15.1 C
Dhaka
রবিবার, ফেব্রুয়ারি ৯, ২০২৫

যে কারণে টানা ৯ দিন সুনামি হয়েছিল!

সিরাজুম মুনির শুভ গত বছরের সেপ্টেম্বরে গ্রিনল্যান্ডে ভূমিধস ও মেগা হয়েছিল। যার কারণে পুরো পৃথিবী টানা নয় দিন ধরে কম্পিত হয়। একটি বৈজ্ঞানিক গবেষণায় এমন তথ্য সামনে এসেছে।

ঘটনাটি বিশ্বজুড়ে ভূমিকম্প সেন্সর দিয়ে শনাক্ত করা হয়। কিন্তু এটি এতটাই নজিরবিহীন ছিল যে, গবেষকরা প্রাথমিকভাবে এর কারণ সম্পর্কে কোনো ধারণাই পাননি। সিসমোলজিস্টরা প্রাথমিকভাবে অন্য কিছু ভেবেছিলেন। তারা মনে করেছিলেন, যন্ত্রগুলির অস্বাভাবিক কম্পন ত্রুটির জন্য হচ্ছে।

সাধারণত ভূমিকম্প হলে, যন্ত্রগুলি মিনিট খানেকের জন্য সঙ্কেত দিয়ে থাকে। কিন্তু এই ক্ষেত্রে ব্যাপারটি আলাদা ছিল। রিপোর্ট অনুযায়ী, যন্ত্রগুলি প্রায় নয় দিন ধরে ভূকম্পের সঙ্কেত দিয়েছে। বিষয়টি তাদের চিন্তিত করে তুললে, শেষ পর্যন্ত বিজ্ঞানীরা এর রহস্য খুঁজে বের করেন।  

রহস্যের সমাধানের পর বিজ্ঞানীরা জানান, ২০২৩ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর গ্রিনল্যান্ডের প্রত্যন্ত ডিকসন ফজর্ডের, এক হাজার ২০০ মিটার-উচ্চতার একটি পর্বতশৃঙ্গ ভেঙ্গে পড়ে। এর নিচের গলিত হিমবাহ সরে যাওয়ায় এ ঘটনা ঘটে।

এটি ২০০ মিটার উচ্চতায় একটি প্রাথমিক ঢেউয়ের সূত্রপাত করে, পরবর্তীতে যা ৬৫০ ফুটের মেগা-সুনামিতে পরিণত হয়। পানির তীব্র সেই স্রোত এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে গ্রহ জুড়ে ভূমিকম্পের তরঙ্গ পাঠায়।

প্রতিবেদনের প্রধান লেখক ডেনমার্ক ও গ্রিনল্যান্ডের জিওলজিক্যাল সার্ভের ড. ক্রিস্টিয়ান সোভেনভিগ বলেন, যখন তারা এই বৈজ্ঞানিক অভিযান শুরু করেন, তখন সবাই হতবাক হয়ে গিয়েছিলেন। এই সংকেতটি কী কারণে ঘটেছে তা কেউই বুঝতে পারেননি। এটি ভূমিকম্প সংকেতের চেয়ে অনেক বেশি দীর্ঘ ও সরল ছিল। যা সাধারণত কয়েক মিনিট বা ঘন্টা স্থায়ী হয় এবং এটিকে ইউএসই (অজ্ঞাত ভূমিকম্পের বস্তু) হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছিল।

তিনি আরো বলেন, এটি একটি অসাধারণ ঘটনা ছিল। কারণ এটি পূর্ব গ্রিনল্যান্ডে প্রথম বিশাল ভূমিধস ও সুনামি হিসাবে রেকর্ড করা হয়েছে। এটি স্পষ্টভাবে দেখায় যে, ভূমিধসের ক্ষেত্রে পূর্ব গ্রিনল্যান্ড অনলাইনে আসছে। তরঙ্গগুলো সমুদ্রপৃষ্ঠে একটি জনবসতিহীন ইনুইট অঞ্চলকে ধ্বংস করেছে যা কমপক্ষে ২০০ বছর পুরনো ছিল। যা নির্দেশ করে যে অন্তত দুই শতাব্দি ধরে এরকম কিছুই ঘটেনি এখানে।

