উত্তর-পূর্ব ভারতের আসাম রাজ্যে অবৈধ বিদেশিদের বহিষ্কার করার জন্য নতুন পদ্ধতির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে মাত্র ১০ দিনের বিচার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে জেলা প্রশাসক সরাসরি অবৈধ অনুপ্রবেশকারীকে চিহ্নিত ও বহিষ্কার করতে পারবেন।
গত মঙ্গলবার স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর (এসওপি) অনুমোদন করে আসামের মন্ত্রিসভা। মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বাস শর্মা সাংবাদিকদের জানান, জেলা প্রশাসকের আদেশের পর সরকার সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে ডিটেনশন ক্যাম্পে নিয়ে যাবে। সেখান থেকে সীমান্ত বাহিনী বিএসএফের সহায়তায় তাঁকে বিদেশে নির্বাসন দেওয়া হবে।
আসাম থেকে এখন পর্যন্ত ৩০ হাজার ১২৮ জনকে ফেরত পাঠানো হয়েছে। এর বেশির ভাগই বাংলাদেশি সন্দেহে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ ফেরত (পুশব্যাক) পাঠায়। এসওপি প্রকাশের পর এ সংখ্যা আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। আগামী সাত থেকে ১০ দিনের মধ্যে এসওপি বাস্তবায়নের ইঙ্গিত দিয়েছেন রাজ্য সরকারের সংশ্লিষ্টরা।
সম্প্রতি মুম্বাইভিত্তিক সিটিজেনস ফর জাস্টিস অ্যান্ড পিস (সিজেপি) প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, আসাম রাজ্যে হাজার হাজার দরিদ্র এবং প্রধানত শ্রমিক শ্রেণির মানুষ ‘নিদ্রাহীন’ রাত কাটাচ্ছেন। কারণ, শত শত ভারতীয় নাগরিককে বাংলাদেশি বলে আন্তর্জাতিক সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে ঠেলে পাঠিয়ে (বাংলাদেশে পুশইন) দেওয়া হয়েছে। রাজ্যের ৩৩ জেলার সর্বত্র নির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করে ‘নারী, শিশু ও পুরুষদের’ বেআইনিভাবে আটক করে বাংলাদেশে ঠেলে পাঠানো হচ্ছে। তবে গত ১ জুন ওই সব ভারতীয় নাগরিকের অনেককে বাংলাদেশ থেকে ‘পুশব্যাক’ করা হয়েছে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে সিজেপি।
১৯৫০ সালের অভিবাসী (ইমিগ্রেশন) আইন অনুসারে, ফরেনার্স ট্রাইব্যুনাল সরাসরি অভিবাসী বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। নতুন এসওপিতে কোনো ব্যক্তিকে বিদেশি সন্দেহ করা হলে, জেলা প্রশাসককে নিজের সব আইনি নথি দেখাতে হবে তাকে। এর পর জেলা প্রশাসক ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ১০ দিনের মধ্যে নথিগুলো পরীক্ষা করবেন। তারা নথিতে সন্তুষ্ট না হলে ১১তম দিনে ওই ব্যক্তিকে ছাড়পত্রের জন্য একটি হোল্ডিং সেন্টারে পাঠাবেন।
আসাম সরকারের সূত্র জানায়, সরকার নিজে বিদেশিদের বহিষ্কারের কাজ করবে না। বিএসএফকে এ দায়িত্ব দেওয়া হবে। অবৈধ অভিবাসী হিসেবে সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে তার ভারতীয় নাগরিকত্ব প্রমাণ করার জন্য ১০ দিনের সময় দেওয়া হবে। এর মধ্যে শুনানির মাধ্যমে জেলা প্রশাসক যদি ব্যক্তিটি বিদেশি বলে সিদ্ধান্তে পৌঁছান, তাহলে তাৎক্ষণিকভাবে আদেশ জারি করা হবে।
জেলা প্রশাসক চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে না পারলে মামলাটি আরও বিচারের জন্য ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হবে। এ প্রক্রিয়ায় রাজ্য সরকারের পক্ষে বিদেশিদের খুঁজে বের করা ও তাদের দেশে ফেরত পাঠানো অনেক সহজ হবে।
যেসব ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসক বিভ্রান্ত হবেন বা চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারবেন না, বিশেষ করে ১৯৭১ সালের পরে নাগরিকত্বের বিষয়ে সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে বিষয়টি ট্রাইব্যুনালে যাবে।
পড়ুন: বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক আরও জোরদারের বার্তা পাকিস্তানের
দেখুন: গাজা নাগরীর দিকে ছুটছে অগণিত ইসরায়েলি ট্যাংক
ইম/

