নিজ প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার গোপালগঞ্জ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি ভুয়া মুক্তিযোদ্ধ প্রদীপ বিশ্বাস পল্টুর প্রতারণার খপ্পরে পড়ে জেলা শহরের প্রতিষ্ঠিত স্বর্ণ ব্যবসায়ী বরুন দত্ত এখন সর্বশান্ত। অর্থ আর চিকিৎসার অভাবে মৃত্যু পথযাত্রী। প্রতারণার মাধ্যমে বরুণ দত্তের স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সবকিছু হাতিয়ে নিয়েছে ভূয়া মুক্তিযোদ্ধা পল্টু বিশ্বাস। সব হারিয়ে বরুন দত্তের ঠিকানা এখন রাস্তায়। খেয়ে না খেয়ে চলছে তার জীবন।
নানা দুশ্চিন্তায় বিভিন্ন রকম দূরারোগ্য ব্যাধি বাসা বেধেছে তার শরীরে। হৃদরোগ, ডায়েবেটিস, কিডনি সহ নানা জটিল রোগে আক্রান্ত বরুন দত্ত। টাকার অভাবে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা করাতে না পারায় সে এখন মৃত্যুর প্রহর গুনছেন। বিশ্বাস করে প্রতারিত হওয়ায় বরুণ দত্তের আত্মীয়-স্বজন এমনকি স্ত্রী-সন্তানেরাও ত্যাগ করেছেন বরুন দত্তকে। বর্তমানে একাকী দুর্বিসহ জীবন-যাপন করছেন তিনি।
এ নিয়ে পল্টু বিশ্বাসের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, সদর থানাসহ গোপালগঞ্জ কেন্দ্রীয় কালী বাড়ি, খাটরা সার্বজনীন কালী বাড়ি, জুয়েলার্স সমিতির নিকট লিখিত অভিযোগ দিয়েছে বরুণ দত্ত।
অভিযোগ সুত্রে জানা গেছে, প্রদীপ বিশ্বাস রূপালী ব্যাংকের একজন সাবেক কর্মকর্তা। ব্যাংকে চাকুরিরত অবস্থায় তার বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে তার বিরুদ্ধে চারিত্রিক স্খলণজনিত নানা অভিযোগ পাওয়া যায়। তারপরও সরল বিশ্বাস ও মানবিকতা বিবেচনা করে তাকে নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ম্যানেজার হিসেবে চাকরি দেন বরুন দত্ত। চাকরি নেওয়ার পর বরুন দত্তকে সিসি লোন করে দিবে বলে বরুন দত্তের নিজ নামীয় ন্যাশনাল ব্যাংকের একাউন্টের স্বাক্ষর করা পুরো একটা ফাঁকা চেকবই ও বরুন দত্তের স্ত্রীর নামে থাকা ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক একাউন্টের স্বাক্ষর করা পুরো একটা ফাঁকা চেকবই নিজের হেফাজতে নেন প্রদীপ বিশ্বাস। এছাড়াও বরুন দত্ত তার ব্যবসায়িক সকল ডকুমেন্ট (গুরুত্বপূর্ণ চুক্তিপত্র, ব্যাংক স্ট্যাম্প পেপার) সহ ২১ ভরি স্বর্ণ, পারিবারিক আসবাবপত্র, নগদ লক্ষ লক্ষ টাকা ও দোকানের এসি প্রদীপ বিশ্বাস তার হেফাজতে রাখেন। পরবর্তীতে ভাগ্যের চাকা ঘুরানোর আশায় বরুন দত্ত শুরু করেন ইটভাটার ব্যবসা। গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার বড় ডোমরাশুরের মিহির বলের মালিকানাধীন মেসার্স ফুলমালা ব্রিকস নামক মৃত ইটভাটা ভাড়া নিয়ে নিজের