অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, পহেলা বৈশাখ সম্প্রীতির অন্যতম প্রতীক। তাই সার্বজনীন এই উৎশবে আমরা সবাই অংশ নেব। এ সময় সবাইকে বাংলা নববর্ষের অগ্রিম শুভেচ্ছাও জানান তিনি।
রোববার (১৩ এপ্রিল) সকালে রাজধানীর মেরুল বাড্ডায় আন্তর্জাতিক বৌদ্ধ বিহারে সম্প্রীতি ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন শেষে এ কথা বলেন তিনি।
ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, অতি প্রাচীনকাল থেকেই এই অঞ্চলের বৌদ্ধ বিহারগুলো গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিল।এগুলো আমাদের ঐতিহ্য ও সভ্যতার নির্দশন। পৃথিবীর দূর-দূরান্ত থেকে ভিক্ষু ও ছাত্ররা বিহারগুলোতে আসতেন। মহামানব বুদ্ধের শান্তি ও সম্প্রীতির বাণী বিশ্বে ছড়িয়ে দিতেন। শুধু ধর্মীয় আচার ও শিক্ষা নয়, সমাজে জনকল্যাণকর কর্মসূচির কেন্দ্রেও এই দেশের বৌদ্ধ বিহারগুলো ছিল।
তিনি আরও বলেন, নানা মত-ধর্ম-রীতিনীতির মধ্যেও আমরা সবাই এক পরিবারের সদস্য। এ দেশে মানুষের বিচিত্র ভাষা, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য রয়েছে।
মহামানব গৌতম বুদ্ধ বিশ্বমানবতার কল্যাণে সম্প্রীতি ও সাম্যের বাণী প্রচার করেছিলেন জানিয়ে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, বৌদ্ধ ধর্ম জীবজগতের সব প্রাণীর মঙ্গল কামনা করে। মহামানব বুদ্ধ বলেছেন, ‘শান্তি, সুখ থেকে আমরা কাউকে বঞ্চিত করতে পারি না; এমনকি ক্ষুদ্র জীবও।’ এদেশের বৌদ্ধ পণ্ডিত অতীশ দীপঙ্কর বিশ্ববরেণ্য একজন মহাপণ্ডিত। মহামানব বুদ্ধের বাণী তিনি বহন করে নিয়েছিলেন সেই চীনের তিব্বতে। চীনে এখনো তাকে সর্বোচ্চ মর্যাদায় শ্রদ্ধা জানানো হয়। বৌদ্ধ ধর্মের নিদর্শন, স্থাপনা, ঐতিহ্য ও পণ্ডিতগণ মানব সভ্যতার ইতিহাসে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
‘আমি বরাবরই বলে এসেছি, নানা মত-ধর্ম-রীতিনীতির মধ্যেও আমরা সবাই এক পরিবারের সদস্য। এদেশের হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, পাহাড় ও সমতলের বিভিন্ন সম্প্রদায় ও জনগোষ্ঠী—সবমিলিয়ে এদেশের মানুষের বিচিত্র ভাষা-সংস্কৃতি-ঐতিহ্য। আগামীকাল পয়লা বৈশাখ, আমাদের এই সম্প্রীতির অন্যতম প্রতীক। প্রত্যেকে নিজ নিজ উপায়ে, নিজেদের রীতি অনুযায়ী আগামীকাল উদযাপন করবেন। সার্বজনীন এ উৎসবে অংশ নেবেন।’
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, গৌতম বুদ্ধের অহিংসা ও সাম্যের বাণীর প্রতি শ্রদ্ধা রেখে বাংলাদেশের বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের ধর্মীয়, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণ এবং কারিগরি শিক্ষাসহ বিভিন্ন জনকল্যাণকর কর্মসূচি পালন করে আসছে এ বৌদ্ধবিহার। আন্তর্জাতিক বৌদ্ধবিহারের ‘সম্প্রীতি ভবন’ বাংলাদেশের সম্প্রীতি ও মানবতার ঐতিহ্যকে ধারণ করে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে গৌরবময় ভূমিকা রাখবে এই আমার প্রত্যাশা। আমাদের সম্প্রীতি ও মানবিক মূল্যবোধের জয় হোক। বিশ্বে শান্তি বিরাজ করুক—এ কামনা করি।
পড়ুন : ডিসেম্বরে নির্বাচন ধরে সংস্কার কার্যক্রম দ্রুত এগিয়ে নেয়ার তাগিদ প্রধান উপদেষ্টার