31 C
Dhaka
সোমবার, মার্চ ১৭, ২০২৫

যুদ্ধবিরতি নিয়ে অচলাবস্থার মধ্যেই গাজায় ত্রাণ সরবরাহ বন্ধ ইসরায়েলের

গাজায় ইসরায়েলি হামলার পর যুদ্ধবিরতির প্রথম পর্যায়ের শেষ হতে না হতেই, ইসরায়েল সব ধরনের ত্রাণ এবং পণ্যের প্রবেশ স্থগিত করেছে। পাশাপাশি তারা হুমকি দিয়েছে যে, হামাস যদি ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে অস্থায়ী যুদ্ধবিরতি বাড়ানোর প্রস্তাব গ্রহণ না করে, তবে তার পরিণতি ভোগ করতে হবে। রোববার (২ মার্চ) ব্রিটিশ গণমাধ্যম রয়টার্স এক প্রতিবেদনে এই খবর জানিয়েছে।

ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর কার্যালয় জানিয়েছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দূত স্টিভ উইটকফের প্রস্তাবিত সাময়িক যুদ্ধবিরতি সম্প্রসারণের প্রস্তাব এখনও হামাস গ্রহণ করেনি। নেতানিয়াহুর দপ্তর বলেছে, রোববার সকাল থেকেই গাজায় সকল পণ্য এবং ত্রাণ সরবরাহ বন্ধ থাকবে। তারা আরও জানিয়েছে, হামাস যদি তাদের অবস্থান পরিবর্তন না করে, তবে আরও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

হামাস এই পদক্ষেপকে ‘যুদ্ধাপরাধ’ বলে আখ্যা দিয়েছে এবং ইসরায়েলকে যুদ্ধবিরতি চুক্তির শর্ত লঙ্ঘন করার অভিযোগে অভিযুক্ত করেছে। হামাসের মুখপাত্র বলেছেন, এটি একটি ‘সস্তা ব্ল্যাকমেইল’ এবং চুক্তির বিরুদ্ধে ‘অভ্যুত্থান’। তারা মধ্যস্থতাকারীদের কাছে ইসরায়েলকে মানবিক সহায়তা সরবরাহ পুনরায় শুরু করার জন্য চাপ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।

রবিবার গাজায় ত্রাণবাহী ট্রাক প্রবেশে বাধা দেওয়ার পর, হামাস মিসর ও কাতারের মধ্যস্থতাকারীদের হস্তক্ষেপের আহ্বান জানিয়েছে। একইসঙ্গে, বেশ কয়েকটি আরব রাষ্ট্র এবং জাতিসংঘ ইসরায়েলের এই পদক্ষেপের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। মিসর এবং কাতার জানিয়েছে, রবিবারের ইসরায়েলি পদক্ষেপ চুক্তি লঙ্ঘন করেছে, অন্যদিকে জাতিসংঘের মানবিক প্রধান টম ফ্লেচার এটিকে ‘উদ্বেগজনক’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।

ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু বলেছেন, তাদের দেশের সিদ্ধান্তের কারণ হলো হামাস সরবরাহ চুরি করছে এবং সন্ত্রাসী বাহিনীকে অর্থায়ন করছে। তিনি আরও বলেছেন, হামাস মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দূত স্টিভ উইটকফের প্রস্তাবিত অস্থায়ী বর্ধিতকরণ মেনে নিতে অস্বীকার করেছে। তবে হামাস গাজার মানবিক সাহায্য চুরি করার কথা অস্বীকার করেছে।

এদিকে, হামাস জানিয়েছে যে তারা মূলত যুদ্ধর প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, যা দ্বিতীয় পর্যায়ে যাওয়ার জন্য নির্ধারিত ছিল। তাদের লক্ষ্য যুদ্ধের স্থায়ীক অবসান ঘটানো, কিন্তু প্রথম ধাপে ৪২ দিনের যুদ্ধবিরতির সাময়িক বর্ধনের ধারণাটি তারা প্রত্যাখ্যান করেছে। হামাসের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেছেন, ইতিমধ্যেই সম্মত হওয়া চুক্তির শর্তাবলী অনুযায়ী, হামাস কেবলমাত্র অবশিষ্ট ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তি দেবে।

গাজার উত্তর ও দক্ষিণ অঞ্চলে পৃথক হামলায় ইসরায়েলি বন্দুকধারীদের গুলিতে চার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, তারা সন্দেহভাজনদের চিহ্নিত করেছে এবং ‘হুমকি দূর করার জন্য’ বিমান হামলা চালিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে নেতানিয়াহুর কার্যালয় জানিয়েছে, গাজায় সকল পণ্য এবং সরবরাহ প্রবেশ বন্ধ করা হবে, এবং হামাসের অবস্থান পরিবর্তন না হলে ইসরায়েল আরও কঠোর ব্যবস্থা নেবে।

গাজার যুদ্ধবিরতির পরিপ্রেক্ষিতে, মিসর ও কাতার ইসরায়েলের এই পদক্ষেপকে যুদ্ধবিরতি চুক্তির স্পষ্ট লঙ্ঘন হিসেবে বর্ণনা করেছে।

তারা দাবি করেছে, ইসরায়েলকে মানবিক সহায়তা পুনরায় শুরু করতে বাধ্য করতে চাপ দেওয়া উচিত। সৌদি আরবও এই পদক্ষেপের নিন্দা জানিয়েছে এবং জাতিসংঘের মানবিক বিষয়ক আন্ডার-সেক্রেটারি-জেনারেল টম ফ্লেচার বলেছেন, ‘আন্তর্জাতিক মানবিক আইন স্পষ্ট, আমাদের গুরুত্বপূর্ণ জীবন রক্ষাকারী সাহায্য সরবরাহের জন্য প্রবেশাধিকার দিতে হবে।’

ইসরায়েলিরা বলছে, তারা মানবিক সাহায্য দেওয়া বন্ধ করেছে কারণ হামাস সেই সাহায্য চুরি করে তাদের সন্ত্রাসী বাহিনীর অর্থায়নে ব্যবহার করছে। তবে হামাস এই অভিযোগ অস্বীকার করে জানিয়েছে, তারা যুদ্ধবিরতির জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং এটি সমাপ্তির পথে।

পড়ুনঃ গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত ৪, যুদ্ধবিরতির পর মারা গেছেন শতাধিক

দেখুনঃ গাজায় যুদ্ধবিরতি: জিতল কে ইসরায়েল না হামাস? | 

ইম/

বিজ্ঞাপন

আরও পড়ুন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

বিশেষ প্রতিবেদন