হাসিনার সরকার বাংলাদেশকে বৈদেশিক ঋণের বোঝা চাপিয়ে গেছে। যা অন্তর্বর্তী সরকার থেকে নির্বাচিত সরকারকেও প্রচন্ড চাপে ফেলবে। অথচ বিশ্বের বেশ কয়েকটি ধনী রাষ্ট্রের কাছে ৫ থেকে ৮ ট্রিলিয়ন ডলার পাওনা রয়েছে বাংলাদেশের।
ধনী ও জলবায়ু দূষণকারী দেশগুলোর কাছে ক্ষতি পূরণবাবদ এই বিপুল অর্থ পাওনা রয়েছে বাংলাদেশের। যার পরিমান ৫ দশমিক ৮ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার। অবশ্য, ক্ষতিপূরণ পাওনা ৮ ট্রিলিয়ন ডলারেও দাড়াতে পারে। আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা একশনএইড ইন্টারন্যাশনালের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ ‘উন্নয়নের নামে’ প্রায় ৭৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিদেশি ঋণের ফাঁদে জর্জরিত। অথচ, হিমশিম খাচ্ছে বৈদেশিক মুদ্রার মজুত স্থিতিশীল রাখতে। ১৯৯২ সাল থেকে নিঃসরণ বিবেচনায় দূষণকারী ও ধনী দেশগুলোর কাছ থেকে নিম্ন পরিসরের অনুমানেও বাংলাদেশের ৫ দশমিক ৮ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের জলবায়ু ক্ষতিপূরণ পাওনা রয়েছে। আর মধ্য পরিসরের অনুমান অনুযায়ী, এটি ৭ দশমিক ৯ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার হতে পারে।

ক্ষতিপূরণ বাবদ বিপুল পাওনা অনাদায়ী থাকলেও, হু হু করে বেড়েছে বৈদেশিক দায়দেনা। যা এখন প্রায় ১০০ বিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশের বিদেশি ঋণের কঠিন সংকটের বিষয়টি তুলে ধরা হয় প্রতিবেদনে। প্রতিবেদনে জরুরি ভাবে, এ বিদেশি ঋণ প্রত্যাহার এবং ‘বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ন্যায়বিচারের’ ওপর জোর দেয়া হয়েছে।
একশনএইড বলছে, এ সময়ে জাতীয় রাজস্বের ১৬ দশমিক ৯ শতাংশ অর্থ গেছে বিদেশি ঋণ ফেরতের পেছনে, যেখানে দেশের স্বাস্থ্যখাতে মাত্র ৩ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ এবং শিক্ষাখাতে মাত্র ১১ দশমিক ৭৩ শতাংশ অর্থ খরচ করা হয়।
একশনএইড-এর প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, ধনী দেশ, বেসরকারি ঋণদাতা এবং বৈশ্বিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঋণ পরিশোধ করতে গিয়ে জাতীয় স্বাস্থ্য, শিক্ষা এবং জলবায়ু কর্মসূচিসহ অপরিহার্য সরকারি সেবাসমূহ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বাংলাদেশ। ফলে জীবন যাত্রার মান নিম্মমুখী।
বিপরীতে ধনী দেশগুলো জলবায়ু ক্ষতিপূরণ হিসেবে বাংলাদেশকে ৫ দশমিক ৮ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের জলবায়ু ঋণ পরিশোধ করতে ব্যর্থ হয়েছে। এতে দেশের সার্বিক উন্নয়ন ব্যাহত হচ্ছে বলে তুলে ধরা হয় প্রতিবেদনে।

সমীক্ষার তথ্য তুলে ধরে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালে বিশ্বের ৫৪টি নিম্ন আয়ের দেশ বিদেশি ঋণের ফাঁদে জর্জরিত ছিল। দেশগুলো জাতীয় উন্নয়ন বিসর্জনের বিনিময়ে ধনী দেশগুলোকে ১৩৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণের অর্থ ফেরত দিয়েছে।
অন্যদিকে জলবায়ু দূষণের ক্ষতিপূরণ হিসেবে ধনী দেশগুলো কাছে বাংলাদেশসহ নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলো ১০৭ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার পাওনা বলে সমীক্ষায় তুলে ধরা হয়, যা নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশের বিদেশি ঋণ ১ দশমিক ৪৫ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের তুলনায় ৭০ গুণ বেশি।
একশনএইড জানায়, প্রতিবেদনটিতে ধনী দেশগুলোর জলবায়ু ক্ষতিপূরণ দিতে না পারার ব্যর্থতার বিষয়টি গুরুত্ব পেয়েছে। এতে নিম্ন ও নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশগুলোর বিদেশি ঋণের ফাঁদে পড়তে শুরু করেছে, যা সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর অর্থনীতিকে দূর্বল করে তুলবে।

বাংলাদেশের সরকারকে এই ফাদ এড়াতে পরামর্শ দিয়েছে সংস্থাটি। ঋণ সংকট এবং জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বাংলাদেশের বিদেশি ঋণ প্রত্যাহার এবং ঔপনিবেসিক ঋণ কাঠামো থেকে মুক্তির আহ্বান তাদের।
জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুকি, বিশেষ করে দেশের নারী ও মেয়েদের ওপর এর নেতিবাচক প্রভাবও পর্যালোচনা করা হয়। নারী ও মেয়েরা জলবায়ু সংকটের সম্মুখীন হচ্ছে তার বিশদ চিত্র পাওয়া গেছে এবারের প্রতিবেদনে।।


