বাংলাদেশের পহেলা বৈশাখে মঙ্গল শোভাযাত্রার নাম পরিবর্তন করে ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা’ রাখা হয়েছে। এ সিদ্ধান্তের ফলে শোভাযাত্রায় দেশের জাতীয় ফুল শাপলা, ধান ও গমের শীষ এবং পাটপাতা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যেখানে পাটপাতার ওপর ‘পুলিশ’ শব্দটি উজ্জ্বলভাবে লেখা রয়েছে। এই পরিবর্তনের ফলে শোভাযাত্রার নাম ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা’তে রূপান্তরিত হয়েছে।
শুক্রবার (১১ এপ্রিল) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ওসমান জামাল মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানানো হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমদ খান, প্রো-উপাচার্য অধ্যাপক ড. সায়মা হক বিদিশা, প্রো-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মামুন আহমেদ, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক এম. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. আজহারুল ইসলাম শেখ এবং অন্যান্য কর্মকর্তারা। নতুন লোগোতে জাতীয় উপাদানগুলোর উপস্থিতি বাংলাদেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য এবং আত্মপরিচয়ের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। পরিবর্তিত এই লোগো আধুনিক ও গঠনমূলক ভাবনার প্রতিফলন হিসেবে দেখা হচ্ছে, যা পুলিশ বাহিনীর পরিচয়কে আরও সমৃদ্ধ করবে।

এদিকে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ পহেলা বৈশাখে বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রার আয়োজন করে থাকে।
এটি দেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ এবং গুরুত্ববহ বলে বিবেচিত হয়। প্রতিবছরের মতো এ বছরও চারুকলা অনুষদ পয়লা বৈশাখ ও বাংলা নববর্ষ-১৪৩২ উদযাপনের উদ্যোগ নিয়েছে। এ উপলক্ষে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা আয়োজনের কাজ চলছে, যা অন্যান্য বছরের চেয়ে এবার সর্ববৃহৎ, বর্ণাঢ্য ও জাঁকজমকপূর্ণ হবে।
পহেলা বৈশাখের সকালে বরাবরই রমনার বটমূলে ছায়ানটের বর্ষবরণ শেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের সামনে থেকে জাতীয় সঙ্গীতের মধ্য দিয়ে শুরু হয় মঙ্গল শোভাযাত্রা। নববর্ষ উদযাপনে তার আগে থেকেই শাহবাগ এলাকা রূপ নেয় জনারণ্যে।
নানা সাজে বিভিন্ন বয়সী মানুষে অংশ নেন শোভাযাত্রায়। ঢাকের তালে তালে শাহবাগ মোড় হয়ে শিশুপার্কের সামনে দিয়ে ঘুরে ফের শাহবাগ হয়ে টিএসসিতে গিয়ে শেষ হয় এটি।
এবারের শোভাযাত্রার প্রতিপাদ্য ঠিক করা হয়েছে ‘নববর্ষের ঐকতান, ফ্যাসিবাদের অবসান’।
এই প্রতিপাদ্য ধারণ করে শোভাযাত্রায় তুলে ধরা হবে আবহমান বাংলার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য। সেই সঙ্গে গতবছর জুলাই-অগাস্টের অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে যে ‘ফ্যাসিবাদকে’ বিদায় জানানো হয়েছে, সেই ফ্যাসিবাদের উত্থান যেন এই দেশে আর না হয়, সে প্রত্যাশাও ছড়িয়ে দেওয়া হবে বলে আয়োজন সংশ্লিষ্টদের ভাষ্য।

শোভাযাত্রায় বৈচিত্র্য ও বিভিন্ন জাতিসত্তার অংশগ্রহণ থাকবে। এবারের শোভাযাত্রার প্রতিপাদ্য ঠিক করা হয়েছে ‘নববর্ষের ঐকতান, ফ্যাসিবাদের অবসান’। এই প্রতিপাদ্য ধারণ করে শোভাযাত্রায় তুলে ধরা হবে আবহমান বাংলার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য। শোভাযাত্রায় বিভিন্ন মোটিফের মধ্যে থাকবে স্বৈরাচারের প্রতিকৃতি, বড় আকৃতির ইলিশ মাছ, সোনারগাঁওয়ের ঐতিহ্যবাহী লোকশিল্পীদের কাঠের বাঘ এবং শান্তির পায়রা। শোভাযাত্রায় অংশ নিতে ভোর থেকেই সংস্কৃতিপ্রেমীরা চারুকলায় জড়ো হচ্ছেন। তাদের পরনে সাদা পাঞ্জাবি ও পায়জামা, মেয়েদের সাদা শাড়ি ও লাল ব্লাউজ দেখা যাচ্ছে। শোভাযাত্রাকে কেন্দ্র করে শাহবাগ এলাকায় নেওয়া হয়েছে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা। পুলিশ, র্যাবসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা তৎপর রয়েছেন।
উল্লেখ্য, ১৯৮৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের উদ্যোগে প্রথমবারের মতো আনন্দ শোভাযাত্রা বের করা হয়। পরে ১৯৯৬ সালে এর নাম পরিবর্তন করে ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ রাখা হয়। ২০১৬ সালে ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যের স্বীকৃতি পায় এই শোভাযাত্রা। এটি বাঙালির হাজার বছরের অসাম্প্রদায়িক ঐতিহ্যের মেলবন্ধনের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হয়।
নতুন লোগো ও শোভাযাত্রার নাম পরিবর্তনের মাধ্যমে বাংলাদেশের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের প্রতিফলন ঘটানো হয়েছে, যা দেশের জনগণের মধ্যে গর্ব ও আনন্দের সৃষ্টি করবে।
পড়ুন: পহেলা বৈশাখের শোভাযাত্রায় থাকছে ‘ফিলিস্তিন’ নিয়ে গান
দেখুন: পহেলা বৈশাখে পান্তা-ইলিশ না খাওয়ার আহ্বান |
ইম/