গত মঙ্গলবার লেবাননের রাজধানী বৈরুতে এক ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। বিস্ফোরণটি ঘটেছিল একটি গুদাম বা ওয়্যারহাউসে। যেখানে বিপুল পরিমাণে একটি বিশেষ রাসায়নিক পদার্থ মজুত করে রাখা ছিল, যারা নাম এ্যামোনিয়াম নাইট্রেট। স্থানীয় লোকজন লোকজন বৈরুতের নানা জায়গা থেকে মোবাইলে বিস্ফোরণের ভিডিও করছিল। প্রথম একটি বিস্ফোরণ থেকে সাদা ধোঁয়ার কুণ্ডলি আকাশে উঠছিল। আর ঠিক তখনই তাদের চোখের সামনে ঘটে দ্বিতীয় বিস্ফোরণটি। একটি বিশাল আগুনের গোলা, যা বাতাসের ঝাপটায় তৈরি হয় ব্যাঙের ছাতার মতো। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই তা মিলিয়ে যায়। এরপরই দেখা যায় পাক খেয়ে উঠছে লাল রঙের ধোঁয়ার কুণ্ডলি। পুরো ব্যাপারটা ঘটে মাত্র ৪ সেকেণ্ডের মধ্যে। এই লাল রঙের ধোঁয়ার কুণ্ডলি থেকেই বোঝা যায় এটি অ্যামোনিয়াম নাইট্রেটের বিস্ফোরণ।
এটি এমন একটি রাসায়নিক পদার্থ যা মূলত সার উৎপাদনে ব্যবহৃত হয়। এছাড়া খনিতে বিস্ফোরক হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। তবে অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট নিজে কোন বিস্ফোরক পদার্থ নয়, তবে বিশেষ কিছু অবস্থায় তা বিস্ফেরকে পরিণত হতে পারে। বরং একে বলা যায় “অক্সিডাইজার অর্থাৎ যা আগুনে আরো অক্সিজেন টেনে আনে এবং আগুন আরো বেশি জ্বলে ওঠে।
আগুনের সংস্পর্শে এলে তা অত্যন্ত সক্রিয় বিস্ফোরক হিসেবে কাজ করে। আর বিস্ফোরিত হলে অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট থেকে নাইট্রোজেন অক্সাইড এবং অ্যামোনিয়ার মত বিষাক্ত গ্যাস বের হয়। এ কারণে অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট মজুদের জন্য কঠোর নিয়ম মেনে চলতে হয়। বিশেষ করে মজুদ স্থানকে এমনভাবে নিরাপদ করতে হয় যেন আগুন না লাগে।
রাশিয়ান মালিকানাধীন জাহাজটিতে ছিল ২ হাজার ৭৫০ টন অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট। এই রাসায়নিক সাধারণত আসে ছোট গোল টুকরোর আকারে। কৃষিকাজে সারের জন্য এই রাসায়নিক ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। তবে জ্বালানি তেলের সঙ্গে মিশিয়ে এটা দিয়ে বিস্ফোরক তৈরি করা যায়, যা খনিতে বিস্ফোরণের কাজে এবং নির্মাণ শিল্পে ব্যবহারের প্রচলন রয়েছে। কিন্তু কিভাবে এতে আগুন লাগে তা এখনো স্পষ্ট নয়। এই বিশাল পরিমাণ ভয়ানক দাহ্য পদার্থ দীর্ঘ সময় ধরে কোন নিরাপদ ব্যবস্থা না নিয়ে এভাবে ফেলে রাখা হল তা নিয়ে দেশটির জনগণ ক্ষোভে ফুঁসছে।
পূর্ব ভূমধ্যসাগর দিয়ে যাবার সময় রোসাস জাহাজটিতে কিছু কারিগরি ত্রুটি ধরা পড়ে। ফলে জাহাজটি বৈরুত বন্দরে নোঙর করতে বাধ্য হয়। এ ঘটনায় তদন্ত কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত ওই অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট গুদামজাত এবং তা রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের গৃহবন্দী করার নির্দেশ দিয়েছে দেশটির সরকার।
তাজ//
Leave a Reply