স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি বিক্রি করে প্রায় ১ কোটি ২০ লক্ষ টাকা লগ্নী করে ভাটা চালু করেন বরুন দত্ত। ইটভাটার ব্যবসায় পূর্ব অভিজ্ঞতা না থাকার কারনে বরুন দত্ত তার ম্যানেজার প্রদীপ বিশ্বাস (পল্টু) ও মিহির বলকে ভাটা পরিচালনার দায়িত্ব দেন। বরুন দত্তের এই বিশ্বস্ততার সুযোগ নেয় প্রদীপ বিশ্বাস (পল্টু) ও মিহির বল। মৃত ইটভাটা চালু হওয়ার পর থেকেই মিহির বল ও প্রদীপ বিশ্বাস পল্টু বিভিন্নভাবে হয়রানিমূলক আচরণ শুরু করে বরুন দত্তের সাথে । ম্যানেজার পল্টু বিশ্বাস মিহির বলের সাথে হাত মিলিয়ে ইটভাটা ব্যবসা থেকে বের করে দেন বরুন দত্তকে। বরুন দত্ত প্রদীপ বিশ্বাসের হেফাজতে থাকা নিজ নামীয় ন্যাশনাল ব্যাংকের একাউন্টের স্বাক্ষর করা পুরো একটা ফাঁকা চেকবই ও স্ত্রীর নামে থাকা ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক একাউন্টের স্বাক্ষর করা পুরো একটা ফাঁকা চেকবই সহ তার ইটভাটার অংশীদারী ব্যবসা সংক্রান্ত সকল ডকুমেন্ট ২১ ভরি স্বর্ণ, পারিবারিক আসবাবপত্র, নগদ লক্ষ লক্ষ টাকা ও দোকানের এসি ফেরতসহ ইটভাটার সকল হিসাব-নিকাশ নিয়ে বসতে চাইলে গড়িমসি শুরু করে প্রদীপ বিশ্বাস। বারবার তার সাথে হিসাব নিয়ে বসতে চাইলে নানা অযুহাতে তিনি বরুন দত্তকে এড়িয়ে যান। এরপর প্রদীপ বিশ্বাস বরুন দত্তকে নানা ধরণের হুমকি-ধামকি দিতে থাকে। প্রদীপ বিশ্বাস গোপালগঞ্জ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের বর্তমান সভাপতি ও কথিত মুক্তিযোদ্ধা। বিভিন্ন সূত্রের অভিযোগ, প্রদীপ বিশ্বাস টাকার জোর ও অবৈধ ক্ষমতা ব্যবহার করে মুক্তিযোদ্ধা হয়েছেন। সে তার এই পদকে ব্যবহার করে নানা ভুয়া অভিযোগ তুলছেন বরুন দত্তের বিরুদ্ধে। সেই সাথে বরুন দত্তের এই অসহায়ত্ব ও অসুস্থতার সুযোগ নিয়ে পল্টু বিশ্বাস তাকে পাগল এবং নেশাগ্রস্ত বলে বিভিন্ন জায়গায় প্রমাণ করার চেষ্টায় লিপ্ত রয়েছেন। প্রদীপ বিশ্বাস পল্টু ও মিহির বলের কারনেই বরুন দত্ত আজ সর্বশান্ত। অন্যদিকে প্রদীপ বিশ্বাস হয়েছেন অঢেল সম্পদের মালিক। শহরের নিচু পাড়ায় দোতালা বাড়ি, দুই ছেলেকে পাঠিয়েছেন কানাডায় এসবই করেছেন বরুন দত্তের টাকায়। বরুন দত্ত আজ পথের ভিখারী, বিচারের আশায় ঘুরছেন দ্বারে দ্বারে। অর্থ অভাবে সুচিকিৎসা করতে না পারায় সে এখন মৃত্যু পথযাত্রী।
বরুণ দত্ত বলেন, পল্টু বিশ্বাস কে আমি সরল মনে সব দিয়েছিলাম। কিন্তু সে আমার সাথে প্রতারণা করে আমার সব কিছু কেড়ে নিয়েছে। আমাকে এখন সর্বশান্ত করে দিয়েছে। আমি এখন পথের ফকির। টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারি না। আমি হিসাব নিয়ে বসতে চাইলে আমাকে নেশাখোর পাগল বলে তাড়িয়ে দেয়। আমি পল্টু বিশ্বাসের বিচার চাই।
এনএ/