বগুড়ায় জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কেন্দ্রীয় মুখ্য সংগঠক(উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলমের উপস্থিতিতে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একাংশের নেতাকর্মীদের সাথে এনসিপি’র নেতাকর্মীদের হাতাহাতি ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে।
দুই পক্ষের মধ্যে কয়েক দফা ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া চলাকালে দুইজন ছুরিকাহতসহ কয়েকজন আহত হলেও তাৎক্ষণিকভাবে তাদের নাম-পরিচয় জানা যায়নি।
জানা গেছে, বুধবার বিকেল সাড়ে তিনটায় বগুড়া শহরের শহীদ টিটু মিলনায়তনে জাতীয় নাগরিক পার্টি‘গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগের বিচার ও তাদের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধের’ দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করে।
এই আয়োজনের বিরোধিতা করে একই স্থানে পাল্টা প্রতিবাদ কর্মসূচি দেয় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একটি অংশ। বিকেল পাঁচটার দিকে এনসিপির মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম, যুগ্ম সদস্য সচিব তাহসিন রিয়াজসহ কেন্দ্রীয় নেতারা মঞ্চে ওঠেন। সমাবেশ শুরু হলে কিছুক্ষণ পরেই বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একাংশের নেতাকর্মীরা “ভুয়া ভুয়া” স্লোগান দিতে দিতে মিছিল নিয়ে সমাবেশস্থলে প্রবেশ করে।

এনসিপির নেতাকর্মীরা তাদের বাধা দিলে প্রথমে কথা-কাটাকাটি এবং একপর্যায়ে হাতাহাতি শুরু হয়। এরপর কয়েক দফা হাতাহাতি ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এমনকি সারজিস আলম বক্তব্য দেয়ার সময়ও সমাবেশ স্থলের বাহিরে দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া চলতে থাকে।
তবে এ নিয়ে কোনো পক্ষের সরাসরি বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সারজিস আলম বলেন, ‘আওয়ামী লীগ এই দেশে আর রাজনীতি করতে পারবে না। তাদের যেখানে পাওয়া যাবে, সেখানেই প্রতিহত করা হবে। বগুড়া থেকেই প্রতিরোধের সূচনা হবে।’
তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘আওয়ামী লীগের দুঃশাসনে গত ১৬ বছরে বগুড়া সবদিক থেকে বঞ্চিত হয়েছে। চাকরি, প্রমোশন, অবকাঠামো—সবখানেই বৈষম্য করা হয়েছে। বগুড়ার বিমানবন্দর সাধারণ মানুষের জন্য খুলে দেওয়া হয়নি, আধুনিক হাসপাতালকে তৃতীয় শ্রেণির প্রতিষ্ঠানে রূপান্তর করা হয়েছে, আন্তর্জাতিক স্টেডিয়াম থাকলেও কোনো আন্তর্জাতিক ম্যাচ আয়োজন করা হয় না।’
তিনি ঢাকা থেকে বগুড়ায় সরাসরি রেললাইন চালুর দাবিও জানান।
তিনি বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ মাসুদুর রহমান মিলনের নাম উল্লেখ করে বলেন, ‘তিনি জেলার ঐতিহ্যবাহী প্যালেস মিউজিয়াম ও জেলা ক্রীড়া সংস্থা দখল করেছেন। বগুড়ায় এ রকম অসংখ্য আওয়ামী দালাল রয়েছে—তাদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার করতে হবে।’
সমাবেশটি সঞ্চালনা করেন এনসিপির কেন্দ্রীয় সংগঠক যুথী অরণ্য প্রীতি। বক্তব্য রাখেন এনসিপির যুগ্ম সদস্য সচিব তাহসিন রিয়াজ, যুগ্ম মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সাকিব মাহদী, কেন্দ্রীয় সদস্য রফিকুল ইসলাম পলক, আবদুল্লাহ আল মুহিন, নাজমুল হক, জেলা সংগঠক আহমেদ সাব্বির, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বগুড়া জেলা সদস্য সচিব সাকিব খান, ওয়ারিয়র্স জুলাইয়ের আহ্বায়ক মো. মুশফিক, শহীদ সেলিম মাস্টারের ভাই উজ্জ্বল হোসেন, শহীদ রাতুলের ভাই হামজা প্রমুখ।
সমাবেশ শেষে সারজিস আলমের নেতৃত্বে একটি বিক্ষোভ মিছিল শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে সাতমাথার মুক্তমঞ্চের সামনে গিয়ে শেষ হয়। মিছিল থেকে নেতাকর্মীরা আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধসহ তাদের বিচার দাবিতে নানা স্লোগান দেন।
বগুড়া সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এসএম মঈনুদ্দিন বলেন, সমাবেশ চলাকালে ১৫-২০ জনের একটি দল ভুয়া- ভুয়া শ্লোগান দিয়ে সমাবেশ স্থলে প্রবেশের চেষ্টা করে।এসময় তাদেরকে অপর পক্ষের নেতাকর্মীরা ধাওয়া দিয়ে বের করে দেয়।
পরে টিটু মিলনায়তনের বাহিরে বেশ কিছু সময় ধরে দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা পাল্টা চলে। সেখানে দুইজনকে ছুরিকাঘাত করা হয় বলে জানা গেছে।
পড়ুন : বগুড়ায় কার্যালয়ে হামলা: আ.লীগের কর্মীদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন