২১/০৬/২০২৫, ২৩:১৭ অপরাহ্ণ
28 C
Dhaka
২১/০৬/২০২৫, ২৩:১৭ অপরাহ্ণ

মেহেরপুরে ইউনিয়ন বিএনপির কমিটি গঠন নিয়ে কোন্দল: আদালতের নিষেধাজ্ঞা

মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার তেঁতুলবাড়িয়া ইউনিয়ন বিএনপির নবগঠিত কমিটি নিয়ে অভ্যন্তরীণ কোন্দল চূড়ান্ত রূপ নিয়েছে। গঠনতন্ত্র লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে স্থানীয় তিন নেতা আদালতের দ্বারস্থ হলে সিনিয়র সহকারী জজ–২ আদালত নতুন কমিটির কার্যক্রমে অন্তর্বর্তীকালীন নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন। একইসঙ্গে ৯ জন নেতাকে কারণ দর্শাতে নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক।

রবিবার (১৮ মে) তেঁতুলবাড়িয়া ইউনিয়ন বিএনপির তিন নেতা—জাহাঙ্গীর আলম, শাহদুল করিম ও ছানোয়ার হোসেন—মেহেরপুর সিনিয়র সহকারী জজ–২ আদালতে একটি মামলা (নম্বর: ৭১/২৫) দায়ের করেন। মামলায় অভিযোগ আনা হয়, বিএনপির গঠনতন্ত্রের ৬(খ) ধারা লঙ্ঘন করে কমিটি গঠন করা হয়েছে।

গতকাল মঙ্গলবার (২০ মে) বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে মামলার শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। শুনানি শেষে সিনিয়র সহকারী জজ–২ মো. মাসুদ রানা নতুন কমিটির সকল কার্যক্রমে স্থগিতাদেশ দেন এবং নবগঠিত কমিটির সংশ্লিষ্ট ৯ জন নেতাকে কারণ দর্শানোর নির্দেশ দেন।

বিচারকের নির্দেশে যাঁদের ৫ কর্মদিবসের মধ্যে লিখিত জবাব দিতে বলা হয়েছে, তাঁরা হলেন—মেহেরপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক জাভেদ মাসুদ মিল্টন, সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট কামরুল হাসান, যুগ্ম আহ্বায়ক আমিরুল ইসলাম, নবগঠিত কমিটির সভাপতি মো. ফজলুল হক, সাধারণ সম্পাদক মো. মমিনুল ইসলাম এবং তেঁতুলবাড়িয়া ইউনিয়ন বিএনপির কাউন্সিল নির্বাচন–২০২৫ এর প্রধান নির্বাচন কমিশনার মো. আব্দুস সালাম, নির্বাচন কমিশনার জুলফিকার আলী ও অ্যাডভোকেট আরিফুজ্জামান।

বাদীপক্ষের দাবি, দলীয় গঠনতন্ত্র অনুযায়ী নিয়মতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় কাউন্সিল আহ্বানের মাধ্যমে কমিটি গঠনের কথা থাকলেও তা মানা হয়নি। বিএনপির কেন্দ্রীয় গঠনতন্ত্রের ধারা ৬(খ) অনুযায়ী, ইউনিয়ন কমিটি গঠনে অবশ্যই ওয়ার্ডভিত্তিক সম্মেলন ও কাউন্সিল করতে হয়। কিন্তু অভিযোগ রয়েছে, ক্ষমতার অপব্যবহার করে তড়িঘড়ি করে নিজের পছন্দের লোকদের দিয়ে কমিটি গঠন করেছেন আহ্বায়ক কমিটির নেতারা।

বাদী পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. মিজানুর রহমান বলেন, আহ্বায়ক কমিটির নেতারা দলের নিয়মনীতি উপেক্ষা করে কাউন্সিল ছাড়াই কমিটি গঠন করেছেন। এতে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে। আমরা আদালতে এর বিরুদ্ধে প্রতিকার চেয়েছি এবং আদালত অন্তর্বর্তীকালীন নিষেধাজ্ঞা দিয়ে আমাদের বক্তব্যের গুরুত্ব দিয়েছেন।

বিবাদীপক্ষের অন্যতম নেতা, মেহেরপুর জেলা বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাড. কামরুল হাসান বলেন, আমরা আদালতের আদেশ সম্পর্কে শুনেছি, তবে এখনো রায়টির লিখিত অনুলিপি হাতে পাইনি। যথাযথ আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই আমরা আমাদের অবস্থান উপস্থাপন করব।

তিনি আরও বলেন, দলকে শক্তিশালী করতেই ইউনিয়ন পর্যায়ে নতুন কমিটি গঠন করা হয়েছে। কেউ যদি এতে অসন্তুষ্ট হন, তাহলে সেটারও দলীয় ফোরামে সমাধান সম্ভব।

গত কয়েক মাস ধরেই মেহেরপুর জেলা বিএনপির বিভিন্ন ইউনিটে কমিটি গঠন নিয়ে অন্তর্দ্বন্দ্ব ও মনোমালিন্য প্রকট আকার ধারণ করেছে। একাধিক ক্ষেত্রে কাউন্সিল ছাড়াই কমিটি ঘোষণার অভিযোগ উঠেছে, যার জেরে তৃণমূলের অনেক নেতা-কর্মী ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে আসছেন।

তেঁতুলবাড়িয়া ইউনিয়নের এই ঘটনায় প্রথমবারের মতো আনুষ্ঠানিকভাবে আইনি প্রক্রিয়ার আশ্রয় নেওয়া হলো। ফলে এ বিরোধ শুধু দলীয় বা স্থানীয় পর্যায়ে সীমাবদ্ধ না থেকে এখন আদালতের চৌকাঠ পেরিয়েছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে ইউনিয়ন পর্যায়ে দল পুনর্গঠনের এই প্রক্রিয়া যদি গঠনতান্ত্রিক শৃঙ্খলা বজায় রেখে পরিচালিত না হয়, তাহলে দলীয় ঐক্যে আরও ফাটল ধরতে পারে।

এনএ/

দেখুন: মেহেরপুরে বিএডিসির বীজে কপাল পুড়েছে চাষিদের

বিজ্ঞাপন

আরও পড়ুন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

বিশেষ প্রতিবেদন