বাঙ্কার বাস্টার বোমা তৈরী করছে ভারত। ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, নতুন সংস্করণের ‘অগ্নি-৫’ ক্ষেপণাস্ত্রে যুক্ত হচ্ছে ৭,৫০০ কেজি ওজনের বাংকার-বাস্টার ওয়ারহেড, যা ভূগর্ভস্থ ঘাঁটি ও পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে সহজেই হামলা করতে পারে।
আন্তর্জাতিক প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই উন্নয়ন শুধু প্রতিরক্ষার নয়, বরং ভারতের আক্রমণাত্মক সক্ষমতার এক নতুন বার্তা। ভারতের শত্রু পারমাণবিক শক্তিধর দেশের তালিকায় প্রথমেই আসে যেই দেশ সেটি হলো পাকিস্তান। পার্শ্ববর্তী এই দেশের পারমাণবিক স্থাপণাগুলো হতে পারে ভারতের এই বাঙ্কার বাস্টার বোমার লক্ষ্যবস্তু।
ভারতের প্রতিরক্ষা গবেষণা ও উন্নয়ন সংস্থা, ডিআরডিও, এই নতুন ভার্সনের কাজ শুরু করেছে বলে জানায় ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডে। এই সংস্করণ আগের অগ্নি-৫ এর মতোই ৫,০০০ কিলোমিটার বা তার বেশি দূরত্বে আঘাত হানতে সক্ষম। তবে নতুন সংযোজন হচ্ছে ৭.৫ টন ওজনের একটি ওয়ারহেড, যা ৮০ থেকে ১০০ মিটার গভীর ভূগর্ভে ঢুকে বিস্ফোরণ ঘটাতে পারবে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই ক্ষেপণাস্ত্র মূলত ডিজাইন করা হচ্ছে এমন লক্ষ্যবস্তু ধ্বংসের জন্য, যেগুলো ভূগর্ভস্থ কংক্রিটের বহু স্তরের নিচে নির্মিত, যেমন পারমাণবিক গবেষণা কেন্দ্র, গোপন সামরিক ঘাঁটি বা কমান্ড কন্ট্রোল সেন্টার। এটি সরাসরি শত্রু দেশের গভীরে থাকা উচ্চ-সুরক্ষিত পরিকাঠামো ধ্বংস করতে পারবে।
ভারতের এই উদ্যোগকে অনেকেই যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক অভিযানের প্রতিক্রিয়া হিসেবে দেখছেন। মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগেই যুক্তরাষ্ট্র আকস্মিকভাবে ইরানের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনায় বাঙ্কার বাস্টার হামলা চালায়। ফোর্দো, নাতাঞ্জ, ইসফাহানে চালানো এই হামলায় ব্যবহার করা হয় B-2 স্টেলথ বোমার এবং বাংকার-বাস্টার বোমা, যা ভূগর্ভস্থ ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্রগুলোতে সরাসরি আঘাত হানে।
এমন হামলার পরই ভারতের এই উন্নয়ন পরিকল্পনা সবার সামনে এলো। প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারতের এই পদক্ষেপ সরাসরি বার্তা দিচ্ছে যে, ভারতও যুক্তরাষ্ট্রের মতোই গভীর লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানার সক্ষমতা অর্জন করতে চায়।
বর্তমানে ভারতের অগ্নি-৫ ক্ষেপণাস্ত্র শুধুমাত্র প্রচলিত ওয়ারহেড বহন করে। কিন্তু বাংকার-বাস্টার সংস্করণ যুক্ত হলে, এটি আন্তঃমহাদেশীয় পরিসরের পাশাপাশি কৌশলগতভাবে সুরক্ষিত ভূগর্ভস্থ শত্রু স্থাপনাগুলোকে ধ্বংস করার এক অসাধারণ অস্ত্র হয়ে উঠবে।
ভারতের এই পদক্ষেপ পারমাণবিক অস্ত্র প্রতিযোগিতার এক নতুন অধ্যায় উন্মোচন করতে পারে। বিশেষ করে চীন ও পাকিস্তান, যারা বহু ভূগর্ভস্থ ঘাঁটি তৈরি করে এসেছে, তাদের জন্য এটি একটি সতর্কবার্তা। ফলে এই অস্ত্র পরীক্ষার পর আন্তর্জাতিক মহলে উদ্বেগ বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ভূরাজনৈতিক টানাপোড়েনের এই সময়ে এমন ক্ষমতা অর্জন শুধু প্রতিরক্ষা নয়, বরং আঞ্চলিক আধিপত্যের দিক থেকেও ভারতের অবস্থানকে আরও জোরালো করবে।
পড়ুন: ভারতের ওপর ৫০০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করতে পারে ট্রাম্প
এস/