১৪/০৬/২০২৫, ১৭:১৯ অপরাহ্ণ
34.6 C
Dhaka
১৪/০৬/২০২৫, ১৭:১৯ অপরাহ্ণ

পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালীর টিএনটি এক ‘ভূতুড়ে ভবন’

একসময়ের ব্যস্ততা, অপেক্ষা আর ভালোবাসার কেন্দ্র ছিল এটি। টিএনটি ভবনটি পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালীর মানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থার একমাত্র প্রাণকেন্দ্র ছিল। মানুষ লাইনে দাঁড়িয়ে প্রিয়জনের কণ্ঠস্বর শুনতে ভিড় করতো ছোট্ট এই অফিসটিতে। ভবনটির চারপাশে তখন ছিল কোলাহল, ছিল আবেগের ভিড়। আজ সেটি শুধুই স্মৃতি। জরাজীর্ণ ভবনের দরজা -জানালা ভাঙা, ছাদ থেকে পড়ছে পলেস্তার খণ্ড, ভিতরে জমে আছে ধুলা আর নীরবতা। কেউ কেউ বলেন-এ যেন এক ‘ভূতুড়ে ভবন’।

আজ শনিবার (১৭ মে) বিশ্ব টেলিযোগাযোগ দিবস। যেখানে বিশ্বের নানা প্রান্তে উদযাপন হচ্ছে উন্নত সংযোগের গল্প, সেখানে রাঙ্গাবালীর এই ভবনটি যেন দাঁড়িয়ে আছে অবহেলা আর বিস্মৃতির প্রতীক হয়ে।

২০-২৫ বছর আগেও সাগরপাড়ের দ্বীপ রাঙ্গাবালী অঞ্চলে মোবাইল ফোনের ব্যবহার তেমন ছিলো না বললেই চলে। টিনএনটি ছাড়া বাণিজ্যিকভাবে এক-দুইটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান অনিয়মিত সীমিত পরিসরে টেলিযোগাযোগ সেবা দিত। তবে সেই ফোনালাপ ছিল ব্যয়-বহুল৷ তখনকার দিনে যোগাযোগের একমাত্র আশ্রয় ছিল এই টিএনটি অফিস। ফোন করতে আসা মানুষজনের দীর্ঘ লাইন ছিল এখানে নিত্যদিনের চিত্র।

উপজেলার বাহেরচর বাজারের প্রবীণ ব্যবসায়ী আলমগীর হোসেন বলেন, ‘দূর-দূরান্তের আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে টিএনটি অফিসের মাধ্যমে যোগাযোগ হতো৷ একটা টেলিফোনের অপেক্ষায় থাকতাম। কখনো ভালো খবর, কখনো কষ্টের কথা—এই অফিসই ছিল আমাদের ভরসা। সেই ভরসা এখন শুধুই অতীত।’ ওই বাজারের আরেক প্রবীণ আব্দুর রব বলেন, ‘টিএনটি অফিসের টেলিফোনের অপেক্ষায় থাকতাম আমরা৷ ঢাকা কিংবা বিদেশ থেকে আত্মীয় স্বজনরা ফোন দিতো। টিএনটি অফিস থেকে খবর দেওয়া হতো যে আমার ফোন এসেছে। পরিবারের লোকজন নিয়ে ফোনের খবর ছুটে যেতাম। সে কি আনন্দ, যা বলে বোঝানো যাবে না।’


সরেজমিনে দেখা গেছে, ভবনের ভেতরটা এখন আর কেউ ব্যবহার করে না। ভাঙা দরজা-জানালা-সবই পড়ে আছে নীরবে। দরজার ফাঁক দিয়ে দেখা যায়, জানালার ধারে জমে আছে মাকড়সার জাল। অনেকেই বলেন, সন্ধ্যার পর কেউ একা এই ভবনের পাশে দিয়ে হেঁটে যেতে চায় না। চারপাশে তৈরি হয়েছে গা ছমছমে পরিবেশ।

স্থানীয় যুবক এরশাদ হোসেন বলেন, ‘এটা এখন ভূতুড়ে জায়গা। ছোটবেলায় দেখতাম মানুষ ফোন করতে আসত। এখন ভাবতেই অবাক লাগে এটা এক সময়ের যোগাযোগ কেন্দ্র ছিল।’

স্থানীয়রা জানান, সংশ্লিষ্টদের কোনো কার্যক্রম নেই ভবনটি নিয়ে। কোনো পুনঃব্যবহার বা সংরক্ষণের উদ্যোগ নেই। রাঙ্গাবালী প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক এম সোহেল বলেন, ভবনটি সংস্কার করে কোনো সামাজিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলা যেত—যেমন পাঠাগার, কমিউনিটি সেন্টার বা যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। কিন্তু বছরের পর বছর কেবল অবহেলাতেই পড়ে আছে সেই টিএনটি ভবন। এখন যা ব্যবহারের অনুপযোগী।

এই উপজেলার মানুষের জীবনমান উন্নয়ন নিয়ে কাজ করা একটি বেসরকারি সংস্থার কর্মকর্তা শাহিন আহমেদ বলেন, ‘আমরা উচ্চগতির ইন্টারনেট, ভিডিও কল বা ফাইভ-জির যুগে প্রবেশ করছি৷ মানুষ এখন হোয়াটসঅ্যাপ, ম্যাসেঞ্জারসহ বিভিন্ন মাধ্যমে অডিও-ভিডিও কলে কথা বলছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘কিন্তু আমাদের যোগাযোগ ব্যবস্থা যেখান থেকে শুরু করেছিলাম, সেই শেকড়কে কেন ভুলে যাচ্ছি? আধুনিকতায় কেন এসব হারিয়ে যাবে? আধুনিকতার ছোয়া টিএনটিতে পড়ুক।’

সংশ্লিষ্টদের তথ্যানুযায়ী, বাংলাদেশে টিএনটি (টিএনটি) ছিল সরকারের ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অধীন একটি প্রতিষ্ঠান। এটি মূলত পরিচালিত হতো বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানি লিমিটেড (বিটিসিএল)-এর মাধ্যমে। স্থানীয়দের তথ্যমতে, রাঙ্গাবালীতে স্থাপিত টিএনটি অফিসটি ১৯৮০ সালের দিকে নির্মিত হয়েছিল।

পড়ুন : ভরা মৌসুমেও ইলিশের সংকট, হতাশ জেলেরা

বিজ্ঞাপন

আরও পড়ুন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

বিশেষ প্রতিবেদন