পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদে বাংলাদেশ হাইকমিশনের উদ্যোগে অত্যন্ত জাঁকজমকপূর্ণ পরিবেশে উদযাপন করা হয়েছে বাংলা নববর্ষ ১৪৩২। বৃহস্পতিবার (২ মে) ইসলামাবাদের স্যার সৈয়দ মেমোরিয়াল সোসাইটির বৃহৎ ‘সিদ্ধ রোড কালচারাল সেন্টারে’ দিনব্যাপী এই উৎসব আয়োজন করা হয়। বাংলাদেশ হাইকমিশন এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ তথ্য জানায়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পাকিস্তান সরকারের ফেডারেল তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সচিব আমব্রিন জান। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন পাকিস্তানে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মো. ইকবাল হোসেন খান। এছাড়া হাইকমিশনের সব কর্মকর্তা-কর্মচারী ও তাদের পরিবারের সদস্যরা অতিথিদের আন্তরিকভাবে অভ্যর্থনা ও আপ্যায়ন করেন।
অনুষ্ঠানটি বাংলাদেশ হাইকমিশনের অফিসিয়াল ফেসবুক পেইজ থেকে সরাসরি সম্প্রচার (লাইভ স্ট্রিমিং) করা হয়, যা প্রবাসী বাংলাদেশি এবং আন্তর্জাতিক অতিথিদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে।
বাংলা নববর্ষ উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত, হাইকমিশনার ও কূটনীতিক, ব্যবসায়ী, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব, সংগীতজ্ঞ, চিত্রশিল্পী, প্রবাসী বাংলাদেশিসহ প্রায় দেড় হাজার অতিথি উপস্থিত ছিলেন।
হাইকমিশনার মো. ইকবাল হোসেন খান তার বক্তব্যে বলেন, “পয়লা বৈশাখ সম্প্রীতি ও মহামিলনের দিন। এ দিন ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সমগ্র বাঙালি জাতি জেগে ওঠে নবপ্রাণে, নব অঙ্গীকারে।” তিনি বাংলাদেশি সংস্কৃতি আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে তুলে ধরার গুরুত্বও তুলে ধরেন।
প্রধান অতিথি আমব্রিন জান বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, “এই ধরনের সাংস্কৃতিক উৎসব দুই দেশের জনগণের সম্পর্ককে আরও দৃঢ় করবে।”
উৎসবে পরিবেশিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের ঐতিহ্যবাহী সাজে সজ্জিত শিল্পীরা আবৃত্তি, নৃত্য ও সংগীত পরিবেশন করেন। হাইকমিশনের কর্মকর্তা, তাদের পরিবারের সদস্য এবং প্রবাসী বাংলাদেশি ও পাকিস্তানি শিল্পীরা অনুষ্ঠানে অংশ নেন। এছাড়া পাকিস্তানে সফররত বাংলাদেশি প্রতিনিধি দলের সদস্যরাও এতে গান পরিবেশন করেন।
বাংলাদেশি ঐতিহ্যের রঙ ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য অনুষ্ঠানস্থলকে ব্যানার, ফেস্টুন, ঘুড়ি, ফুল ও লোকজ শিল্পপণ্য দিয়ে দৃষ্টিনন্দনভাবে সাজানো হয়। অতিথিরা বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী লোকজ শিল্প, ভিডিও ও সঙ্গীত পরিবেশনায় মুগ্ধ হন।
খাবার আয়োজনও ছিল উৎসবের অন্যতম আকর্ষণ। আমন্ত্রিত অতিথিদের জন্য পরিবেশিত হয় ফুচকা, মাঠা, লেবুর শরবত, তরমুজ, শসা, কাঁচা আম, পিচ ও লোকাট ফল। হাইকমিশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পরিবারের সদস্যরা প্রস্তুত করেন দুধ-লাউয়ের ফিন্নি, গাজরের হালুয়া, ডিমের হালুয়া, গোলাপ পিঠা, নকশি পিঠা, পাটি সাপটা পিঠা ও তেলের পিঠা।
মূল খাবারের তালিকায় ছিল পান্তা ভাতের সঙ্গে আলু, বেগুন, বাদাম, টাকি মাছ, মসুর ডাল, লইট্টা শুঁটকি, কালোজিরা, চিংড়ি, চ্যাপা শুঁটকি, টমেটো, বরবটি ও ধনিয়া পাতার ভর্তা, করলার ভাজি এবং ঐতিহ্যবাহী কাচ্চি বিরিয়ানি ও খিচুড়ি।
বাংলাদেশের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও সম্প্রীতির বার্তা ছড়িয়ে দিতে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানটি প্রবাসী বাংলাদেশিদের পাশাপাশি বিদেশি অতিথিদের কাছেও এক উজ্জ্বল উদাহরণ হিসেবে বিবেচিত হয়েছে।
পড়ুন: পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর ইউটিউব চ্যানেল ব্লক করল ভারত
দেখুন: ভারত নাকি পাকিস্তান, সামরিক শক্তিতে কে এগিয়ে
ইম/