রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের দেওয়া তিন দিনের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। তিনি বলেছেন, কমপক্ষে ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতি ছাড়া কোনো অর্থপূর্ণ আলোচনা সম্ভব নয়। শনিবার (৩ মে) রাতে এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা আনাদোলু।
বার্তাসংস্থাটি বলছে, শুক্রবার কিয়েভে এক গোপন সাংবাদিক সম্মেলনে (যার বক্তব্য শনিবার প্রকাশিত হয়) জেলেনস্কি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের প্রস্তাবকে “নাটকীয় প্রদর্শনী” হিসেবে বর্ণনা করেন। পুতিন এই তিন দিনের যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব দিয়েছিলেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নাৎসি জার্মানির পরাজয়ের ৮০তম বার্ষিকী উপলক্ষ্যে।
জেলেনস্কি বলেন, “আমরা যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবকে ভিত্তি ধরেছি। মাত্র তিন দিন যুদ্ধ বন্ধ করে কোনো বাস্তব আলোচনা সম্ভব নয়”। তিনি বিদেশি নেতাদের মস্কো না যাওয়ার আহ্বান জানান, বিশেষ করে ৯ মে’র বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে যোগ না দিতে অনুরোধ করেন। জেলেনস্কি বলেন, “রাশিয়ার মাটিতে কী হচ্ছে, তার জন্য আমরা কোনো দায়িত্ব নিতে পারি না। সেখানে আপনারা যদি যান, নিরাপত্তার দায়িত্ব তাদের, আমাদের নয়। তাই আমরা কোনো সুরক্ষার গ্যারান্টি দিতে পারি না।” জেলেনস্কির এই মন্তব্যকে রাশিয়ান কর্মকর্তারা হুমকি হিসেবে ব্যাখ্যা করেছেন। রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা এই মন্তব্যকে “বিদেশি নেতাদের সরাসরি ভয় দেখানো” বলে অভিযুক্ত করেছেন।
এছাড়া সাবেক রাশিয়ান প্রেসিডেন্ট দিমিত্রি মেদভেদেভ জেলেনস্কিকে “কথার উসকানি বন্ধ করার” আহ্বান জানিয়েছেন।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ঘোষিত তিন দিনের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবকে ‘নাটক’ বলে প্রত্যাখ্যান করেছেন। তবে কিয়েভ সম্পূর্ণ যুদ্ধবিরতির জন্য প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন তিনি।
শুক্রবার এএফপিসহ একটি ছোট সাংবাদিকদলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জেলেনস্কি এসব কথা বলেন; যা শনিবার পর্যন্ত প্রকাশে নিষেধাজ্ঞা ছিল।
কিয়েভ থেকে এএফপি জানায়, রাশিয়া এখনো কিয়েভ ও ওয়াশিংটনের পক্ষ থেকে প্রস্তাবিত নিঃশর্ত ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতি মেনে নেয়নি, যদিও যুক্তরাষ্ট্র তিন বছর ধরে চলা রাশিয়ার ইউক্রেন আগ্রাসনের অবসান ঘটাতে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
জেলেনস্কি বলেন, ‘এটি তার একটা ‘নাটুকেপনা’। কারণ দুই বা তিন দিনের মধ্যে যুদ্ধ শেষ করার পরিকল্পনা করা যায় না।’
তিনি বলেন, ‘আমরা কোনো সুন্দর পরিবেশ তৈরির খেলা খেলছি না, যাতে পুতিন ৯ মে’র অনুষ্ঠান উপলক্ষে নিজের একঘেয়েমি কাটিয়ে উঠতে পারেন।’ ওই দিন রাশিয়ায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ বিজয় দিবস উদ্যাপনে কিছু বিদেশি নেতা মস্কো সফরে যাচ্ছেন।
