছরের শাসনামল গত আগস্টে আকস্মিকভাবে অবসান ঘটার পর নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে বাংলাদেশে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়।

এবিসি আরও জানিয়েছে, বাংলাদেশের ১৭ কোটি ৪০ লাখ জনসংখ্যার মধ্যে হিন্দুদের সংখ্যা প্রায় ১০ শতাংশ। তাদের অনেকেই ঐতিহাসিকভাবে হাসিনার আওয়ামী লীগকে সমর্থন করেছিল। শেখ হাসিনা ক্ষমতা থেকে বিতাড়িত হওয়ার পর বিক্ষুব্ধদের অনেকে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন প্রতীক এবং কিছু ক্ষেত্রে দলটির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হিন্দুদেরও টার্গেট করেছিল। তবুও হিন্দুদের রক্ষা করার জন্য ড. ইউনূসের সরকার যথেষ্ট কাজ করছে না বলে অভিযোগ করেছে ভারত। অন্যদিকে ভারতে নির্বাসিত শেখ হাসিনাও দাবি করেছেন, সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে ‘গণহত্যার’ জন্য দায়ী এই সরকার।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং গত সেপ্টেম্বরে ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীকে বাংলাদেশের অস্থিতিশীল পরিস্থিতির উল্লেখ করে অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত থাকতে এবং প্রতিবেশী দেশগুলোর পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করার আহ্বান জানিয়েছিলেন। তবে গত নভেম্বরের শেষের দিকে বাংলাদেশে জাতীয় পতাকাকে অসম্মান করার অভিযোগে হিন্দু ইসকন নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে গ্রেপ্তার করা হয়। কিন্তু তার সমর্থকদের বিশ্বাস, হিন্দুদের বিরুদ্ধে হামলার বিষয়ে সোচ্চার থাকায় তাকে লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে। এরপর চলতি ডিসেম্বর মাসের শুরুতে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলায় অবস্থিত বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে সম্প্রতি হামলার ঘটনা ঘটে। হামলার সময় উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা সেখানে ভাঙচুর চালায় এবং বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা নামিয়ে ছিঁড়ে ফেলার পাশাপাশি অবমাননা করে, যা ঢাকা-দিল্লির মধ্যে বড় ধরনের কূটনৈতিক উত্তেজনার সৃষ্টি করে।

তবে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, হিন্দুদের বিরুদ্ধে সহিংসতার দাবিগুলো অতিরঞ্জিত করে সামনে আনা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

আরও পড়ুন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

বিশেষ প্রতিবেদন