আলোচিত ও সমালোচিত সাবেক সংসদ সদস্য নিক্সন চৌধুরী ও তার স্ত্রীর ব্যাংক হিসাবে কাড়িকাড়ি টাকা লেনদেন হয়েছে। এই দম্পতির ব্যাংক হিসাবে লেনদেনের পরিমাণ ৩ হাজার ১৬২ কোটি টাকা। এর মধ্যে ১৪শ কোটি টাকা লেনদেন হয় নিক্সন চৌধুরীর হিসাবে, আর এক হাজার ৭শ কোটি টাকা লেনদেন হয় তার স্ত্রী তারিনের ব্যাংক হিসাবে।
দুর্নীতি দমন কমিশন বলছে, কেবল যে ব্যাংকে তারা বিপুল অর্থ লেনদেন করেছেন তা নয়, তাদের যা সম্পদ রয়েছে তারও বড় অংকের কোন স্বীকৃত ও আইনত উৎস নেই। দুর্নীতি দমন কমিশনের তদন্তে এমন তথ্য পাওয়ার কথা জানিয়েছে সংস্থাটি।
নিক্সন ও তার স্ত্রীর ব্যাংক হিসাবে ৩ হাজার ১৬২ কোটি টাকা লেনদেন:
নিক্সন চৌধুরী শেখ মুজিবুর রহমানের বড় বোনের নাতি। সে হিসেবে তিনি ক্ষমতাচ্যুৎ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ফুপাতো ভাইয়ের ছেলে। আর তার স্ত্রী তারিন সাবেক মন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর মেয়ে। নিক্সন চৌধুরী ফরিদপুর থেকে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতেন। তার ভাই লিটন চৌধুরীও সংসদ সদস্য ছিলেন, গত সংসদের চিফ হুইপ ছিলেন তিনি।
দুদকের নথিতে দেখা যায়, নিক্সনের ব্যাংক হিসাব মোট ৫৫টি। এসব হিসাবেই লেনদেন হয় এক হাজার ৪০২ কোটি টাকার ওপরে। আর তার মোট অর্জিত সম্পদ পাওয়া গেয়েছে ১৮ কোটি টাকার। যার মধ্যে গ্রহণযোগ্য আয় আছে ৭ কোটি টাকার সম্পদের। বাকিটা কোন প্রক্রিয়ায় করেছেন তার কোন তথ্য পায়নি দুদক।
তারিন হোসনে, আওয়ামী লীগের জোট নেতা আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর মেয়ে। অবশ্য, তারিক নিক্সন চৌধুরীর দ্বিতীয় স্ত্রী। তার আগের স্ত্রী মুনতারিনের রহস্যজনক মৃত্যু হয়।
তারিনের ব্যাংক হিসাব ছিলো আরও ফুলানো ফাপানো। তার হিসাবে লেনদেন হয় নিক্সনের থেকে বেশি অর্থ। সম্পদের পরিমাণও বেশি পেয়েছে দুদক।
দুর্নীতি দমন কমিশন বলছে, তারিনের ব্যাংক হিসাবে লেনদেন হয় এক হাজার ৭শ কোটি টাকার বেশি। যদিও তার ব্যাংক হিসাব পাওয়া গেছে ১৭টি। এসব হিসাবে জমা পড়েছে প্রায় পৌনে নয় কোটি টাকা। সম্পদ পাওয়া গেছে ২৪ কোটি টাকার। অসংগতিপূর্ণ সম্পদ মিলেছে প্রায় ৮ কোটি টাকার।
শেখ হাসিনা পরিবারের কাছের এই দম্পতি এখন কোথায় আছেন সেটা জানা যায়নি। তবে তাদের বিদেশ যাত্রায় বারণ রয়েছে। দুদক তাদের বিপুল জমি জমার খোজও পেয়েছে। বিদেশেও তাদের বাড়ি থাকার তথ্য পেয়েছে দুদক। অস্ট্রেলিয়া, কানাডা এবং সিঙ্গাপুরে নিক্সন আর তার স্ত্রী তারিনের তিনটি বাড়ির সন্ধান পাওয়া গেছে।
অনিয়ম দুর্নীতির কারণে অনেকে তাকে দুর্নীতির মহারাজ হিসেবে চিহিৃত করে। শেখ পরিবারের এই সদস্য যতটা না রাজনীতিতে আলোচনায় ছিলেন, তার থেকে বেশি ছিলেন নানা বিতর্কিত ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে আলোচিত। আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে শুরুতে জড়িত না থাকলেও, বিশেষ আনুকূল্য নিয়েছে দীর্ঘ দিন ধরে। যদিও সবশেষ তিনি যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ছিলেন।
টিএ/