ইউক্রেন মনে করে, রাশিয়ার এই প্রস্তাব আসলে কিয়েভকে ৯ মে’র অনুষ্ঠানে মস্কোতে হামলা না করতে বাধ্য করার কৌশল। এদিন রেড স্কয়ারে বিশাল সামরিক কুচকাওয়াজ ও পুতিনের ভাষণ অনুষ্ঠিত হবে।
ইউক্রেন যুদ্ধ চলাকালে মস্কোসহ রাশিয়ার বিভিন্ন স্থানে একাধিকবার হামলা চালিয়েছে কিয়েভ। ক্রেমলিন জানিয়েছে, প্রায় ২০টি দেশের নেতা, যার মধ্যে চীনের শি জিনপিংও রয়েছেন, এ বছরের বিজয় দিবস অনুষ্ঠানে যোগ দিতে যাচ্ছেন।
জেলেনস্কি বলেন, কিছু দেশ ইউক্রেনকে জানিয়েছে, তারা রাশিয়া যাচ্ছে এবং নিরাপত্তা চেয়েছে।
তিনি বলেন, ‘আমাদের অবস্থান খুবই সরল—৯ মে যারা রাশিয়ায় যাচ্ছে বা যাবে, আমরা রুশ ভূখণ্ডে যা ঘটবে তার কোনো দায় নিতে পারি না।’
‘তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব রাশিয়ার,’ বলেন তিনি। ‘রাশিয়া নিজেই আগুন, বিস্ফোরণ ইত্যাদি ঘটিয়ে আমাদের ওপর দোষ চাপাতে পারে।’
রুশ কর্মকর্তারা এবারের বিজয় দিবসে জাঁকজমকপূর্ণ উদ্যাপনের ঘোষণা দিয়েছে। এই উপলক্ষে পুতিন সেনাদের জন্য সমর্থন আদায়ে একটি বার্তা দেবেন।
রুশ বাহিনী বর্তমানে যুদ্ধের বিভিন্ন ফ্রন্টে অগ্রগতি করছে এবং উভয় পক্ষই আকাশ হামলা বাড়িয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র সতর্ক করেছে, যদি দৃশ্যমান অগ্রগতি না হয়, তারা যুদ্ধবিরতির প্রচেষ্টা পরিত্যাগ করতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস বলেন, ‘আমরা একটি সম্পূর্ণ, স্থায়ী যুদ্ধবিরতি এবং সংঘাতের অবসান চাই, কোনো তিন দিনের অনুষ্ঠান উদ্যাপনের অজুহাতে অস্থায়ী বিরতি নয়।’ ব্রুস আরও বলেন, যুদ্ধবিরতির বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন:
ক্ষমতায় আসার পর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প রাশিয়ার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের নীতি আমূল বদলে ফেলেছেন, যার ফলে ক্রেমলিনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা তৈরি হয়েছে।
এর আগে ২৮ ফেব্রুয়ারি হোয়াইট হাউসে ট্রাম্প ও জেলেনস্কির মধ্যে মুখোমুখি বিবাদের মধ্য দিয়ে একটি খনিজ চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার কথা ছিল। ওই চুক্তির আওতায় যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনের গুরুত্বপূর্ণ খনিজ সম্পদে প্রবেশাধিকার পেত, যার বিনিময়ে কিছু নিরাপত্তা দিত।
পরবর্তীতে ইউক্রেন সেই চুক্তি পুনরায় আলোচনার মাধ্যমে পরিবর্তন করে, যাতে কিয়েভের স্বার্থ রক্ষিত হয়—যদিও এতে নির্দিষ্ট কোনো নিরাপত্তা নিশ্চয়তা নেই।
এপ্রিলে পোপ ফ্রান্সিসের শেষকৃত্যে ভ্যাটিকানে ট্রাম্প ও জেলেনস্কির সাক্ষাৎ হয়, যা ছিল তাদের প্রকাশ্য বিরোধের পর প্রথম মুখোমুখি বৈঠক। ‘সেই সাক্ষাৎকার ছিল আমাদের আগের সব বৈঠকের চেয়ে উত্তম,’ বলেন জেলেনস্কি। ‘আমি আত্মবিশ্বাসী, ভ্যাটিকানে আমাদের বৈঠকের পর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বিষয়গুলো কিছুটা ভিন্নভাবে দেখছেন।
পড়ুন: রাশিয়ায় চাকরির প্রলোভনে যুদ্ধবন্দী জীবন
দেখুন: রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে কে জিতবে? |
ইম/