মুজিবনগর সরকারের নাম পরিবর্তনের কোনো ইচ্ছা বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের নেই বলে জানিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা লে. কর্নেল ফারুক ই আজম (বীর প্রতীক)। তিনি বলেছেন, “ইতিহাস কখনো মোছা যায় না। ইতিহাসকে ইতিহাসের জায়গায় থাকতে হয়। পরবর্তী নির্বাচিত সরকার কী সিদ্ধান্ত নেবে, সেটি তাদের বিষয়।”
বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস উপলক্ষে মেহেরপুরের স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। ভোর ৫টা ৪৩ মিনিটে জাতীয় সংগীতের সঙ্গে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে দিবসটির আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। এরপর মেহেরপুর জেলা প্রশাসন, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় ও মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের পক্ষ থেকে স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়।
এ সময় উপদেষ্টা ফারুক ই আজম বলেন, “মুজিবনগর সরকার প্রবাসী বা অস্থায়ী নয়।
এই সরকারের নেতৃত্বেই দেশ স্বাধীন হয়েছে। তাই এটি একটি সাংবিধানিক সরকার। এ সরকারের শপথগ্রহণ ছিল জাতির জন্য গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়। এই ইতিহাস চিরকাল শ্রদ্ধাভরে স্মরণে রাখা উচিত।”
তিনি আরও জানান, মুজিবনগর আম্রকাননের ভাস্কর্য ভাঙচুরের ঘটনায় পুরো এলাকা ঘুরে দেখা হয়েছে। দ্রুত নতুন ভাস্কর্য স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হবে, তবে ইতিহাসের সত্যনিষ্ঠতার ভিত্তিতে। “ভুল কিছু আরোপ করা হবে না, এবং সঠিক ইতিহাস কখনো মুছে ফেলা হবে না,” বলেন উপদেষ্টা।
ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের প্রসঙ্গে ফারুক ই আজম বলেন, “সত্যিকারের মুক্তিযোদ্ধারা প্রতিনিয়ত বিব্রত হচ্ছেন। অনেকেই মুক্তিযোদ্ধা না হয়েও পরিচয় দিচ্ছেন, যা গ্লানিকর। আমরা প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা তৈরিতে কাজ করছি। তবে, বর্তমানে প্রায় ২,৭০০ মামলা আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। মামলাগুলোর নিষ্পত্তির পরেই সঠিক তালিকা চূড়ান্ত করা সম্ভব হবে।”
দিবসের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপদেষ্টা ফারুক ই আজম। বিশেষ অতিথি ছিলেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ইসরাত জাহান চৌধুরী, খুলনা বিভাগীয় অতিরিক্ত কমিশনার হুসাইন শওকত, মেহেরপুর জেলা পুলিশ সুপার মাকসুদা আক্তার খানম। এছাড়া স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তা ও বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ অনুষ্ঠানে অংশ নেন।
অনুষ্ঠানে ১৭ এপ্রিল ১৯৭১ সালে গার্ড অব অনার প্রদানকারী দুই আনসার সদস্য সিরাজ উদ্দিন ও আজিমউদ্দিনকে সম্মাননা হিসেবে ক্রেস্ট প্রদান করা হয়। পরে উপদেষ্টা স্মৃতি কমপ্লেক্স ও আম্রকাননের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখেন।
সরকারকে “আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সাংবিধানিক সরকার” হিসেবে উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, “এই সরকার আমাদের মুক্তিযুদ্ধকে সংগঠিত করেছে, বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরেছে। ১৭ এপ্রিল জাতির ইতিহাসে গৌরবোজ্জ্বল দিন হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে।”
পড়ুন: মুজিবনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গ্রেপ্তার
দেখুন: ঐতিহাসিক মুজিবনগর মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি কমপ্লেক্স
ইম