পাকিস্তানের রাওয়ালপিন্ডিতে দুই ম্যাচ টেস্ট সিরিজের প্রথম ম্যাচে পাকিস্তানের বিপক্ষে ১০ উইকেটের ঐতিহাসিক জয় তুলে নিল বাংলাদেশ। মাঠে নামার আগে বাংলাদেশের পরিসংখ্যানের খাতাটা ছিল পুরোই ফাঁকা। ১৩ টেস্টে মুখোমুখি হয়ে মাত্র ১টি ড্র করেছিল বাংলাদেশ। আর বাকি ১২টিতেই হারের তিতো স্বাদ পেতে হয়েছিল টাইগারদের। অবশেষে পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট জয়ের আক্ষেপ ঘুচেছে লাল-সবুজের প্রতিনিধিদের।
২০০৩ সালে মুলতান টেস্টে জয়ের খুব কাছে গিয়েও হেরেছিল বাংলাদেশ। সেবার টাইগারদের হৃদয় ভেঙে পাকিস্তানকে রক্ষা করেছিলেন ইনজামাম উল হক। দুই দশকেরও বেশি সময় পর এবার রাওয়ালপিন্ডিতে টাইগারদের গর্জন! চতুর্থ দিনের শুরু থেকেই ড্রাইভিং সিটে নাজমুল হোসেন শান্তর দল। তবে মুলতানের সেই স্মৃতি তাড়া করেছে অনেকটা সময় ধরে। অন্তত মোহাম্মদ রিজওয়ান যতক্ষণ উইকেটে ছিলেন। শেষ পর্যন্ত খানিকটা প্রতিরোধ গড়লেও মুলতানের ইনজামাম হতে পারেননি এই উইকেটকিপার ব্যাটার। ফলে প্রথমবার পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট জয়ের স্বাদ পেল বাংলাদেশ।
রাওয়ালপিন্ডিতে টস হেরে শুরুতে ব্যাট করতে নেমে ৬ উইকেটে ৪৪৮ রান তুলে ইনিংস ঘোষণা করেছিল পাকিস্তান। প্রথম ইনিংসে সবকটি উইকেট হারিয়ে ৫৬৫ রান করে বাংলাদেশ, লিড পায় ১১৭ রানের। নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে ১৪৬ রানের বেশি করতে পারেনি স্বাগতিকরা। ৩০ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে কোনো উইকেট না হারিয়েই জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় বাংলাদেশ।
রোববার (২৫ আগস্ট) দিনের শুরুতে শরিফুলের আঘাতে সাজঘরে ফেরেন শান মাসুদ। (১৪)। এরপরই বাবর আজমের ক্যাচ মিস করেন লিটন দাস। তবে পিচে থিতু হতে পারেননি এই পাক ব্যাটার। ৫০ বলে ২২ রান করে নাহিদ রানার বলে বোল্ড আউট হন তিনি।
পরের ওভারের দুই ওভারে সাউদ শাকিল (০) ও আব্দুল্লাহ শাফিককে (৩৭) সাজঘরে ফিরিয়ে জোড়া শিকার করেন সাকিব আল হাসান। অন্যদিকে মিরাজের স্পিন ঘূর্ণিতে শিকার হন আঘা সালমান। এতে দলীয় ১০৫ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে পাকিস্তান। এতে জয়ের স্বপ্ন দেখতে শুরু করে বাংলাদেশ।
মধ্যাহ্নভোজের বিরতি শেষে মাঠে নেমে শাহিন আফ্রিদিকে লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলেন মিরাজ। তবে একপ্রান্ত আগলে রেখে ৪০তম ওভার বাংলাদেশের লিড পার করেন রিজওয়ান। ৪৩তম ওভারে নাসিম শাহকে ফিরিয়ে নিজের তৃতীয় উইকেট তুলে নেন সাকিব। কিন্তু বাংলাদেশের সামনে প্রতিরোধে দেওয়াল গড়ে তোলেন রিজওয়ান।
তবে ৫৪ ওভারে চতুর্থ বলে এই অভিজ্ঞ ব্যাটারকে সাজঘরে ফেরান মিরাজ। এতে বাংলাদেশের জয়ের পথ সহজ হয়। শেষ দিকে মোহাম্মদ আলিকে সাজঘরে ফিরিয়ে নিজের চতুর্থ উইকেট শিকার করেন মিরাজ। এতে ১৪৬ রানে অলআউট হয় পাকিস্তান। এতে জয়ের জন্য ৩০ রানের লক্ষ্য পায় বাংলাদেশ।
বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ চার উইকেট শিকার করেন মেহেদী হাসান মিরাজ। তিন উইকেট নেন আরেক স্পিনার সাকিব আল হাসান। এ ছাড়াও তিন পেসার শরিফুল ইসলাম, হাসান মাহমুদ এবং নাহিদ রানা একটি করে উইকেট শিকার করেন।
সহজ লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ১০ উইকেট এবং পুরো একটি সেশন বাকি থাকতেই জয় তুলে নেয় বাংলাদেশ। সাদমান ইসলাম ৯* রানে এবং ২৬ বলে অপরাজিত ছিলেন আরেক ওপেনার জাকির হাসান।