নির্বাচনী ট্রেন যাত্রা শুরু করলেও নির্বাচনের এখনো দিনক্ষণ ঠিক হয়নি। রাষ্ট্র সংস্কারে ব্যস্ত ড. ইউনূস সরকার কতদিন থাকবেন? সেটিও পরিস্কার নয়। দুদিন আগে কিংবা পরে নির্বাচন হবেই এমনটা বলাই যায়। তবে আসন্ন নির্বাচনকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছে একাধিকবার রাষ্ট্র পরিচালনাকারী দল বিএনপি।
দীর্ঘ ১৬ বছর ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপি ফ্যাসিষ্ট সরকারের নানা অত্যাচার জুলুমের শিকার। সরকার পতনের আন্দোলন চালিয়ে গেলেও মাঠে থাকতে দেয়া হয়নি তাদের। নেতা-কর্মীরা হাজার হাজার মামলা মাথায় নিয়ে ফেরারি জীবন কাটিয়েছেন। জেল জুলুম হুলিয়ায় হয়েছেন নির্যাতিত। তবে শেখ হাসিনার পতন ও রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর বিএনপির সামনে এসেছে নতুন চ্যালেঞ্জ।
যদিও এ বিষয়ে নেতাকর্মীদের সতর্ক করে একাধিক বক্তব্য দিয়েছেন দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনে গুরুত্ব দিচ্ছে বিএনপি। সেজন্য রাজনৈতিক মিত্রদের ধরে রাখা, কূটনৈতিক সম্পর্কোন্নয়ন ও সংগঠন শক্তিশালী করার পাশাপাশি নেতাকর্মীদের আরও জনবান্ধব হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন তারেক রহমান।
এসব বিষয় সামনে রেখে নানামুখী তৎপরতা চালাচ্ছে বিএনপি। কেন্দ্র থেকে তৃণমূলে সংগঠনকে গুছিয়ে আনার বিষয়টিও চলমান। এদিকে আসন্ন সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে বিএনপির নীতিনির্ধারকরা যে ধরনের বক্তব্য দিচ্ছেন তাতে প্রশ্ন উঠেছে, ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন কি আসলেই কঠিন?
বিএনপির শীর্ষ নেতা এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, গত প্রায় দেড় দশকে বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যবস্থা একেবারেই ধ্বংস হয়ে গেছে। প্রশাসনসহ সর্বস্তরে দলীয়করণ ও আওয়ামী লীগ টানা তিনবার একতরফা নির্বাচন করায় নির্বাচন ব্যবস্থার প্রতি মানুষের অনাস্থাও তৈরি হয়েছে। তা ছাড়া ১/১১ সময়ের অভিজ্ঞতাও বিএনপির জন্য সুখকর নয়। অন্যদিকে বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের কারণে তাদের মনোভাব বুঝেশুনে পদক্ষেপ নিতে হবে। সে কারণেই আগামী নির্বাচনকে কঠিন হিসেবে দেখছে বিএনপি।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, একটা লম্বা সময় ধরে বিএনপি ক্ষমতায় নেই। প্রশাসনিক পুনর্গঠনে বিএনপির অংশগ্রহণ সীমিত। তাদের হাতে সময় একদম সামান্য। বিএনপিকে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী হতে হবে। নির্বাচন কমিশনকে কতটুকু স্বাধীন করা যায়, তার ওপর নির্ভর করছে বিএনপির ক্ষমতায় আসা।
এছাড়া বিএনপি যেহেতু ক্ষমতার জন্য সম্ভাবনায় ছিল, সেজন্য তাদের ওপরই নির্যাতন নিপীড়ন বেশি হয়েছে। তারাই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। যারাই ক্ষতিগ্রস্ত, তারাই জনপ্রিয়। জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে ক্ষমতায় আসার জন্য রাষ্ট্র এবং সরকারের নিরপেক্ষতা কাজে লাগিয়ে জনগণকে মোটিভেট করা অবশ্যই বিএনপির জন্য কঠিন। আওয়ামী ফ্যাসিবাদ ও কর্তৃত্ববাদীরা ক্ষমতায় থাকা অর্থাৎ প্রশাসনিক পূর্ণ পরিবর্তন ছাড়া বিএনপির জন্য নির্বাচন চ্যালেঞ্জিং।
এদিকে আগামী সংসদ নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিতে সারা দেশে সক্রিয় হয়ে উঠেছেন বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীরা। যৌক্তিক সময়ে নির্বাচনের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে তাগিদ দেওয়ার পাশাপাশি, তারা নিজ নিজ এলাকায় জনসংযোগ ও সাংগঠনিক কার্যক্রম জোরদার করছেন। দলীয় নেতা ও সদস্যরা সামাজিক এবং ধর্মীয় অনুষ্ঠানগুলোতে অংশগ্রহণের পাশাপাশি, স্থানীয় ইউনিটগুলোর পুনর্গঠনও করছেন। তাদের মূল উদ্দেশ্য হলো দলের অবস্থান এবং নিজের অবস্থানকে শক্তিশালী করা।