ফিলিস্তিনের গাজায় পবিত্র রমজানে মাস ও ইহুদিদের বসন্তকালীন উৎসব পাসওভারের সময় সাময়িক যুদ্ধবিরতি কার্যকরের জন্য মার্কিন প্রস্তাব গ্রহণ করেছে ইসরায়েল। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় রোববার (২ মার্চ) এক বিবৃতিতে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক দূত স্টিভ উইটকফের প্রস্তাবে, গাজায় যুদ্ধবিরতির প্রথম দিনেই গাজায় আটক থাকা জিম্মিদের অর্ধেক মুক্তি দেয়ার কথা বলা হয়েছে। যুদ্ধবিরতির পরে স্থায়ী চুক্তির আওতায় বাকি জিম্মিদের মুক্তি দেয়া হবে।
এদিকে, গত ১৯ জানুয়ারি গাজায় প্রথম ধাপে ৪২ দিনের যুদ্ধবিরতি শুরু হয়, যার মধ্যে ইসরায়েল ও হামাস ২৫ জন জীবিত ইসরায়েলি জিম্মি মুক্তি দেয় এবং ৮ জন মরদেহও হস্তান্তর করা হয়। পাল্টা, প্রায় দুই হাজার ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দেয় ইসরায়েল। গত শুক্রবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) প্রথম ধাপের যুদ্ধবিরতির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর ইসরায়েল প্রস্তাবিত দ্বিতীয় ধাপের যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনার জন্য মিসরের কায়রোয় প্রতিনিধি পাঠায়। তবে ইসরায়েল দ্বিতীয় ধাপে যুদ্ধবিরতি নিয়ে আগ্রহী নয় এবং তারা প্রথম ধাপের যুদ্ধবিরতির মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে, যা হামাস প্রত্যাখ্যান করেছে।
হামাস তাদের অবস্থান পরিষ্কার করে জানিয়েছে, তারা শুধুমাত্র বন্দি বিনিময়ের মূল চুক্তির আওতায় দ্বিতীয় ধাপের যুদ্ধবিরতির আলোচনা করতে প্রস্তুত। ইসরায়েলি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, যদি হামাস মার্কিন প্রস্তাবে সম্মতি জানায়, তবে তারা তাৎক্ষণিকভাবে আলোচনা শুরু করতে প্রস্তুত। তবে ইসরায়েল নতুন কোনো শর্তে যুদ্ধবিরতি বাড়ানোর পক্ষে নয়।
এদিকে, গাজায় যুদ্ধবিরতির সময় ধ্বংসস্তূপের মধ্যে থেকে আরও ২৩ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে, ফলে গাজার বর্তমান মৃতের সংখ্যা প্রায় ৪৮,৪০০ জনে পৌঁছেছে। যুদ্ধবিরতির মধ্যে পরিস্থিতি উন্নতি না হওয়ায় মানবিক সহায়তা নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (WFP) সতর্ক করেছে, যুদ্ধবিরতি না থাকলে গাজার জনগণের জন্য মানবিক সহায়তা প্রদান করা সম্ভব হবে না।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজায় যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপের শেষ হওয়ার পরে রমজানে গাজায় শান্তি প্রতিষ্ঠায় সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর মধ্যে আলোচনা অব্যাহত রয়েছে। জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, গাজার পরিস্থিতি অত্যন্ত সংকটজনক হয়ে উঠেছে এবং যুদ্ধবিরতির পরবর্তী ধাপ কার্যকর করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে হবে। তিনি সকল পক্ষকে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন।

এদিকে, ১ মার্চ থেকে গাজাসহ পুরো মধ্যপ্রাচ্যে পবিত্র রমজানে মাস শুরু হয়েছে
এবং ১২ এপ্রিল থেকে ইহুদিদের বসন্তকালীন উৎসব পাসওভার শুরু হবে, যা ২০ এপ্রিল পর্যন্ত চলবে। এই সময়কে কেন্দ্র করে যুদ্ধবিরতি কার্যকরের উদ্দেশ্যে আলোচনা চলছে, যাতে ওই সময়ের মধ্যে মানবিক সহায়তা পৌঁছানো সম্ভব হয়। তবে, যুদ্ধবিরতির ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত থাকায় গাজায় পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে।
বিশ্বব্যাপী যুদ্ধবিরতির শর্তে গাজায় মানবিক সহায়তা পাঠানোর সম্ভাবনা নিয়ে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। জাতিসংঘের সংস্থাগুলি সতর্ক করেছে যে, যদি যুদ্ধবিরতি দীর্ঘায়িত না হয়, তাহলে গাজায় মানবিক পরিস্থিতি আরও অবনতি ঘটবে, যা ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনতে পারে।
পড়ুনঃ রমজানে হিংসা-বিদ্বেষ-সংঘাত পরিহারের আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার
দেখুনঃ রমজানে মাস, মুমিনের জন্য সুবর্ণ সুযোগ
ইম/