এটি দেখিয়েছে যে কীভাবে বিশ্বব্যাপী উত্তাপ ইতিমধ্যেই পৃথিবীতে ব্যাপক মাত্রায় প্রভাব ফেলছে। তাপমাত্রা দ্রুত বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথে পূর্বে স্থিতিশীল বলে মনে করা হয় এমন জায়গায় বড় ভূমিধস হচ্ছে। আর্কটিক অঞ্চলগুলো সবচেয়ে দ্রুত বৈশ্বিক উত্তাপে প্রভাবিত হচ্ছে। ভূমিকম্পের দিক থেকে ছোট হলেও, এরকম ঘটনাগুলো পশ্চিম গ্রিনল্যান্ড, আলাস্কা, কানাডা, নরওয়ে এবং চিলিতে দেখা যাচ্ছে। আর্কটিক অঞ্চলে জলবায়ুর পরিবর্তনই যার প্রধান কারণ, বলছেন বিশেষজ্ঞরা।

ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের একজন সিসমোলজিস্ট এবং পিয়ার-রিভিউড জার্নালে প্রকাশিত গবেষণার সহ-লেখক স্টিফেন হিকসও এই প্রসঙ্গে মুখ খুলেছেন। তিনি ভূমিকম্পের সঙ্কেতটি একঘেয়ে গুঞ্জন হিসেবে বর্ণনা করেছেন। কম্পনের উৎস কোথায় তা নির্ধারণের জন্য ১৫টি দেশের ৬৮ জন বিজ্ঞানী কাজ করছিলেন। তারা পূর্ব গ্রিনল্যান্ডে, বিশেষ করে সুনামি দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাতে সঙ্কেতটি চিহ্নিত করেন।

বিজ্ঞানীরা ব্যাপারটির জন্য বিশ্বের জলবায়ু পরিবর্তনকেই দায়ী করেছেন। উষ্ণায়নের প্রভাবে হিমবাহটি বছরের পর বছর ধরে গলেছে। এবং সেটাই একটা সময় আছড়ে পড়েছে। ভয়ঙ্কর এই ঘটনাটি প্রমাণ করে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আর্কটিক অঞ্চলের পরিবেশ পরিস্থিতি কতটা অস্থির হয়ে উঠেছে। গবেষণার লেখকরা সতর্ক করেছেন যে আর্কটিক অঞ্চল এভাবে উষ্ণ হতে থাকলে পরবর্তীকালে মেগা সুনামি আরও ঘন ঘন হতে পারে।

যদিও ভয়ঙ্কর এই সুনামিতে কোনও প্রাণহানি ঘটেনি। তবে এটি একটি ঐতিহ্যশালী সামরিক ঘাঁটির ক্ষতি করেছে। বিজ্ঞানীদের বলেছেন, যেখানে ঘটনাটি ঘটেছে, সেই রুটে যাত্রীবাহি নৌযান চলাচল করে। তবে সেদিন কোন নৌযান এই বিশাল ঢেউয়ের সামনে পরেনি।

বিশ্ব জুড়ে ক্রমবর্ধমান উষ্ণায়ন নতুন কোনও খবর নয়। এই উষ্ণায়নের ফলে আর্কটিক অঞ্চলের জলবায়ু খুব দ্রুত গতিতে বদলে যাচ্ছে। এমন চললে ভবিষ্যতে যে আরও ভয়ঙ্কর কিছু অপেক্ষা করছে সে কথাই স্মরণ করাচ্ছে এই মেগা সুনামি।

বিজ্ঞাপন

আরও পড়ুন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

বিশেষ প্রতিবেদন