দুনিয়াতে আল্লার কাছে সমর্পিত হওয়ার স্থান হলো মসজিদ। মাওলানা জালাল উদ্দিন রুমি বলেছিলেন, ‘‘কেবল তখনই পরম প্রশান্তির সাক্ষাৎ ঘটে যখন আল্লাহর সাথে তুমি সম্পূর্ণরূপে একাত্ম হও।’’
মসজিদ স্থাপত্য একটি কাঠামোগত ধারণা যেখানে মুসলমান ধর্মাবলম্বীরা এক সঙ্গে বা পৃথক পৃথক ভাবে তাদের নিত্যদিনের নামায আদায় করে থাকেন।
বাংলাদেশের প্রাচীন ইতিহাস থেকে উদ্বুদ্ধ হয়েই মেয়র হানিফ মসজিদের রূপরেখা করা হয়েছে। স্থপতি রফিক আজম। আজিমপুরের পুরাতন কবরস্থান সংলগ্ন এই মসজিদটির নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে ২০১৮ সালে।
এখানে দেখা মেলে লম্বা মিনারের, দেখা মেলে বাহারি ইটের কাজের। অতীতের নির্যাসকে সঙ্গে নিয়ে এতে যুক্ত করা হয়েছে স্থাপত্যের আধুনিক চিন্তা চেতনা যা বর্তমান বাংলাদেশের স্বরূপ নির্ণয় করে।
দক্ষিণে ব্যস্ততম রাস্তা জাগতিক ভাবকে ফুটিয়ে তোলে। সেখান থেকে প্রবেশদ্বারেই থাকা বিশাল শান জাগতিক মানুষের সাথে পরমের সংযোগ ঘটায় আর জাগতিক মোহ থেকে বিচ্যুত করে।
দুই দিকের দুই ভবনের মাঝে এই বিশাল শান যেন নশ্বর জীবনের দোদুল্যমান রূপটিকেই ফুটিয়ে তোলে। এ-পার থেকে ও-পারে যাওয়ার জন্য বান্দার প্রস্তুতি বারবার স্মরণ করিয়ে দেয় এই শান। শানের উপর দিয়ে চলে যাওয়া পুলটিও আমাদের পুলসিরাতের কঠিন যাত্রার কথা ভাবিয়ে দেয়। প্রতীকী অর্থে দৃশ্যমান এই পুলটির জাগতিক অস্তিত্ব তাই যেকোন মুসলিমের কাছে জাগরণের বার্তাস্বরূপ। তাছাড়া শান থেকে আজিমপুর কবরস্থানকে এই পুলের নিচ দিয়ে এমন চমৎকার একটি সুচিন্তিত ফ্রেমের মাঝ দিয়ে দেখা যায়- যেন তা মৃত্যুকে গ্রহণ করার মধ্য দিয়ে মানব মনের পবিত্রতাকে জাগিয়ে তুলতে সক্ষম হয়।
২৪ কাঠা পরিমাণ জমিতে এই এটি নির্মিত হয়েছে। নারী-পুরুষের আলাদা নামাযের ও ওযু করার ব্যবস্থা রয়েছে। উন্নত মানের টয়লেট সুবিধার পাশাপাশি মসজিদটি শীততাপ নিয়ন্ত্রিত। ইমাম, মুয়াজ্জিন এবং খাদেমের থাকার ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে। এছাড়াও রয়েছে লিফটের ব্যবস্থা যাতে করে শারীরিকভাবে অসুস্থ সকল মুসল্লি তাঁদের নামায আদায় করতে পারেন।
উঁচু মিনারের মাধ্যমে এলাকার সকলের উদ্দ্যেশ্যে আযানের ধ্বনি পৌঁছানর ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে। এছাড়াও রয়েছে পার্কিং এর সুবিধা, যেখানে প্রায় ৩৫টি গাড়ী রাখা যাবে। এবং ২৪ ঘন্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করা হয়েছে। মসজিদটিতে প্রায় দুই হাজার মুসল্লি এক সাথে নামাজ আদায় করতে পারে। বিশেষ দিন উপলক্ষ্যে বর্ধিত মুসল্লিদের কথা ভেবে বিশাল শান নকশা করা হয়েছে যা আমাদের ঐতিহ্যেরই একটি নিদারুন অংশ।