28.4 C
Dhaka
সোমবার, এপ্রিল ২১, ২০২৫

বর্ষবরণ উপলক্ষে ১ কেজি চাল ও ১০ টাকায় পরিবারের সবাই খেলো পান্তা-ইলিশ

দেশব্যাপী আনুষ্ঠানিকভাবে গতকাল সোমবার বর্ষবরণের আয়োজন করা হলেও হিন্দু লোকনাথ পঞ্জিকানুযায়ী গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় বাংলা বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী নানা আয়োজনে আজ মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) অনুষ্ঠিত হয়েছে বর্ষবরণ অনুষ্ঠান।

বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে উপজেলার কলাবাড়ি ইউনিয়নের বুরুয়া গ্রামে পান্তা-ইলিশ খাওয়া নিয়ে ব্যতিক্রমী আয়োজন করা হয়। শিক্ষা, সংস্কৃতি ও সামাজিকতায় সমৃদ্ধ বুরুয়া গ্রামটিতে বসবাস করছে প্রায় ৬ শত পরিবার। প্রতি পরিবার থেকে ১ কেজি চাল ও ১০ টাকা করে তুলে পান্তা-ইলিশের আয়োজন করে গ্রামবাসী।

বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে আজ মঙ্গলবার সকালে বর্ণাঢ্য এক শোভাযাত্রা বুরুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে শুরু হয়ে কালিগঞ্জ বাজার ঘুরে পুনরায় বিদ্যালয় চত্ত্বরে এসে পান্তা ইলিশ খাওয়ার অনুষ্ঠানে মিলিত হয়।


বুরুয়া গ্রামে অনুষ্ঠিত চৈত্র সংক্রান্তি ও বর্ষবরণ অনুষ্ঠান আয়োজক কমিটির সভাপতি শংকর দত্ত প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে শোভাযাত্রাটির উদ্বোধন করেন। শোভাযাত্রায় আয়োজক কমিটির সাধারণ সম্পাদক মঙ্গল চন্দ্র ফলিয়া, সাংগঠনিক সম্পাদক তাপস বাড়ৈসহ গ্রামটির সকল বয়সের সহস্রাধিক নারী-পুরুষ অংশ নেয়। ঢোল, বাঁশিসহ নানা বাদ্যযন্ত্রের তালে তালে নেচে গেয়ে শোভাযাত্রার আনন্দ-উৎসব সকলকে মুগ্ধ করে তোলে।

শোভাযাত্রাশেষে বুরুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে শুরু হয় পান্তা-ইলিশ খাওয়া পর্ব। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত গ্রামের শিশু থেকে বৃদ্ধ সকল বয়সের প্রায় দুই হাজার ব্যক্তি পান্তা-ইলিশ খাওয়ায় অংশ নেয়।

কবি ও শিক্ষক মিন্টু রায় বলেন, সরকারিভাবে প্রতিবছর ১৪ এপ্রিল দেশে বাংলা নববর্ষ উদযাপন করা হলেও সনাতন ধর্মালম্বীরা বাংলা বর্ষপঞ্জি হিসেবে চৈত্র সংক্রান্তি ও বর্ষবরণের আয়োজন করে। গতবছর ১৪ এপ্রিলের সাথে বাংলা পঞ্জিকানুযায়ী পহেলা বৈশাখ একই তারিখে অনুষ্ঠিত হলেও এবছর বাংলা পঞ্জিকানুযায়ী ১৫ এপ্রিল পহেলা বৈশাখ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সেই অনুযায়ী সনাতন ধর্মালম্বীরা গতকাল চৈত্র সংক্রান্তি ও আজ পহেলা বৈশাখ উদযাপন করছে।

বুরুয়া গ্রামের কলেজ ছাত্রী রিপা বাড়ৈ বলেন, সকালে আমরা বর্ষবরণের শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণ করে এখানে এসে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে পান্তা ইলিশ খেলাম। অনেকদিন পরে আমরা গ্রামবাসী একসাথে বর্ষবরণ উপলক্ষে একসঙ্গে মিলিত হলাম। এতে আমাদের সামাজিক ভ্রাতৃত্ববোধ জাগ্রহ হয়েছে বলে আমি মনে করছি। আমরা চাই প্রতিবছর গ্রামবাসী এভাবে একত্রিত হয়ে চৈত্র সংক্রান্তি ও বাংলা নববর্ষ পালন করুক।

শিক্ষক তাপস বাড়ৈ বলেন, আমি স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে এখানে পান্তা ইশিল খেলাম। দু’দিন আগে আমার পরিবারের পক্ষ থেকে এই অনুষ্ঠানের জন্য আয়োজক কমিটির নিকট ১ কেজি চাল ও ১০ টাকা দেই। পুরো গ্রাম আজ যেন মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে।


আয়োজন কমিটির সাধারণ সম্পদক মঙ্গল চন্দ্র ফলিয়া বলেন, আমরা বাংলা বর্ষপঞ্জিনুযায়ী চৈত্র সংক্রান্তি ও পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে দুই দিনব্যাপী নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করি। গতকাল সোমবার প্রথমদিন চৈত্র সংক্রান্তি উপলক্ষে ছিলো চিড়া-দই খাওয়া ও বাউল গান। আজ মঙ্গলবার অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় দিনে পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে আনন্দ শোভাযাত্রা শেষে আমরা একসাথে সবাই মিলে পান্তা-ইলিশ খেয়েছি। এই পান্তা-ইলিশ খাওয়ার জন্য গ্রামের প্রতিটি ঘর থেকে ১০ টাকা ও ১ কেজি করে চাল তোলা হয়। তা দিয়েই এই পান্তা-ইলিশের আয়োজন করা হয়। আজ সন্ধ্যায় দেশবরেণ্য শিল্পীদের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। তবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের জন্য এই গ্রামের চাকুরীজীবী যুব সমাজ সহযোগিতা করেছেন।

আয়োজন কমিটির সভাপতি শংকর দত্ত বলেন, আমরা এই পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে এখানে দুই হাজার লোকের পান্তা ইলিশ খাওয়ার আয়োজন করেছিলাম। তবে শেষ পর্যন্ত আমাদের এই সংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে। সবাই আনন্দ-উৎসাহের মধ্যে দিয়ে এই পান্তা ইলিশ খেয়েছে। আমরা এই আয়োজন ধরে রাখার চেষ্টা করবো।

পড়ুন : গোপালগঞ্জে মেধাবী শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের সংবর্ধনা দিল পূর্বাভাস

বিজ্ঞাপন

আরও পড়ুন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

বিশেষ প্রতিবেদন