এখনও দেশের মানুষ মনে করে আবু সাঈদের পুলিশের সামনে বুক চিতিয়ে দেয়ার চিত্র, ‘ভাই পানি লাগবে পানি’ বলতে বলতে মাটিতে লুটিয়ে পড়া মুগ্ধ জুলাই মাসের এক অনন্তকালের সাক্ষী। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে স্বৈরাচার শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে যাওয়ায় এবং ন্যায় ও সত্যের পক্ষে থাকায় প্রাণ দিতে হয়েছে অসংখ্য শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষকে। কোল খালি হয়েছে অসংখ্য মায়ের, কেউ হারিয়েছেন তার ভাই, কেউবা তার ছেলে, কেউ হারিয়েছে প্রিয় স্বামী তো কেউ হারিয়েছে তার বন্ধুকে। স্বজনদের এই ত্যাগ কখনই পৃথিবীর অন্য কোন বস্তুর সাথে তুলনা করা যাবে না।
১৯ জুলাইয়ের পর থেকেই নিহত সৈকতের বাবা প্রতিদিন একটি রাস্তায় এসে হাঁটাহাঁটি করেন, যেখানে তার ছেলে হাঁটাহাঁটি করত। সেখানেই দাঁড়িয়ে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে সৈকতের বাবা এবং সৈকতকে খোঁজার চেষ্টা করে।
মোহাম্মাদ তামিম যার বয়স ১৬ কিংবা ১৭। আন্দোলনে গিয়ে তামিম তার এক পা হারিয়ে ফেলে। তাই যেই বয়সে তামিমের ছুটে বেড়ানোর কথা, ফুটবল খেলার কথা, সেই বয়সে তাকে থাকে হচ্ছে ঘরবন্দি! কারণ, তার যে একটি পা নেই!
এক মায়ের আহাজারি শুনবেন? ‘একটি প্রতিবন্ধী কিশোর, সাত বছরের বাচ্চা যদি রাস্তায় নামতে পারে, যদি সংগ্রামে নামতে পারে, তাহলে আমি কেন বসে থাকব?একদিন মরতেই হবে, আমি মিছিলে যাচ্ছি মা।’ কথাগুলো চিঠিতে লিখেছিলেন শহীদ শাহরিয়ার খান আনাস। চিঠির প্রতিটি লেখা পড়ে শোনান তার শোকার্তু মা। বুক ফেটে কান্নাজড়িত গলায় সন্তান হারানো সেই মা আর্তনাদের সুরে বললেন, ‘আমার সন্তানের বুকে গুলি লাগছে, আর ছিদ্রটা হইছে আমার কলিজায়’।
এই রক্তক্ষয়ী জুলাই, ও শত শত শহিদের গল্পকে তুলে ধরার চেষ্টা করেছে ডকুমেন্টারি ‘জুলাই অনির্বাণ’। জুলাইয়ের স্মৃতিগুলোকে তরতাজা করে রাখতেই ডকুমেন্টারিটি নির্মাণ করার উদ্দেশ্য।
বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) রাতে অন্তর্বর্তী সরকার তথা প্রধান উপদেষ্টার তরফ থেকে ডকুমেন্টারিটি প্রকাশ্যে আনা হয়। এছাড়াও ইউটিউব ও বিভিন্ন গণমাধ্যমে আলাদা করে প্রকাশ করা হয় এই ডকুমেন্টারিটি। যা দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন দেশের অসংখ্যা মানুষ।
ডকুমেন্টারিটি দেখে এক নেটিজেন লিখেছেন, কত প্রাণ হলো বলিদান, লেখা আছে অশ্রুজলে। ভিডিওটা দেখে কষ্টে চোখ দুটো ভিজে যাচ্ছে বারবার। এই কষ্ট বুকে নিয়েই এ দেশটার জন্য আমাদের কাজ করে যেতে হবে। আবার নতুন করে স্বপ্ন দেখতে হবে, স্বপ্ন দেখাতে হবে।
আরেকজন লিখেছেন, দেখছি আর অঝোরে কাঁদছি! এতো যেন আমার ভাই আমার পরিবার। তোমরা সবাই ভালো থেকো ফুলের বাগানে। জান্নাতের ফুল।
আরও এক নেটিজেনের লিখেছেন, পুরো ভিডিওটা দেখেছে অথচ চোখের পানি ঝরে নি এমনটা মনে হয় সম্ভব না। বিশেষ করে শহিদ ছেলের চিঠি পড়তে থাকা অশ্রুসিক্ত মা। কত ক্ষত তাদের পরিবারগুলোতে, ভাবতেই নিশ্বাস ভারি হয়ে যায়। জান্নাতে সুখে থাকুক আমার শহিদ ভাইয়েরা।
এছাড়া, ডকুমেন্টারিটি নিয়ে কথা বলেছেন নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। এক ফেসবুক পোস্টে শেয়ার করে তিনি লিখেছেন, ক্ষমতার বিরুদ্ধে মানুষের সংগ্রাম হল ভুলে যাওয়ার বিরুদ্ধে স্মৃতির সংগ্রাম’- মিলান কুন্ডেরা।
তিনি আরও লেখেন, আমরা ভুলব না। আমরা আমাদের বীরদের গল্প, আমাদের সংগ্রামের সম্মিলিত স্মৃতি নিয়ে যেতে থাকব! আপনার প্রোপাগান্ডা মেশিন যত বড়ই হোক না কেন আপনি সফল হবেন না, আপনি মিথ্যা আখ্যা তৈরি করে আপনার হাত ধুতে পারবেন না। সত্য বারবার বলা হবে।
এনএ/