বাংলাদেশের নদী ও পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনার জন্য চীনের কাছ থেকে ৫০ বছরের একটি মাস্টারপ্ল্যান চেয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। গত শুক্রবার চীন সফরের তৃতীয় দিনে তিনি চীনের পানিসম্পদমন্ত্রী লি গোওয়িংয়ের সঙ্গে এক দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে এ অনুরোধ জানান।
নদীমাতৃক দেশ হওয়ায় সারাদেশে জালের মতো ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে অসংখ্য নদী। এগুলো বাংলাদেশের জন্য আশীর্বাদ হলেও বছরের বিভিন্ন সময়ে ভয়ঙ্কর রূপ নেয়।
বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে পানিবণ্টনের বিষয়টি একটি পুরাতন এবং জটিল ভূ-রাজনৈতিক সমস্যা। এ সমস্যার মূল বিষয় ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ-ভারত বিভাজন এবং পরবর্তী দ্বিপক্ষীয় চুক্তি ও সম্পর্ককে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়। ভারতের নির্মিত বাধের কারনে প্রতিবছর বর্ষায় বন্যা আর শুষ্ক মৌসুমে খরা হয় বাংলাদেশে। দিন দিন এই সমস্যা বড় হয়ে উঠছে।
ভারতের নির্মিত বাধের কারণে বছরে দুবার বন্যা যেন এখন নিয়মিত হয়ে উঠেছে। এতে প্রতিবছরই আর্থিক ক্ষতির পাশাপাশি জনদুর্ভোগও চরমে পৌঁছায়। ধারণা করা হচ্ছে এসব সমস্যার সমাধানেই চীনের কাছে পানি ব্যবস্থার মহাপরিকল্পনা চেয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা।
ড. ইউনূস চীনের উন্নত পানি ও বন্যানিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাপনার প্রশংসা করে বলেন, চীন পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনায় ব্যাপক সাফল্য অর্জন করেছে। তিনি চীনা মন্ত্রীকে বলেন, ‘আপনাদের মতোই আমাদেরও একই ধরনের সমস্যা রয়েছে। তাই আমরা আপনাদের অভিজ্ঞতা থেকে শিখতে চাই।
তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ একটি বদ্বীপ, আমাদের শত শত নদী রয়েছে। পানি আমাদের জন্য আশীর্বাদ, তবে কখনো কখনো এটি ভয়াবহ বিপর্যয় ডেকে আনে। ‘চীনকে পানি ব্যবস্থাপনায় দক্ষ কারিগর’ হিসেবে উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘চীনের কাছ থেকে বাংলাদেশের অনেক কিছু শেখার আছে।’
নদী দখল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও উন্নয়নের চাপে মানুষ নদীর পাশের জমি দখল করছে। এছাড়া নদীগুলোর মাঝখানে পলি জমে নতুন ভূমি তৈরি হচ্ছে। যা কখনও কখনও নদীগুলোকে সংকুচিত বা মৃত করে দিচ্ছে।
তখন চীনের পানিসম্পদ মন্ত্রী লি গুয়োইং বলেছেন, পানি ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে উভয় দেশ একই ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। বাংলাদেশের ৮৫ শতাংশ মানুষ বন্যাপ্রবণ অঞ্চলে বসবাস করে। যা দেশটির পানি ব্যবস্থাপনাকে আরও জটিল করে তুলেছে। এ সময় বাংলাদেশকে প্রযুক্তিগত সহায়তা ও বিশেষজ্ঞ পরামর্শ দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের সমস্যা কেবল একটি নদী নিয়ে নয় বরং সামগ্রিক নদী ব্যবস্থাপনায়।’ তিস্তা নদী ব্যবস্থাপনা এবং ঢাকার আশেপাশের নদীগুলোর দূষিত পানি পরিষ্কারকরণের বিষয়টি বিশেষভাবে উল্লেখ করে সহায়তা চান প্রধান উপদেষ্টা।
যদি এই মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন হয়, তবে এটি হতে পারে বাংলাদেশের পানি ব্যবস্থাপনায় যুগান্তকারী পরিবর্তনের সূচনা।
এনএ/