বিএসইসিতে কর্মচারী-কর্মকর্তাদের বিশৃঙ্খলা তৈরির ঘটনা দেশে ও বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি চরমভাবে ক্ষুন্ন করেছে বলে মন্তব্য করেছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এ ধরণের ন্যাক্কারজনক ঘটনা সারা পৃথিবীতে কোন রেগুলেটরি সংস্থায় এই প্রথম ঘটেছে বলেও জানান তিনি। সোমবার ১০ মার্চ বিএসইসি চেয়ারম্যান ও কমিশনারদের সাথে কমিশনের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একটি সভায় এ কথা বলেন তিনি।

এদিকে বিএসইসি চেয়ারম্যানের গানম্যান মো. আশিকুর রহমান করা মামলায় সংস্থাটির ১৩ কর্মকর্তাকে জামিন দিয়েছেন আদালত।
বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের গানম্যান মো. আশিকুর রহমান করা মামলায় প্রতিষ্ঠানটির ১৩ কর্মকর্তাকে জামিন দিয়েছেন আদালত।
সোমবার (১০ মার্চ) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মেহেদী হাসান ৬ জনের এবং রবিবার (৯ মার্চ) মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জুয়েল রানা ৭ জনের জামিনের আদেশ দেন।
জামিনপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক মাহবুবুল আলম (৫৭) ও রেজাউল করিম (৫৪), যুগ্ম পরিচালক রাশেদুল ইসলাম (৪৮), উপ-পরিচালক বনী ইয়ামিন (৪৫) ও শহিদুল ইসলাম (৪২), লাইব্রেরিয়ান মো. সেলিম রেজা বাপ্পী (৩১), অতিরিক্ত পরিচালক নজরুল ইসলাম (৫০), সহকারী পরিচালক জনি হোসেন (৩১), রায়হান কবীর (৩০), আব্দুল বাতেন (৩২), সাজ্জাদ হোসেন (৩০), ব্যক্তিগত কর্মকর্তা আবু ইউসুফ (২৯) এবং উপ-পরিচালক আল ইসলাম (৩৮)।
গত ৬ মার্চ রাতে শেরেবাংলা নগর থানায় ১৬ জনকে আসামিকে করে মামলা দায়ের করেন বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের গানম্যান মো. আশিকুর রহমান।
অপর আসামিরা হলেন- বিএসইসির সাবেক নির্বাহী পরিচালক সাইফুর রহমান (৫৮), পরিচালক আবু রায়হান মো. মোহতাছিন বিল্লা (৫১) এবং উপ-পরিচালক তৌহিদুল ইসলাম (৩২)।
মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, ৫ মার্চ বিএসইসির চেয়ারম্যান ও কমিশনারদের অবরুদ্ধ করেছিলেন সংস্থাটির কর্মকর্তা–কর্মচারীরা। তারা পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী কমিশনের মূল ফটকে তালা দেন। সিসি ক্যামেরা, ওয়াই-ফাই ও লিফট বন্ধ করে দেন এবং বৈদ্যুতিক সংযোগ বন্ধ করে মারাত্মক অরাজকতা ও ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করে গুরুতর জখমের চেষ্টা করেন।
বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের সভাপতিত্বে এবং কমিশনার মো. মহসিন চৌধুরী, মো. আলী আকবর ও ফারজানা লালারুখের উপস্থিতিতে কমিশনের নির্ধারিত সভা চলাকালে অভিযুক্তরাসহ আরো কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী কমিশনের সভাকক্ষে জোরপূর্বক ঢুকে কমিশনের চেয়ারম্যান ও কমিশনারদেরকে অবরুদ্ধ করেন।
এদিকে বিএসইসিতে চলমান অস্থিরতা কাটিয়ে উঠে কর্মে মনোযোগ দেয়ার আহবান জানিয়েছে কমিশনের চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ। তিনি জানান, বিএসইসির ইতিহাসের একটি ক্রান্তিলগ্নে আজকের সভায় বিএসইসির সকলে একত্রিত হয়েছে। গত ৫ মার্চ সংঘঠিত ঘটনাকে চরম অনভিপ্রেত এবং কিছু উচ্ছৃঙ্খল কর্মচারীর প্ররোচনায়, ইন্ধনে এবং অংশগ্রহণে তা সংঘঠিত হয়েছে। এ ঘটনা প্রশাসনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গ এর পাশাপাশি গুরুতর ফৌজদারি অপরাধ। এ ঘটনা আমাদের পুঁজিবাজারের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর যা দেশে ও বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি চরমভাবে ক্ষুন্ন করেছে এবং এ ধরণের ন্যাক্কারজনক ঘটনা সারা পৃথিবীতে কোন রেগুলেটরি সংস্থায় এই প্রথম ঘটেছে।
তিনি বলেন, এক জাতীয় জীবনে চরম দুঃখজনক অধ্যায়। তবে উক্ত ঘটনায় বিএসইসির সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারী সম্পৃক্ত নয় এবং অংশগ্রহণকারী অনেকেই স্বতঃস্ফূর্তভাবে তাতে যুক্ত হননি- এমনটাই কমিশন বিশ্বাস করে বলে জানান তিনি। এ বিষয়টি মাথায় রেখেই ভবিষ্যতে প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালিত হবে বলে বক্তব্যে উল্লেখ করেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, সামগ্রিক ঘটনার ব্যাপারে সরকারের সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষের পাশাপাশি বিভিন্ন এজেন্সিও অবগত আছে। এছাড়াও কমিশন কর্তৃক ইতোমধ্যে গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের সাথে পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষই একাত্মতা প্রকাশ করেছে। জাতীয় স্বার্থে একটি গুরুত্বপূর্ণ রেগুলেটরি সংস্থা এভাবে চলতে পারে না উল্লেখ করে তিনি ভবিষ্যতে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পরিপূর্ণ দায়িত্বশীলতা ও শৃঙ্খলার সাথে কাজ করার নির্দেশনা দেন। যারা নিষ্ঠা-সততার সাথে কাজ করে যাচ্ছেন তারা বিএসইসির ক্রান্তিলগ্নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। আগামীতে সকলের সহযোগিতায় বিএসইসি তার কার্যক্রম গতিশীলতার সাথে চালিয়ে যাবে বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন তিনি।