গাজীপুরের টঙ্গীর তুরাগ তীরে শুরু হবে বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব, যেখানে দিল্লির নিজামউদ্দিন মারকাজের মাওলানা সাদ আহমদ কান্ধলভী অনুসারীরা অংশ নেবেন। এ উপলক্ষে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ প্রশাসন ঘোষণা দিয়েছে যে, ইজতেমার এই পর্বে যান চলাচল পুরোপুরি স্বাভাবিক থাকবে এবং কোনো রকম যানজটের পরিস্থিতি তৈরি হবে না।
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার ড. নাজমুল করিম খান বৃহস্পতিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে বিশ্ব ইজতেমা ময়দানে পুলিশ কন্ট্রোল রুমে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে এসব কথা জানান।

তিনি বলেন, “আমরা এবারের বিশ্ব ইজতেমায় সারাক্ষণই যান চলাচল চালু রাখতে চাই।
বিআরটি লাইনে অবশ্যই যান চলাচল থাকবে, এবং নিচ দিয়েও যান চলাচল স্বাভাবিক থাকবে।”
কমিশনার আরও জানান, ইজতেমা ময়দান এবং আশপাশের এলাকায় সুষ্ঠু যান চলাচল নিশ্চিত করতে পুলিশ ও স্বেচ্ছাসেবকরা বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। তিনি উল্লেখ করেন, “আমরা সকল ডিউটি প্রাপ্ত কর্মকর্তাদের প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি, রাস্তায় কোনো লোক দাঁড়াবে না। যারা এখানে ডিউটি করছেন তারা নিশ্চিত করবেন যে, রাস্তায় চলাচলকারী সবাই হেঁটে চলবে এবং কোথাও কেউ বসবে না। রাস্তায় যদি চলাচল থাকে, তবে যানও চলতে থাকবে এবং জনসাধারণও স্বস্তিতে চলাচল করতে পারবে।”
বিশ্ব ইজতেমায় যানবাহন পার্কিং স্থান নির্ধারণ
এছাড়া, ইজতেমায় অংশ নিতে আসা মুসল্লিদের জন্য গাড়ি পার্কিংয়ের স্থান নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। পুলিশ কমিশনার জানান, ইজতেমায় অংশ নিতে আসা মুসল্লিদের গাড়ি চারটি স্থানে রাখার অনুরোধ করা হয়েছে। তিনি বলেন, “ইজতেমায় অংশ নিতে আসা যাত্রীদের জন্য চারটি পার্কিং স্পট নির্ধারণ করা হয়েছে—ডেসটিনি মাঠ, টিঅ্যান্ডটি মাঠ, পুবাইল উচ্চ বিদ্যালয় মাঠ এবং ভাওয়াল বদলে আলম কলেজ মাঠ। এসব স্থানে গাড়ি পার্ক করে যাত্রীদের নামিয়ে দেওয়ার পর, গাড়িগুলো ওই মাঠগুলোতে রেখে যাওয়ার অনুরোধ করা হচ্ছে।”
কমিশনার আরও বলেন, “এখানে গাড়ি আনার চেষ্টা করলে যানজট তৈরি হবে, যা আপনার জন্যই অসুবিধার কারণ হবে। তাই জনজীবনে কোনো বিশৃঙ্খলা না সৃষ্টির জন্য, ইজতেমার শেষের পর গাড়ি ওই মাঠগুলো থেকে নিয়ে যান, যেখানে আপনি পার্কিং করেছেন। এতে জনগণের স্বস্তি বৃদ্ধি পাবে এবং ইজতেমা সুন্দরভাবে সম্পন্ন হবে।”
শবেবরাত উপলক্ষে মুসল্লিদের জড়ো হওয়া
এবারের ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব শুরু হচ্ছে পবিত্র শবেবরাতের রাতে, যা মুসলিমদের জন্য একটি বিশেষ ধর্মীয় রজনী। শবেবরাতের রাতে মুসল্লিরা ময়দানে জড়ো হচ্ছেন যাতে তারা অধিক সওয়াব হাসিল করতে পারেন। গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ এ বিষয়ে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা তৈরি না হওয়ার জন্য সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে।
কমিশনার ড. নাজমুল করিম খান বলেন, “শবেবরাতের রাতে ইজতেমা ময়দানে মুসল্লিদের জমায়েতের কারণে নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করা হয়েছে। পুলিশ, র্যাব, এবং অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা মাঠের আশপাশে নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে।”
বিশ্ব ইজতেমা উপলক্ষে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ একাধিক নিরাপত্তা পয়েন্ট স্থাপন করেছে এবং সবাইকে জানানো হয়েছে যে, যেকোনো বিশৃঙ্খলা এড়াতে সবাইকে নিয়ম মেনে চলতে হবে। ইজতেমায় অংশ নিতে আসা মুসল্লিদের পাশাপাশি নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা জনগণের স্বস্তির জন্য সব ধরণের পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।
জনসাধারণের জন্য বিশেষ নির্দেশনা
এদিকে, পুলিশের পক্ষ থেকে সাধারণ জনগণের জন্যও কিছু নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তারা জনগণকে জানিয়ে দিয়েছেন যে, গাড়ি নিয়ে ইজতেমা ময়দানে আসার সময় পার্কিং স্থানে গাড়ি রেখে যাত্রীদের নামিয়ে দেবেন এবং গাড়ি যাত্রীরা ওই স্থান থেকে চলে যাবেন। এতে করে যানজট এবং অন্যান্য সমস্যা এড়ানো যাবে।
কমিশনার ড. নাজমুল করিম খান বলেন, “আমরা আশা করছি যে, এবারের ইজতেমা সুষ্ঠু এবং শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হবে। পুলিশ প্রশাসন এ বিষয়ে সর্বাত্মক চেষ্টা করবে যাতে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না হয়।”
বিশ্ব ইজতেমা পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম ধর্মীয় জমায়েত এবং এটি বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে আসা মুসল্লিদের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় অনুষ্ঠান। গাজীপুরের টঙ্গী অঞ্চলে এটি প্রতি বছর অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে মুসল্লিরা ইবাদত-বন্দেগী ও ধর্মীয় আলোচনা শুনতে আসেন।
এবারের বিশ্ব ইজতেমায় সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করতে পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনী প্রস্তুত রয়েছে এবং তারা আশা করছেন যে, সবার সহযোগিতায় ইজতেমা সফলভাবে সম্পন্ন হবে।
পড়ুন:শান্তি ও কল্যাণ কামনায় আখেরি মোনাজাতে শেষ হলো শুরায়ে নেজামের বিশ্ব ইজতেমা
দেখুন:ইজতেমা: পানি ও শৌচাগারের অভাবে দুর্ভোগে মুসল্লিরা |
ইম/