০৮/১১/২০২৫, ৯:৪২ পূর্বাহ্ণ
26 C
Dhaka
০৮/১১/২০২৫, ৯:৪২ পূর্বাহ্ণ
বিজ্ঞাপন

নওগাঁয় জমজমাট কোরবানির পশুর হাট, দাম নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া

ঈদুল আজহার বাকি আর মাত্র কয়েক দিন। এরইমধ্যে নওগাঁয় জমজমাট হয়ে উঠেছে কোরবানির পশুর হাট। ক্রেতা-বিক্রেতাদের উপস্থিতে সরগরম বিভিন্ন পশুর হাটগুলো। ক্রেতাদের পাশাপাশি ভিড় জমাচ্ছেন দূর-দূরান্তের ব্যবসায়ীরা। এবারো বড় গরুর তুলনায় ছোট ও মাঝারি গরুর চাহিদাই বেশি। তবে দাম নিয়ে রয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।

বিজ্ঞাপন

বিক্রেতারা জানান, হাটে ছোট ও মাঝারি আকারের গরুর চাহিদা বেশি। বড় গরুর কেউ কিনতে চাইছেন না। বড় আকারের গরুর ক্রেতা কম থাকায় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন বিক্রেতেরা। এছাড়াও হাটগুলোতে গরুর সরবরাহ বেশি হওযায় খরচের তুলনায় তেমন দাম পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করেন তারা। এতে শঙ্কায় খামিরা ও প্রান্তিক চাষিরা।

ক্রেতারা জানান, ঈদের এখনো বেশ কয়েকদিন বাকি আছে। এখন গরু কিনলে বাড়িতে রেখে লালন-পালন কষ্টসাধ্য। ঈদের দু-একদিন আগে গরু কিনলে বাড়িতে রাখা সহজ হবে। তাই শেষ দিকে গরু কেনার অপেক্ষায় আছেন তারা। তবে গতবারের চেয়ে গরুর দাম বেশি বলে দাবি তাদের।

জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, কোরবানির ঈদ উপলক্ষে এ বছর জেলায় ছোট-বড় মিলিয়ে ৩৮ হাজার ৫৭৩টি খামারে দেশীয়, অস্ট্রেলিয়ান, ফ্রিজিয়ানসহ বিভিন্ন জাতের প্রায় ৭ লাখ ৮৮ হাজার ৩২০টি গবাদিপশু লালনপালন করা হয়েছে। জেলায় চাহিদা রয়েছে প্রায় ৩ লাখ ৮৬ হাজার ৪৩৭টি পশু। এসব গরু বেচাকেনার জন্য জেলায় স্থায়ী ও অস্থায়ী প্রায় ৩৬টি হাট বসানো হয়েছে। এছাড়াও উদ্বৃত্ত পশু ব্যবসায়ীরা দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করবেন।

জেলার সবচেয়ে বড় পশুর হাট মান্দা উপজেলার চৌবাড়িয়া, সতিহাট, মহাদেবপুর উপজেলার মাতাজি, রানীনগর উপজেলার আবাদপুকুর ঘুরে দেখা যায়, দুপুর ১২টার পর থেকেই এসব হাটে বিভিন্ন জাতের ও আকারের গরু নিয়ে আসতে শুরু করেন খামিরা, প্রান্তিক চাষি ও ব্যাপারীরা। দুপুর ২টার পর থেকে কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায় হাটগুলো। এরপর ক্রেতা-বিক্রেতাদের উপস্থিতে সরগরম হয়ে উঠে। হাটগুলোতে ক্রেতারা আসছে, দেখছেন, ঘুরছেন দরদাম করে কিনছেন পছন্দের পশু। তবে ভারতীয় গরু না থাকায় দেশীয় গরুর চাহিদায় বেশি। ৯০ হাজার থেকে ১ লাখ ৪০ হাজার টাকার ছোট ও মাঝারি আকারের গরুর চাহিদা বেশি। এসব হাটে ক্রেতাদের পাশাপাশি ভিড় জমাচ্ছেন ঢাকা ও ঢাকার বাইরের বড় ব্যবসায়ীরা। তবে দাম নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যায় ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যে।

