বিগত জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় আহতদের চিকিৎসা নিয়ে এক চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাজধানীর পঙ্গু হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসক ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে ‘নো ট্রিটমেন্ট, নো রিলিজ’ নির্দেশ দেন। এ তথ্য সম্প্রতি প্রকাশ করেছেন ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মো. তাজুল ইসলাম।
আজ রোববার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর সাংবাদিকদের জানান, রাজধানীর জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান (নিটোর) বা পঙ্গু হাসপাতালে পরিদর্শনে গিয়ে সেখানে চিকিৎসাধীন আহত রোগী ও তাদের স্বজনরা তাঁদের কাছে একাধিকবার শেখ হাসিনার দেওয়া এই নির্দেশনার কথা জানিয়েছেন। তার মতে, শেখ হাসিনা হাসপাতাল পরিদর্শন করে আহতদের চিকিৎসা না দিতে এবং কাউকে হাসপাতাল থেকে বের হতে না দেওয়ার কঠোর নির্দেশ দেন।
তিনি আরও বলেন, এই নির্দেশনা শুধু রোগী নয়, হাসপাতালের চিকিৎসক এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাছ থেকেও শোনা গেছে। তাদের কাছে এসব তথ্য প্রমাণ হিসেবে রয়েছে এবং আদালতকে জানানো হয়েছে।
এক প্রশ্নের উত্তরে তাজুল ইসলাম জানান, ঐ সময় শহীদ হওয়া আন্দোলনকারীদের মৃতদেহও প্রশাসনের নির্দেশে সুরতহাল করতে দেওয়া হয়নি, কাউকে ডেথ সার্টিফিকেটও প্রদান করা হয়নি। এমনকি গুলিবিদ্ধ অবস্থায় হাসপাতালে গিয়েও যারা মারা গিয়েছিলেন, তাদের মৃতদেহের ডেথ সার্টিফিকেটে “গুলিতে মারা গেছে” এ ধরনের কথা লেখার অনুমতি দেওয়া হয়নি। পরিবর্তে “শ্বাসকষ্ট” বা “জ্বরে মারা গেছে” এমন মিথ্যা তথ্য লেখা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আদালত এই প্রশ্ন করেছেন যে, শহীদদের সুরতহাল প্রতিবেদন বা পোস্টমর্টেম রিপোর্ট নেই কেন? প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম জানিয়েছেন, ঐ সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের মাত্রা এতটাই ভয়াবহ ছিল যে, শহীদদের লাশ দ্রুত দাফন করতে বাধ্য করা হয়েছিল এবং কোন পোস্টমর্টেম রিপোর্ট প্রদান করা হয়নি।
শেখ হাসিনার এই নির্দেশনার প্রমাণ ভবিষ্যতে গণহত্যা এবং মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় ব্যবহার করা হবে বলেও জানান চিফ প্রসিকিউটর। তিনি বলেন, এসব প্রমাণ যাচাই-বাছাই ও ফরেনসিক পরীক্ষার পর আদালতের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
প্রসঙ্গত, ২০১৩ সালে অনুষ্ঠিত জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের সময় দেশের বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক সহিংসতা ঘটে। এই ঘটনায় আন্দোলনকারীদের ওপর অত্যাচার, হামলা এবং হত্যাকাণ্ডের প্রমাণ পাওয়া যায়। নিহতদের পরিবার ও স্বজনদের উপরও ব্যাপক নিপীড়ন করা হয়, যার প্রমাণ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পেশ করছে।
এই ঘটনার পর, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের নির্যাতনের বিরুদ্ধে মানবাধিকার সংস্থাগুলি সোচ্চার হয়ে উঠেছে। এতে করে গণতন্ত্র এবং মানবাধিকারের প্রতি রাষ্ট্রের দায়বদ্ধতা এবং জনগণের অধিকার নিশ্চিত করার প্রতি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
এছাড়াও, ট্রাইব্যুনাল এসব মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার করার জন্য এবং দোষীদের উপযুক্ত শাস্তি দেওয়ার লক্ষ্যে কাজ করছে। এর ফলে বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থা এবং মানবাধিকার বিষয়ে আন্তর্জাতিক স্তরে নতুন আলোচনার সূচনা হবে বলে আশাবাদী সংশ্লিষ্ট মহল।
পড়ুন: আহতদের দেখতে পঙ্গু হাসপাতালে গেলেন প্রধানমন্ত্রী
দেখুন : সাংবাদিককে হ/ত্যার হুমকি পঙ্গু হাসপাতালের ওয়ার্ড মাস্টারের
ইম/