ফরাসি রাজনীতিবিদ রাফায়েল গ্লুকসম্যান যুক্তরাষ্ট্রের কাছে স্ট্যাচু অব লিবার্টি (Statue of Liberty) ফিরিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তার মতে, ফ্রান্স থেকে উপহার হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো এই মূর্তি এখন আর যুক্তরাষ্ট্রের মূল্যবোধের প্রতিনিধিত্ব করে না, তাই এটি ফ্রান্সে ফিরে আসা উচিত। গ্লুকসম্যান বলেন, “আমরা এটি তোমাদের উপহার হিসেবে দিয়েছিলাম, কিন্তু তোমরা এটি আর সম্মান করো না। তাই এটি আমাদের কাছেই ভালো থাকবে।”
গ্লুকসম্যান এই দাবি প্লেস পাব্লিচ নামক ফরাসি রাজনৈতিক দলের সম্মেলনে উচ্চারণ করেন। তার ভাষণে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান প্রশাসনের কর্মকাণ্ডের তীব্র সমালোচনা করেন। বিশেষ করে তিনি বলেন, “যারা বিজ্ঞান ও গবেষণার স্বাধীনতার পক্ষে কথা বলায় গবেষকদের চাকরি থেকে বরখাস্ত করছে, এবং যারা স্বৈরশাসকদের পক্ষ নিচ্ছে, তাদের আমরা বলছি, স্ট্যাচু অব লিবার্টি আমাদের ফেরত দাও।”
রাফায়েল গ্লুকসম্যান ইউক্রেনের সমর্থক এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের রাশিয়া ও ইউক্রেন নীতির কঠোর সমালোচক। তিনি আরও বলেন, “যদি তোমরা তোমাদের সেরা গবেষকদের বরখাস্ত করতে চাও, যদি স্বাধীনতা, নতুন উদ্ভাবন, এবং গবেষণার প্রতি শ্রদ্ধাশীল মানুষদের ত্যাগ করতে চাও, তাহলে আমরা তাদের স্বাগত জানাবো।”

স্ট্যাচু অব লিবার্টি যুক্তরাষ্ট্রের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতীক।
ফ্রান্স ১৮৮৪ সালে এই মূর্তিটি যুক্তরাষ্ট্রের কাছে উপহার হিসেবে পাঠায়, যা স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের প্রতীক হিসেবে চিহ্নিত হয়। ফরাসি ভাস্কর ফ্রেডরিক অগাস্ট বার্থোল্ডি ডিজাইন করেছিলেন এবং গুস্তাভ আইফেল (আইফেল টাওয়ারের নির্মাতা) এর কাঠামো তৈরি করেন। ১৮৮৫ সালে এটি ফরাসি নৌবাহিনীর ‘ইজেরে’ জাহাজে করে নিউইয়র্কে পাঠানো হয় এবং ১৮৮৬ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয়।
ন্যাশনাল এন্ডাওমেন্ট ফর দ্য হিউম্যানিটিস অনুযায়ী, স্ট্যাচু অব লিবার্টি স্বাধীনতা, গণতন্ত্র ও আশার প্রতীক। এটি যুক্তরাষ্ট্রের আদর্শকে প্রকাশ করে এবং অভিবাসীদের জন্য একটি স্বাগতসূচক আলোকবর্তিকা হিসেবে কাজ করে।

গ্লুকসম্যানের এই বক্তব্য একদিকে প্রতীকী এবং রাজনৈতিক হলেও, এটি বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্সের কূটনৈতিক সম্পর্কের নতুন আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই দাবি ফরাসি সরকারের দৃষ্টিকোণ থেকে একটি সংকেত হতে পারে, বিশেষত ট্রাম্প প্রশাসনের নানা বিতর্কিত পদক্ষেপের পরিপ্রেক্ষিতে।
রাফায়েল গ্লুকসম্যান ১৯৭৯ সালে প্যারিসে জন্মগ্রহণ করেন এবং ইন্সটিটিউট অব পলিটিক্যাল স্টাডিজ থেকে স্নাতক হন। ২০১৯ সাল থেকে তিনি ইউরোপীয় পার্লামেন্টের ‘প্রগ্রেসিভ অ্যালায়েন্স অব সোশ্যালিস্টস অ্যান্ড ডেমোক্র্যাটস’ দলের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়া, তিনি ইউরোপীয় পার্লামেন্টের মানবাধিকারবিষয়ক উপকমিটির সহ-সভাপতি এবং বিদেশি হস্তক্ষেপ সম্পর্কিত বিশেষ কমিটির সভাপতির দায়িত্বে আছেন।
তিনি দীর্ঘদিন ধরে ইউক্রেনের প্রতি সমর্থন জানিয়ে আসছেন এবং ট্রাম্পের রাশিয়া ও ইউক্রেন নীতির কঠোর সমালোচক। তার বক্তব্যে স্পষ্ট প্রতিফলিত হয় একটি নির্দিষ্ট আদর্শের প্রতি তার নিবেদন, যা তিনি মনে করেন যে যুক্তরাষ্ট্র আর ধারণ করতে পারছে না।
গ্লুকসম্যানের বক্তব্যটি যদিও প্রতীকী, তবে এটি বিশ্ব রাজনীতির মধ্যে একটি গভীর সংকেত প্রদান করে। ফ্রান্স এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে ঐতিহাসিক বন্ধুত্ব এবং সহযোগিতা থাকা সত্ত্বেও, গ্লুকসম্যানের এই দাবির মাধ্যমে বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং যুক্তরাষ্ট্রের নানা পদক্ষেপের প্রতি এক ধরনের বিরোধিতা প্রকাশ পেয়েছে।
উল্লেখযোগ্য যে, ১৮৮৫ সালে স্ট্যাচু অব লিবার্টি যখন নিউইয়র্কে পৌঁছায়, তখন এটি যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতা এবং গণতন্ত্রের প্রতীক হিসেবে গ্রহণ করা হয়। তবে, বর্তমান পরিস্থিতিতে, গ্লুকসম্যানের এই বক্তব্যের মাধ্যমে এমন একটি তত্ত্ব উঠে আসে যে, আজকের যুক্তরাষ্ট্র হয়তো সেই আদর্শের প্রতি যথাযথ শ্রদ্ধা প্রদর্শন করছে না।
গ্লুকসম্যানের এই দাবির ফলে দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক এবং আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে নতুন আলোচনা হতে পারে। এটি দেখাবে যে, কীভাবে প্রতীকী উপহার কিংবা জাতির ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ অংশ একটি রাজনৈতিক টুল হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে।
স্ট্যাচু অব লিবার্টি ফিরিয়ে দেওয়ার দাবিটি অনেক বেশি প্রতীকী এবং রাজনৈতিক বার্তা প্রদান করে। এই ধরনের বক্তব্যের মাধ্যমে রাফায়েল গ্লুকসম্যান যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান প্রশাসনকে চ্যালেঞ্জ করেছেন এবং ফ্রান্সের পক্ষ থেকে একটি শক্তিশালী অবস্থান তুলে ধরেছেন। সময়ই বলে দেবে, এই দাবি আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে কী ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে।
পড়ুন: ইয়েমেনে ভয়াবহ হামলা যুক্তরাষ্ট্রের, নারী-শিশুসহ নিহত অন্তত ২৩
দেখুন: রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে পারমাণবিক যু*দ্ধ হলে যা হবে!
ইম/