27.7 C
Dhaka
শনিবার, এপ্রিল ১৯, ২০২৫

কমছে বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি, বাড়ছে মুদ্রাস্ফীতি

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আগ্রাসী বাণিজ্য নীতির প্রভাব পড়ছে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে। সম্প্রতি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও উন্নয়ন সংস্থা (ওইসিডি) সতর্ক করেছে যে, ট্রাম্পের নীতিমালা বৈশ্বিক অর্থনীতিকে বিভক্ত করছে এবং সাম্প্রতিক প্রবৃদ্ধির অগ্রগতি ও মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের প্রচেষ্টাকে বাধাগ্রস্ত করছে। এর ফলে, বিশ্ব অর্থনীতির ভবিষ্যত প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস কমিয়ে দেওয়া হয়েছে এবং ভবিষ্যতে আরও বড় ঝুঁকি দেখা দিতে পারে বলে বলা হচ্ছে।

ট্রাম্প

ওইসিডি জানিয়েছে, বৈশ্বিক অর্থনীতিতে ট্রাম্প প্রশাসনের নীতির কারণে যুক্তরাষ্ট্র,

কানাডা এবং মেক্সিকোর অর্থনীতি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। বিশেষ করে, ট্রাম্পের আমদানি শুল্ক বাড়ানোর পরিকল্পনার ফলে, বিশ্ব বাণিজ্য ব্যবস্থায় অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি হতে পারে। সংস্থাটি ২০২৩ ও ২০২৪ সালের বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস কমিয়ে ৩ দশমিক ১ শতাংশ এবং ৩ দশমিক ২ শতাংশ নির্ধারণ করেছে, যা পূর্বে ছিল ৩ দশমিক ৩ শতাংশ। অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্পের বাণিজ্য নীতির কারণে বিশ্ব অর্থনীতির গতি স্লথ হতে পারে এবং মুদ্রাস্ফীতির চাপও বেড়ে যেতে পারে।

ওইসিডি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বৈশ্বিক অর্থনীতি এখনও বড় ঝুঁকির মুখে রয়েছে এবং অর্থনৈতিক বিভাজন বাড়লে প্রবৃদ্ধির গতি আরও কমবে। যদি দেশগুলো একে অপরের সঙ্গে সহযোগিতার মাধ্যমে বাণিজ্য সমস্যার সমাধান না খোঁজে, তাহলে পাল্টাপাল্টি বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞার ফলে পরিস্থিতি আরও জটিল হতে পারে। সংস্থাটি এই সতর্কবার্তা দিয়েছে যে, অতিরিক্ত কঠোর বাণিজ্য নীতি জীবনযাত্রার মানের ওপর গুরুতর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

এদিকে, ওইসিডি আরও পূর্বাভাস দিয়েছে যে, যদি ট্রাম্প পরিকল্পনা অনুযায়ী কানাডা ও মেক্সিকো থেকে আমদানি করা প্রায় সব পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেন, তবে এসব দেশের অর্থনীতি ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হবে। কানাডার প্রবৃদ্ধি প্রায় অর্ধেক কমে যেতে পারে, এবং মেক্সিকো গভীর মন্দায় পড়তে পারে, যা ২০২৫ সালে দেশটির মোট উৎপাদন ১ দশমিক ৩ শতাংশ সংকুচিত হবে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাসও কমানো হয়েছে। ২০২৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস ২ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২ দশমিক ২ শতাংশ করা হয়েছে এবং ২০২৬ সালের জন্য পূর্বাভাস ২ দশমিক ১ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১ দশমিক ৬ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে।

বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি চীনের প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাসও কমানো হয়েছে। ২০২৫ সালে চীনের প্রবৃদ্ধি ৪ দশমিক ৮ শতাংশ থেকে কমে ৪ দশমিক ৪ শতাংশ হতে পারে বলে বলা হয়েছে। এর পাশাপাশি, যুক্তরাজ্যের মুদ্রাস্ফীতি ২০২৫ সালে ২ দশমিক ৭ শতাংশ এবং ২০২৬ সালে ২ দশমিক ৩ শতাংশ থাকতে পারে, বলে সংস্থাটি জানিয়েছে।

এই পরিস্থিতিতে, যুক্তরাজ্যের অর্থমন্ত্রী র্যা চেল রিভস বলেছেন, “বিশ্ব বাণিজ্য ব্যবস্থায় অনিশ্চয়তা বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং এর প্রভাব বিশ্বব্যাপী অনুভূত হচ্ছে।” তাঁর মতে, যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য নীতির ফলে বিশ্ব অর্থনীতি আরও অস্থিতিশীল হতে পারে, যা দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলবে।

এদিকে, বিশ্ব অর্থনীতির এই অবনতির শঙ্কা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, কোভিড-১৯ মহামারি, এবং বিশ্বজুড়ে supply chain সমস্যা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক সহযোগিতা অত্যন্ত জরুরি। যদি দেশগুলো একে অপরের বিরুদ্ধে বাণিজ্য যুদ্ধ শুরু করে, তাহলে এটি বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধিকে আরও ক্ষতিগ্রস্ত করবে এবং জীবনযাত্রার মানের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

পড়ুন: চলতি অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৪ শতাংশ: বিশ্বব্যাংক

দেখুন: ‘চলতি অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি কমবে, বাড়বে মূল্যস্ফীতি’ |

ইম/

বিজ্ঞাপন

আরও পড়ুন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

বিশেষ প্রতিবেদন