বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধান মন্ত্রী খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য লন্ডন যাওয়ার সব প্রস্তুতি সম্পন্ন। সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে আজ শুক্রবার তার লন্ডন যাবার কথা। কিন্তু দলীয় সুত্র বলছে কিছু জটিলতার কারণে আজ তিনি যাবেন না।তবে কবে যাচ্ছেন তিনি উন্নত চিকিসৎার জন্য তাও নিশ্চিত করে দল বা পরিবারের পক্ষ থেকে কিছু বলা হচ্ছেনা।
২০০৯ সালে হাসিনার আওয়ামী সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে রাজনৈতিক প্রতিহংসার রোষানলে পড়েন বিএনপি চেয়ারপারসন ও তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া।
রাজনৈতিক ভাবে মোকাবেলা করতে না পেরে বিএনপি প্রধানের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলার হাতিয়ার হিসেবে বেছে নেন হাসিনা।
২০১৮ সালে ৮ ফেব্রুয়ারী জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায ৫ বছরের সাজা দেয়া হয় বিএনপি প্রধানকে। ওই বছরেই আপিল শুনানিতে তা বেড়ে দশ বছর করা হয়। মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে এতিমদের জন্য বিদেশ থেকে পাওয়া ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১টাকা। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ক্ষমতার অপব্যবহার করে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টে দেয়া হলেও তা এতিম ট্রাস্টের কাজে ব্যয় হয়নি। বরং তা নিজেদের হিসেবে রেখে আত্মসাৎ করা হয়েছে।
অন্যদিকে একই সালের ২৯ অক্টোবর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দর্নীতি মামলাও তাকে সাত বছরের কারাদন্ড দেয়া হয়। এ মামলার অভিযোগও ভিক্তিহীন। যাতে বলা হয়েছে প্রধান মন্ত্রী থাকা অবস্থায় তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার করে তিনি ৬ কোটি ১৯ লাখ টাকার জোগাড় করেছিলেন। এ ছাড়াও তাকে হয়রানি করার জন্য নাইকো,গ্যাটকো ও বড় পুকুরিয়া মামলাও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
সাজা ভোগ করানোর জন্য পতিত স্বৈরাচার বিএনপি নেত্রীকে ২০১৮ সালে পুরান ঢাকার জেলে রাখেন তাকে। দীর্ঘ দুই বছরের বেশী সময় তিনি কারাভোগ করেন।
করোনা ভাইরাস মহামারিকালে তৎকালীন সরকার বিএনপি প্রধানকে নির্বাহী আদেশে শর্তসাপেক্ষে মুক্তি দিয়ে বাসায় থাকার জন্য অনুমতি দেয়। তবে এ মুক্তি ছিল ৬মাসের জন্য। প্রতি ৬ মাস পর পর তার পরিবারের পক্ষ থেকে সরকারের অনুমতি নিয়ে মুক্তির মেয়াদ বাড়িয়ে তিনি বাসায় থাকতেন। করেন। তবে উন্নত চিকিৎসার জন্য তৎকালীন সরকারের কাছে বিদেশে উন্নত চিকিৎসার জন্য বারবার আবেদন করা হলেও তাকে অনুমতি দেয়া হয়নি।
এর মধ্যে ৫ আগষ্ট ছাত্র জনতার গনঅভুথ্যানে ফ্যাসিস্ট সরকার বিদায় হলে রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন বিশেষ ক্ষমতাবলে খালেদার দন্ড মওফুক করেন।
এর পর ৭৯ বছর বয়সী সাবেক এ প্রধান মন্ত্রীকে বিদেশ নেবার জন্য দলের পক্ষ থেকে প্রস্তুতি নেয়া হয়। সব প্রস্তুতিও সম্পন্ন হয়। দলের পক্ষ থেকে বলা হয় সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে শুক্রবার তাকে শুক্রবার লন্ডন নেয়া হবে উন্নত চিকিৎসার জন্য।সেখান থেকে যুক্তরাষ্ট্র বা জার্মানীতে যাবে লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য। কিন্তু দলীয় সুত্র বলছে কিছু জটিলতার কারণে আজ তাকে বিদেশ নেয়া হচ্ছে না।
এর আগে দলের পক্ষ থেকে বিএনপি প্রধানকে বিদেশ নেবার ব্যাপারে পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ে চিঠিও দেয়া হয়। এ প্রক্রিয়ায় খালেদা জিয়া সহ তার সাথে যারা যাবেন সবার প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্ন করা হয়।
বিএনপি চেয়ারপারসন লিভার সিরোসিস, হ্রদরোগ, ফুসফুস, আথ্রাইটিস, কিডনি, ডায়াবেটিস সহ নানা জটিল রোগে ভুগছেন।ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে বিভিন্ন সময়ে সিসিইউতে থেকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সমন্বয়ে মেডিকেল বোর্ডের তত্বাবধানে তাকে দীর্ঘ সময় চিকিৎসা নিতে হয়েছে।
তার চিকিসৎকদের সুত্র বলছে আপাতত তার বিদেশ যাত্রা কয়েকদিন দেরি কিছু জটিলতার কারণে। তবে তিনি সুস্থ আছেন। তার বিমান ভ্রমনেও সমস্যা হবেনা।
অবশ্য দলীয় সূত্র বলছে বর্তমান দেশের পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক কারণে তার বিদেশ যাত্রা বিলম্ব হতে পারে।
দলটির নেতারা তার আজকের শারীরিক পরিস্থিতির জন্য হাসিনাকে দুষছেন বলছেন তিনি শীঘ্রই উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশ যাবেন।
বর্তমানে খালেদা জিয়া এভারকেয়ার হাসপাতালের হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক সাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে মেডিকেল বোর্ডের তত্বাবধানে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
এনএ/