ভারতীয় আর্থিক অপরাধ দমন সংস্থা ইন্ডিয়াস এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে জরিমানা করেছে। ভারতের বৈদেশিক মুদ্রা লঙ্ঘনের অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে এই জরিমানা আরোপ করা হয়। ২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে ইডি বিবিসির বিরুদ্ধে বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় ব্যবস্থাপনা আইনের আওতায় তদন্ত শুরু করে, যা সম্প্রতি এক প্রতিবেদন অনুযায়ী নিশ্চিত করা হয়েছে।

রয়টার্সের একটি প্রতিবেদনে জানানো হয়, বিবিসিকে
তিন লাখ ১৪ হাজার ৫১০ পাউন্ড বা প্রায় তিন লাখ ৯৭ হাজার ৯৮০ মার্কিন ডলার জরিমানা করা হয়েছে। ইডির সূত্র অনুযায়ী, বিবিসি তাদের বিদেশি শেয়ার কমানোর জন্য ২০২৩ সালের শুরুর দিকে একটি আইনি নোটিশ পেয়েছিল, যেখানে তাদের বৈদেশিক মালিকানার পরিমাণ ২৬ শতাংশ অনুমোদিত ছিল। এরপরেই তাদের বিরুদ্ধে এই জরিমানা আরোপ করা হয়।
ইডির বিধিমালা অনুযায়ী, বিবিসিকে বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় ব্যবস্থাপনা আইনের আওতায় সংশ্লিষ্ট সংস্থা সন্দেহভাজনদের বিরুদ্ধে তদন্ত পরিচালনা ও জরিমানা আরোপ করতে পারে। এর আগে ২০২৩ সালের জুন মাসে দেশটির কর কর্তৃপক্ষ বিবিসির দিল্লি ও মুম্বাই কার্যালয়ে তল্লাশি চালিয়েছিল।
বিবিসির তিন পরিচালকের প্রত্যেককে প্রায় এক লাখ ৩২ হাজার ৪৩০ মার্কিন ডলার জরিমানা করা হয়েছে। তবে, এ বিষয়ে চূড়ান্ত কোনো আদেশনামা এখনও পর্যন্ত পৌঁছায়নি বলে বিবিসি জানায়। তারা আরও বলেন, আদেশের কোনো প্রতিলিপি পেলেই তা সঠিকভাবে পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকারের বিবৃতিতে জানা যায়, ইডি কর্তৃপক্ষের এই কার্যক্রম বিবিসির বিরুদ্ধে চলমান একটি তদন্তের অংশ, যা দেশের আইন অনুসরণ না করার অভিযোগে নেয়া হয়েছে। ভারত সরকারের পক্ষ থেকে এই পদক্ষেপ আরও কিছু আইনি নোটিশ জারি করা হয়েছিল, যেখানে বলা হয়েছে বিবিসি তাদের বিদেশি মালিকানা হ্রাস করতে যাচ্ছে।
এদিকে সরকার এবং সংবাদমাধ্যমের মধ্যে উত্তেজনা মূলত একটি ডকুমেন্টারির কারণে সৃষ্টি হয়, যা ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্ব নিয়ে ছিল। ২০০২ সালে গুজরাট দাঙ্গার সময় মোদির ভূমিকা নিয়ে ওই বিবিসিকে ডকুমেন্টারিতে প্রশ্ন তোলা হয়েছিল। দাঙ্গায় সহস্রাধিক মানুষ প্রাণ হারান, যার মধ্যে অধিকাংশই মুসলিম। এ নিয়ে ভারত সরকার ডকুমেন্টারিটি প্রোপাগান্ডা বলে দাবি করেছে এবং এর সম্প্রচার এবং সামাজিক মিডিয়ায় এর ক্লিপ শেয়ার করতেও নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে।
ভারতীয় সরকারের বিরুদ্ধে বিবিসিকে এই তদন্তের ফলে দেশটির গণমাধ্যম স্বাধীনতা ও সরকারের আধিপত্যের মধ্যে নতুন প্রশ্ন উঠেছে। পাশাপাশি বিবিসির বিরুদ্ধে আরও কিছু অভিযোগ শোনা যাচ্ছে, যার ফলে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কেও প্রভাব পড়তে পারে।
এদিকে, বিবিসি জানিয়েছে যে, তারা সরকারের সঙ্গে ইতিবাচক সম্পর্ক বজায় রেখে আইনগত পদক্ষেপ নেবে। তারা আরও বলেছে যে, সরকারের থেকে আদেশ আসলে তা যথাযথভাবে পর্যালোচনা করবে এবং আইনি সঠিকতা অনুসরণ করবে।
ভারত সরকারের এই পদক্ষেপে আন্তর্জাতিক মিডিয়া এবং বিশেষজ্ঞদের মধ্যে আলোচনা শুরু হয়েছে। অনেকেই এই পদক্ষেপকে স্বাধীন সাংবাদিকতার জন্য হুমকি হিসেবে দেখছেন, যা গণমাধ্যমের স্বাধীনতা এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষায় বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠতে পারে।
পড়ুন:যুক্তরাজ্যে শিশুদের খেলার মাঠ থেকে মিলল ১৭৫টি যুদ্ধবোমা
দেখুন : বন্ধ হয়ে গেলো বিবিসি বাংলার রেডিও সম্প্রচার |
ইম/


