০৮/০৭/২০২৫, ২১:১৩ অপরাহ্ণ
26.1 C
Dhaka
০৮/০৭/২০২৫, ২১:১৩ অপরাহ্ণ

রাঙামাটিতে পাহাড় ধস ট্র্যাজেডির ৮ বছর: বাড়ছে ‘মৃত্যুকূপে’ বসতি

২০১৭ সালে পাহাড়ি জেলা রাঙামাটিতে ভয়াবহ পাহাড় ধসের ঘটনার পরেও থেমে নেই ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে বসতি স্থাপন। এখন বর্ষা মৌসুমে ভারি বর্ষণ হলেই এসব ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে দেখা দেয় পাহাড় ধসের আশঙ্কা। চোখে মুখে ভেসে উঠে ২০১৭ সালের ১৩ জুনের সেই বিভীষিকাময় দিনটির কথা। এমন দুঃষহ, বিভীষিকাময় ঘটনার পরও থেমে নেই ঝুঁকি নিয়ে অবৈধ বসতি। ঝুঁকিতে থাকাদের নিয়ে নেই প্রশাসনের স্থায়ী কোনো সমাধানের উদ্যোগ।

প্রতি বছরই বর্ষা মৌসুমে জেলা প্রশাসন শহর এলাকার ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় মাইকিং, সচেতনতামূলক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করলেও নিজেদের বসতবাড়ি ছাড়তে রাজি নয় পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসকারী বাসিন্দারা।

জেলা প্রশাসনের তথ্য মতেই, রাঙামাটি জেলার দশ উপজেলা ও পৌরসভাসহ প্রায় ১০০ টি এলাকা ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে রাঙামাটি শহরে রয়েছে ২৯টি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা। জেলার মোট ২০ হাজারের বেশি মানুষ ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাস করছে।

রাঙামাটি জেলা শহরের রুপনগর বাসিন্দা সোমেলা আক্তার বলেন, ২০১৭ সালে যে ভয়াবহ ঘটনা মনে পড়লে ভয় লাগে। সেদিন আমাদের পাশের বাড়ি একটা পরিবার ঘরসহ ধসে পড়ে মারা গেছে। তাদের লাশগুলো পাওয়া যায়নি। এখন ঝড়-বৃষ্টি হলে ডিসি-প্রশাসনের লোকজন আসে, আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে বলে। কিন্তু ভয় লাগলেও কী করব আমরা তো ঘরবাড়ি ছেড়ে যেতে মন চাই না।

একই এলাকার শাহনাজ বেগম বলেন, আমরা তো গরীব বলে পাহাড়ে থাকি। বৃষ্টি হলে তো ভয় লাগে, কিন্তু আমাদের তো যাওয়ার জায়গায় নেই। শুধু বৃষ্টি হলে প্রশাসনের লোকজন আসে এরপরে আর খবর রাখে না। আমরা চাই সরকার আমাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করুক। তখন আমাদের যেখানে জায়গা দেয় সেখানে যাব। আর না হলে আমরা এখান থেকে যাব না, ঝুঁকি হলেও থাকতে হবে।

শিমুলতলীর বাসিন্দা মো. মোস্তফা বলেন, যতই ঝুঁকি হোক না কেন আমাদের এখানে থাকতে হবে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বউ-বাচ্চা নিয়ে পাহাড়ে থাকি। বৃষ্টি হলে যখন পানি চলাচল করতে পারে না তখন পাহাড়ের মাটি ধস হয় এটা আমরাও দেখি। কিন্তু কী করব দেখার পরও আমরা নীরবে বসবাস করি। কারণ আমাদের এখান থেকে যাওয়ার আর কোন পথ নেই।

পরিবেশ কর্মী রিকোর্স চাকমা বলেন, প্রতি বছর বর্ষা মৌসুম এলেই প্রশাসনের সাইনবোর্ড টাঙানো, লিফলেট বিলি, স্থানীয়দের নিয়ে জনসচেতনতাসহ নানা দৌঁড়ঝাপ শুরু হয় এবং এটি কেবল মৌসুমকেন্দ্রিক। এরপর যখন বর্ষা কেটে যায়, আবার সবাই চুপচাপ থাকে।। এভাবে প্রতি বছর নিয়ম করে একই ধরণের কর্মসূচি পালনের মধ্য দিয়েও ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসতি কমছে না বরং আরও বাড়ছে। এর স্থায়ী একটা সমাধানের পথে কাজ করতে হবে। সবচেয়ে বড় বিষয় হলো, ২০১৭ সালের ভয়াবহ পাহাড়ের ধস ও শতাধিক প্রাণহানির পর তদন্ত কমিটি পক্ষ থেকে সুপারিশমালা দেয়া হলেও এর কোনো কিছুরই প্রতিপালন করা হয়নি।

জানতে চাইলে সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন রাঙামাটি জেলা কমিটির সম্পাদক এম জিসান বখতেয়ার বলেন, যারা পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করে এসব এলাকার লোকজনকে পুনর্বাসন করার জন্য দীর্ঘমেয়াদী একটা পদক্ষেপ গ্রহণ করা দরকার। প্রতি বছর বৃষ্টি হবে প্রশাসন মাইকিং করবে, লোকজনকে আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে বলবে এভাবে তো সমাধান হবে না। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার লোকজনকে কোথায় কিভাবে পুনর্বাসনের মাধ্যমে নিরাপদ রাখা যাবে তার জন্য সরকারকে একটা স্থায়ীভাবে রোডম্যাপ তৈরি করা দরকার।

রাঙামাটির জেলাপ্রশাসক মোহাম্মদ হাবিব উল্লাহ বলেন, পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকি নিয়ে যারা বসবাস করছে সেসব এলাকাগুলো আমরা চিহ্নিত করেছি। পুরো জেলায় প্রায় শতাধিক ঝুকিপূর্ণ এলাকা রয়েছে। তাদের পুনর্বাসন করা একটা চলমান প্রক্রিয়া। তিন পার্বত্য জেলায় এই প্রক্রিয়াটা একটু জটিল, এখানকার ভূমি ব্যবস্থাপনার কারণে। সেটি সরকারের নিয়ম অনুসারে চলমান থাকবে। তবে এই মুহূর্তে আমাদের প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে আসন্ন বর্ষায় এখানকার এই এলাকার মানুষের যেন জীবন হুমকির সম্মুখীন না হয় সে লক্ষ্যে আমাদের কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালের ১৩ জুন রাঙামাটি জেলায় ভয়াবহ পাহাড় ধসের ঘটনায় ৫ সেনাসদস্যসহ ১২০ জনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। ওই সময় জেলার বিভিন্ন স্থানে সড়ক ধসে সারাদেশের সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে রাঙামাটি। এরপরের বছরও ২০১৮ সালের ১২ জুন জেলার নানিয়ারচর উপজেলায় পাহাড় ধসে ১১ জন এবং ২০১৯ সালে জেলার কাপ্তাই উপজেলায় পাহাড় ধসে মারা যান ৩ জন।

পড়ুন: কল্পনা চাকমা অপহরণের ২৯ বছর :বিচার দাবিতে রাঙামাটিতে আলোচনা সভা, নারী সমাবেশ

এস

আরও পড়ুন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

বিশেষ প্রতিবেদন