যুক্তরাষ্ট্র আদালতের নির্দেশ উপেক্ষা করে ভেনেজুয়েলার ২৩৮ নাগরিকসহ মোট ২৬১ ব্যক্তিকে এল সালভাদরে পাঠিয়েছে। ট্রাম্প প্রশাসনের এই পদক্ষেপের কারণে ব্যাপক সমালোচনা সৃষ্টি হয়েছে, বিশেষ করে ভেনেজুয়েলা এবং বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন থেকে। স্থানীয় সময় রোববার (১৬ মার্চ) এল সালভাদরের প্রেসিডেন্ট নায়েব বুকেলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, ভেনেজুয়েলার ট্রেন ডি আরাগুয়ার গ্যাংয়ের ২৩৮ সদস্যসহ ২৬১ জন ব্যক্তি সকাল ৯টার দিকে এল সালভাদরে পৌঁছেছেন। এসব ব্যক্তিকে এল সালভাদরের একটি উচ্চ নিরাপত্তাসম্পন্ন কারাগারে রাখা হবে।
এদিকে, গত মাসে যুক্তরাষ্ট্র এবং এল সালভাদরের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, যার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত অন্যান্য দেশের অপরাধীদের এল সালভাদরের কারাগারে রাখা হবে। এই চুক্তির অধীনে যুক্তরাষ্ট্র এল সালভাদরকে অর্থ প্রদান করবে। প্রতিবেদনে বলা হয়, ট্রেন ডি আরাগুয়ার ৩০০ অভিযুক্ত সদস্যকে এক বছর জেলে রাখার জন্য এল সালভাদরকে ৬০ লাখ ডলার দিতে সম্মত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।

যদিও যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপ কিছু মানুষের কাছ থেকে সমালোচনা অর্জন করেছে, বিশেষ করে ভেনেজুয়েলা,
যারা দাবি করেছে যে, যুক্তরাষ্ট্র এই পদক্ষেপের মাধ্যমে তাদের নাগরিকদের অন্যায়ভাবে অপরাধী সাব্যস্ত করছে। ভেনেজুয়েলার এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “এটি দাসপ্রথা থেকে শুরু করে নাৎসি বন্দিশিবিরের ভয়াবহ স্মৃতিকে উসকে দিয়েছে, যা মানবতার ইতিহাসের সবচেয়ে অন্ধকার অধ্যায়।”

যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপের পিছনে একটি পুরোনো আইন, এলিয়েন এনেমিস অ্যাক্ট (ভিনদেশি শত্রু আইন) ব্যবহৃত হয়েছে। ১৭৯৮ সালের এই আইন যুদ্ধকালীন অবস্থায় ব্যবহার করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছিল, যেখানে অন্য দেশের দ্বারা সংঘটিত ‘শত্রুতাপূর্ণ কর্মকাণ্ড’কে যুদ্ধের সমতুল্য হিসেবে গণ্য করা হয়। গত শুক্রবার এই আইন প্রয়োগের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্দেশ দেন, তবে ১৭৯৮ সালের আইনকে ১৪ দিন বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছেন ওয়াশিংটনের কেন্দ্রীয় সরকার বিচারক জেমস বোসবার্গ।
এল সালভাদরের প্রেসিডেন্ট নায়েব বুকেলে এই বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি পোস্ট দেন, যেখানে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের বিচারকের নির্দেশ নিয়ে কিছুটা ঠাট্টার সুরে বলেন, “উফ… অনেক দেরি হয়ে গেছে”। তিনি পোস্টের সঙ্গে একটি ভিডিও যুক্ত করেন, যাতে বিমান থেকে লোকজনকে সশস্ত্র কর্মকর্তাদের দ্বারা নেওয়া হচ্ছে।
এল সালভাদরের প্রেসিডেন্ট আরও জানান, যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রত্যর্পণ করা ব্যক্তিদের তাৎক্ষণিকভাবে এক বছরের জন্য সন্ত্রাসবাদ বন্দিশিবিরে (সেকট) পাঠানো হয়েছে। প্রয়োজনে তাদের আটকাদেশ বাড়ানো হতে পারে।

এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও এই চুক্তিকে ‘অভূতপূর্ব এবং অসাধারণ অভিবাসন চুক্তি’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। এই পদক্ষেপটি যুক্তরাষ্ট্রের জন্য একটি নতুন দৃষ্টিকোণ হতে পারে, যেখানে অভিবাসীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধকালীন আইনের ব্যবহার তীব্র বিতর্কের সৃষ্টি করেছে।
এভাবে, যুক্তরাষ্ট্রের নতুন পদক্ষেপ এবং এল সালভাদরের সঙ্গে চুক্তি একদিকে যেমন অপরাধীদের জন্য কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণ করছে, অন্যদিকে মানবাধিকার এবং আন্তর্জাতিক আইনের সুরক্ষা প্রশ্নে বিতর্কের সৃষ্টি করছে।
পড়ুন: টানা তৃতীয়বার ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট হলেন মাদুরো
দেখুন: সোনার চেয়েও বেশি কন ডমের দাম |
ইম/