ফিলিস্তিনের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ মুস্তাফাকে অধিকৃত পশ্চিম তীরের কয়েকটি শহর ও গ্রাম পরিদর্শনের অনুমতি দেয়নি ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ। এসব এলাকা দীর্ঘদিন ধরে ইহুদি বসতি স্থাপনকারীদের সহিংস হামলার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়ে আছে। ইসরায়েলের এই পদক্ষেপকে ‘বিপজ্জনক নজির’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন ফিলিস্তিনি এক কর্মকর্তা।
রোববার (২০ এপ্রিল) তুর্কি বার্তা সংস্থা আনাদোলুর প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী মুস্তাফার সফরের জন্য প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ও চলাচল সংক্রান্ত সমন্বয় করতে অস্বীকৃতি জানায় ইসরায়েল। ফিলিস্তিনের বসতি ও দেয়াল প্রতিরোধ কমিশনের প্রধান মুআয়্যাদ শাবান জানান, সফরটি রামাল্লাহর পূর্বের বুরকা ও দেইর দিবওয়ান এবং নাবলুসের দক্ষিণের দোমা ও কুসরা গ্রাম ঘিরে ছিল।
শাবান বলেন, “এই এলাকাগুলোর সাধারণ মানুষ দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ বসতি স্থাপনকারীদের সহিংসতা ও ইসরায়েলি সেনাদের উপস্থিতির মধ্যে বসবাস করছেন। প্রধানমন্ত্রী মুস্তাফা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য সেখানে যেতে চেয়েছিলেন, কিন্তু ইসরায়েল তা আটকে দিয়েছে।”
ফিলিস্তিনি ও ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের মধ্যে একটি চুক্তি অনুসারে, উচ্চপদস্থ ফিলিস্তিনি কর্মকর্তাদের চলাচলের জন্য ইসরায়েলের সঙ্গে আগাম সমন্বয় করতে হয়, বিশেষত তাদের সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনী থাকায়। তবে এবার ইসরায়েল সেই সমন্বয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে অস্বীকৃতি জানিয়ে সফরটিকে কার্যত বাতিল করে দেয়।
শাবান অভিযোগ করেন, অবৈধ বসতি স্থাপনকারীদের চাপেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসরায়েল। জানা গেছে, তারা প্রধানমন্ত্রী মুস্তাফার বিরুদ্ধে উসকানিমূলক প্রচারণা চালিয়ে সফর বন্ধের দাবি তোলে। ইসরায়েলি সরকার সেই দাবির পেছনে সমর্থন জানিয়ে সফরের অনুমতি প্রত্যাখ্যান করে।
আনাদোলুর তথ্য মতে, ২০২৪ সালের শেষ নাগাদ পশ্চিম তীরে প্রায় ৭ লাখ ৭০ হাজার ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারী বসবাস করছেন। তারা ১৮০টি স্বীকৃত বসতি এবং ২৫৬টি অননুমোদিত আউটপোস্টে অবস্থান করছেন। এর মধ্যে ১৩৮টি বসতি কৃষিকাজ ও পশুপালনের ওপর নির্ভরশীল।
২০২৩ সালের অক্টোবরে গাজায় ইসরায়েলি হামলা শুরুর পর থেকেই পশ্চিম তীরজুড়ে উত্তেজনা চরমে পৌঁছেছে। ফিলিস্তিনি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত ১৮ মাসে পশ্চিম তীরে অন্তত ৯৫২ জন ফিলিস্তিনি নিহত এবং ৭ হাজারের বেশি আহত হয়েছেন।
২০২৪ সালের জুলাই মাসে আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে) ইসরায়েলের পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেমে বসতি স্থাপনকে “অবৈধ” বলে ঘোষণা করে। আদালত সব বসতি প্রত্যাহারের নির্দেশ দিলেও ইসরায়েল তা উপেক্ষা করে বসতি সম্প্রসারণ অব্যাহত রেখেছে।
এই পরিস্থিতিতে ফিলিস্তিনের প্রধানমন্ত্রী মাঠ পর্যায়ে পরিস্থিতি যাচাই করতে চাইলেও ইসরায়েল তাৎক্ষণিকভাবে সেই সুযোগও বাতিল করে দেয়, যা মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা আরও বাড়াবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
পড়ুন: গাজায় ইসরায়েলের হামলায় একদিনে ৬৪ ফিলিস্তিনি নিহত
দেখুন: কাতার বিশ্বকাপে ইসরাইলকে হারালো ফিলিস্তিনি! |
ইম/