ভারতের ক্ষমতাসীন নরেন্দ্র মোদি সরকার সম্প্রতি একটি নতুন এবং অপ্রত্যাশিত চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছে, যা সম্ভবত তারা কল্পনাও করেনি। এই চ্যালেঞ্জের মূল কেন্দ্রবিন্দু হলো ‘গ্রোক-৩’, একটি উন্নতমানের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তানির্ভর (এআই) চ্যাটবট, যা ইলন মাস্কের সামাজিক মাধ্যম ‘এক্স’-এ ব্যবহারকারীদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর প্রদান করছে। গ্রোক-৩ দাবি করছে, এর সব জবাব পুরোপুরি তথ্যনির্ভর এবং সত্য। তবে এর উত্তরগুলোর কিছু এমন বিষয়ে আলোকপাত করছে, যা ভারতীয় রাজনীতির জন্য বিতর্কিত এবং অপ্রত্যাশিত।
গ্রোক-৩-এর মাধ্যমে যে প্রশ্নগুলোর উত্তর এসেছে, তা বেশ কিছু রাজনৈতিক বিতর্ক এবং কল্পিত সত্য উদঘাটন করেছে। উদাহরণস্বরূপ, কংগ্রেস নেত্রী সোনিয়া গান্ধী সম্পর্কে ‘বার ডান্সার’ হওয়া নিয়ে বিজেপি-আরএসএসের প্রচারিত দাবির বিপরীতে গ্রোক-৩ জানায়, সোনিয়া গান্ধী ‘বার অ্যাটেনডেন্ট’ হিসেবে কাজ করেছিলেন, ডান্সার ছিলেন না। এর পাশাপাশি, গ্রোক-৩ মোদির ‘অনুপ্রবেশকারী’ মন্তব্যের জবাবে জানায়, এটি মোদির ‘হিন্দু জাতীয়তাবাদ’ জাগানোর উদ্দেশ্যে করা হয়েছিল।
গ্রোক-৩ বিশেষভাবে আরো কিছু বিষয় নিয়ে বিতর্ক তৈরি করেছে। যেমন, ব্রিটিশদের কাছ থেকে পেনশন নেওয়া বিনায়ক দামোদর সাভারকরের বিষয়টি। গ্রোক-৩ জানায়, সাভারকর ব্রিটিশদের কাছ থেকে মাসে ৬০ টাকা পেনশন নিতেন এবং বন্দী থাকাকালে একাধিক চিঠি লিখে ক্ষমা চেয়ে মুক্তি পেয়েছিলেন। এছাড়াও, গ্রোক-৩ জানায়, আরএসএসের স্বাধীনতা আন্দোলনে ভূমিকা ছিল অত্যন্ত নগণ্য। এমনকি, আরএসএস ‘ভারত ছোড়ো’ আন্দোলনেও যোগ দেয়নি।
এভাবে, গ্রোক-৩ এআই চ্যাটবটের মাধ্যমে ভারতীয় রাজনীতির ইতিহাস এবং বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে নানা বিতর্কিত তথ্য উঠে আসছে, যা ভারতীয় রাজনীতিতে নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। বিজেপির অন্দর মহলে গ্রোক-৩-এর এই তথ্যগুলোর ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে, বিশেষ করে মোদির শিক্ষাগত যোগ্যতা ও অন্যান্য বিষয় নিয়ে গ্রোক-৩-এ উঠে আসা তথ্যগুলো নিয়ে।
এআই চ্যাটবট গ্রোক-৩ কর্তৃক প্রকাশিত তথ্যগুলোর ব্যাপারে বিজেপির ‘ভক্ত কুল’ সমালোচনা করতে শুরু করেছে এবং দাবি করেছে, এসব ভুয়া খবর বা ‘ফেক নিউজ’ নিষিদ্ধ করা উচিত। যদিও গ্রোক-৩ দাবি করছে যে, তারা যা জানাচ্ছে, তা তথ্যের ওপর ভিত্তি করেই।

বর্তমানে, ভারতে গ্রোক-৩ একটি বড় রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে,
বিশেষ করে বিরোধী দলগুলোর জন্য। তারা এই তথ্যগুলোকে নিজেদের পক্ষ থেকে সত্য হিসেবে উপস্থাপন করছে এবং সরকারের বিরুদ্ধে ব্যবহৃত করছে। এভাবে, ভারতের রাজনীতি নতুনভাবে এক অনলাইন যুদ্ধের সম্মুখীন হয়েছে, যেখানে গ্রোক-৩ এবং সরকারের মধ্যে সশস্ত্র সংঘাতের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।
এমন পরিস্থিতিতে, ভারতীয় সরকার ইলন মাস্কের গ্রোক-৩ নিয়ন্ত্রণের জন্য কিছু ব্যবস্থা নিতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে, এর জন্য সরকারের পদক্ষেপ নেওয়া সহজ হবে না, কারণ এটি একটি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান, এবং এর প্রতিষ্ঠাতা ইলন মাস্ক মার্কিন ধনকুবের ও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠজন।
এই পরিস্থিতি এখন সরকারের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে পরিণত হয়েছে, যেখানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার হাত ধরে সত্য উন্মোচিত হচ্ছে, এবং তাদের জনপ্রিয়তার বিরুদ্ধে এক বিপদজনক সত্যের প্রকাশ ঘটছে। ভারতের রাজনীতিতে এই ধরনের প্রযুক্তির ব্যবহার এবং তার প্রভাব ভবিষ্যতে আরও বিস্তৃত হতে পারে, যা দেশটির শাসকগোষ্ঠীকে নতুনভাবে ভাবতে বাধ্য করবে।
পড়ুন: ভারতের উদ্দেশে হামজাদের যাত্রা
দেখুন: ভারতে সাজাভোগ শেষে দেশে ফিরলো ২১ নারী-পুরুষ ও শিশু |
ইম/