যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন অভিবাসন নীতির আওতায় গতকাল রোববার পর্যন্ত ৩১ জন বাংলাদেশি নাগরিককে দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে। এই ফেরত পাঠানোরা অভিবাসন-সংক্রান্ত মামলায় হেরে যাওয়ার পর, নানা অপরাধের দায়ে যুক্তরাষ্ট্রে আটক থাকার পর তাদের দেশে ফেরত পাঠানো হয়। বিশেষভাবে, এই বাংলাদেশিরা যারা বৈধ অভিবাসী হিসেবে নয়, অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছিলেন, তাদেরই ফেরত পাঠানো হয়েছে। পুলিশের বিশেষ শাখা (এসবি) এবং বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন সূত্রে এই তথ্য পাওয়া গেছে।
এভাবে ফেরত পাঠানো ৩১ জনের মধ্যে ৩০ জন পুরুষ এবং ১ জন নারী রয়েছে। তাদের মধ্যে বেশিরভাগই যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধভাবে থাকার জন্য বিভিন্ন মামলা মোকাবেলা করেছিলেন এবং সংশ্লিষ্ট অপরাধে দণ্ডিত হন। সবচেয়ে শেষের ঘটনা, গত শনিবার দুপুরে একটি চার্টার্ড ফ্লাইটে পাঁচ বাংলাদেশিকে ঢাকায় ফেরত পাঠানো হয়েছে, যা নেপাল হয়ে বাংলাদেশে পৌঁছেছে।
অভিবাসন-সংক্রান্ত মামলায় হেরে যাওয়া বাংলাদেশিরা যুক্তরাষ্ট্রে বিভিন্ন ধরনের অপরাধে অভিযুক্ত হয়ে ছিলেন। তাদের মধ্যে কিছু ব্যক্তির বিরুদ্ধে সাজা দেওয়া হয়েছিল, এবং তারা মার্কিন মুলুকে আসার পরেই বিভিন্ন আইনি লড়াইয়ের মধ্যে পড়েছিলেন। তবে তাদের শাস্তি শেষে তারা দেশে ফেরত পাঠানো হয়। বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য যে, দেশের নিরাপত্তা বাহিনী যুক্তরাষ্ট্রের শর্ত অনুসরণ করে তাদের ফেরত পাঠাতে সচেষ্ট হয়েছে।
ফেরত আসা কয়েকজন বাংলাদেশির সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। নোয়াখালীর বাসিন্দা শাহাদত হোসেন বলেন, তাকে এমিরেটস এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে তুলে দেওয়া হয়েছিল এবং কোনও ধরনের অসম্মানজনক আচরণ করা হয়নি। শাহাদত আরও বলেন, তিনি যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়েছিলেন, তবে তা গ্রহণযোগ্য না হওয়ায় তাকে দেশে ফেরত পাঠানো হয়।
এই বিষয়ে পুলিশের বিশেষ শাখার এক কর্মকর্তা জানান, বাংলাদেশ সরকার এই প্রক্রিয়ায় যথাযথ কূটনৈতিক পদক্ষেপ নিয়েছে যাতে তাদের সম্মানজনকভাবে ফেরত পাঠানো হয়। বিশেষ নিরাপত্তার মাধ্যমে দেশের অভ্যন্তরে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া যাতে নির্বিঘ্নে সম্পন্ন হয়, সে বিষয়ে ব্যাপক আলোচনা হয়েছে মার্কিন দূতাবাসের সঙ্গে। সরকারের তরফ থেকে একটি প্রটোকল অনুসরণ করে ফেরত আসা ব্যক্তিদের হস্তান্তর করা হচ্ছে।
এছাড়া, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিষয়টি আরও তদারকি করেছে এবং ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে সকল প্রক্রিয়া যাচাই-বাছাই করা হয়েছে। ব্র্যাকের সহযোগী পরিচালক শরিফুল হাসান বলেন, সরকার যদি প্রয়োজন মনে করে তবে তাদের সহায়তা দেওয়া হবে এবং এদের কাউন্সেলিং ও আর্থিক সহযোগিতা প্রাথমিকভাবে দেওয়া হতে পারে।
তবে, অবৈধ অভিবাসীদের ফেরত পাঠানোর এই প্রক্রিয়া বিশ্বব্যাপী বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ট্রাম্প প্রশাসনের কঠোর অভিবাসন নীতি অনুসারে, দেশের বাইরে থেকে অবৈধভাবে অবস্থানকারী বিদেশি নাগরিকদের ফিরিয়ে নিয়ে আসা হচ্ছে। এই প্রক্রিয়ার মধ্যে বাংলাদেশিরা ছাড়াও অন্য অনেক দেশের নাগরিকও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, ইমিগ্রেশন এবং সরকারি সংস্থাগুলোর সমন্বিত প্রয়াসের মাধ্যমে এই প্রক্রিয়া পরিচালিত হচ্ছে এবং তাতে কোনো ধরনের ত্রুটি থাকছে না। এভাবে ফেরত আসা বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য সরকারের সহায়তা প্রক্রিয়া চালু রাখা হয়েছে।
এদিকে, মার্কিন প্রশাসন শরণার্থী বা অভিবাসী গ্রহণের ক্ষেত্রে কঠোর মনোভাব নিয়েছে এবং তারই অংশ হিসেবে বিভিন্ন দেশের নাগরিকদের ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া অব্যাহত রেখেছে। তবে, এই সব দেশে মানবাধিকার সম্পর্কিত বিতর্কও বেড়ে গেছে, বিশেষ করে যারা দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন তাদেরকে ফেরত পাঠানো নিয়ে।
উল্লেখযোগ্য যে, ডোনাল্ড ট্রাম্পের শপথ নেওয়ার পর ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে তার প্রশাসন শুরু করে কঠোর অভিবাসন নীতি, যার আওতায় এই ধরনের ফেরত পাঠানোর কাজ প্রবর্তন করা হয়।
পড়ুন: দুর্বলদের খেতে মানা যে `হোটেলে’ |
দেখুন: রাশিয়ার হয়ে যুদ্ধে অংশ নেওয়া বাংলাদেশি যুবক নিহত
ইম/