জেলার সবচেয়ে বড় পশুর হাট চৌবাড়িয়া। এই হাটে মান্দা উপজেলার মৈনম থেকে আসা খামারি আলমগীর বলেন, হাটে প্রচুর দেশি গরু উঠেছে। গো-খাদ্য, খড়ের দাম বেড়ে যাওয়ায় গরু লালন-পালনে এবছর গরু প্রতি ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা বেশি খরচ হয়েছে। কিন্তু সে তুলনায় দাম বলছে না। বড় গরুর দাম আরও কম দিতে চাচ্ছেন ক্রেতারা। তার ওপর ফেরত নিয়ে গেলে আবার খরচ আছে। তাই কিছুটা লস হলেও বিক্রি করে চলে যাব।

আরেক গরু বিক্রেতা মোসলেম আলী বলেন, কোরবানির হাটে বিক্রি করবো বলে ৪টি গরু বাড়িতে লালন-পালন করে বিক্রি করতে নিয়ে এসেছি। এরমধ্যে মাঝারি সাইজ দুটি ও বড় সাইজ দুটি। কিন্তু দামে হচ্ছে না, এই জন্য বিক্রি করতে পারছি না। বাজারে ৯০ হাজার থেকে ১ লাখ ৪০ হাজার টাকার গরুর চাহিদা বেশি। বড় গরু কেউ ওইভাবে দামই বলছে না। বড় গরু পালনে খরচ বেড়েছ। খরচ বাড়লেও গরুর দাম আগের মতোই।

আনারুল ইসলাম বলেন, ২টি গরু নিয়ে আসছিলাম। একটার দাম ১ লাখ ৪০ হাজার চেয়েছিলাম। কিন্তু ১ লাখ ২০ হাজারের বেশি দাম বলছে না। এখন বাড়িতে ফেরত নিয়ে গেলে আবার খরচ বাড়বে। তাই বাধ্য হয়ে বিক্রি করে দিলাম। আরেকটা গরু ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা দাম হেঁকেছি, ক্রেতারা বিভিন্ন দাম বলছেন। দামে মিললে দিয়ে দেব। তবে গো-খাদ্যের বেশি থাকায় আগের গরু বিক্রি করে ততোটা লাভ হয়নি বলে দাবি করেন তিনি।

তবে বিক্রেতার দাবির সঙ্গে একমত নন ক্রেতারা। এই হাটে গরু কিনতে আসা ইসমাইল হোসেন বলেন, হাটে প্রচুর পরিমাণে দেশি গরু উঠছে। গরুগুলো দেখতেও খুব সুন্দর। তবে দাম একটু বেশি মনে হচ্ছে। গত বছরের চেয়ে ৮ থেকে ১২ হাজার টাকা বেশি চাওয়া হচ্ছে।

আকতার হোসেন নামে আরেক ক্রেতা বলেন, আমরা যারা কোরবানি দেই, আমাদের অনেকের গরু রাখার জায়গা থাকে না। তাই ঈদের দু-তিন দিন আগেই কোরবানির পশু কিনে থাকি। আজ শুধু ঘুরে ও দরদাম করছি।

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. মাহফুজার রহমান বলেন, সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক উপায়ে পশু লালন-পালনে আগে থেকেই জেলার খামারিদের মাঝে প্রচারণা চালানো হয়েছে। চাহিদার চেয়ে অতিরিক্ত পশু থাকায় কোনো সঙ্কট হবে না। হাটগুলোর বিভিন্ন স্থানে মেডিক্যাল টিম বসানো হয়েছে। এছাড়াও নওগাঁ সীমান্তবর্তী জেলা হওযায় যাতে ভারতীয় গরু না আসে এজন্য প্রশাসনের সাথে যোগায়োগ রাখা হচ্ছে। আশা করি এবছর খামারিরা লাভের মুখ দেখবেন।

এনএ/

দেখুন: নওগাঁয় পিঠা উৎসব ও লোক সংস্কৃতি অনুষ্ঠান

বিজ্ঞাপন

আরও পড়ুন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

বিশেষ প্রতিবেদন