রাশিয়ার বিরোধীদলীয় প্রয়াত নেতা অ্যালেক্সি নাভালনির প্রতিষ্ঠিত সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগে চার সাংবাদিককে সাড়ে পাঁচ বছর করে কারাদণ্ড দিয়েছেন মস্কোর নাগাতিনস্কি ডিস্ট্রিক্ট আদালত। মঙ্গলবার ঘোষিত এই রায়ে সাংবাদিক আন্তোনিনা ফাভোরস্কায়া, কনস্তান্তিন গাবোভ, সের্গেই ক্যারেলিন ও আরতিয়ম ক্রিগেরকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। রুশ কর্তৃপক্ষ পূর্বেই নাভালনির প্রতিষ্ঠিত দুনীতিবিরোধী ফাউন্ডেশনকে ‘চরমপন্থী’ হিসেবে আখ্যায়িত করে বেআইনি ঘোষণা করেছিল।
দণ্ডপ্রাপ্ত চার সাংবাদিকই অভিযোগ অস্বীকার করে দাবি করেছেন, তারা কেবল তাদের পেশাগত দায়িত্ব পালন করেছেন। আন্তর্জাতিক সাংবাদিক সমাজ এবং মানবাধিকার সংগঠনগুলো এই রায়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে এবং একে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপর চরম হুমকি বলে অভিহিত করেছে।
দণ্ডিতদের মধ্যে আন্তোনিনা ফাভোরস্কায়া ও আরতিয়ম ক্রিগার স্বাধীন সংবাদমাধ্যম ‘সোতা ভিশন’-এর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। গাবোভ রয়টার্সসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থায় ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কাজ করেছেন। ক্যারেলিন ছিলেন অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি)-এর একজন ভিডিও সাংবাদিক।
২০২১ সালে নাভালনির সংগঠনকে ‘চরমপন্থী’ ঘোষণা করার পর থেকেই এ ধরনের অভিযোগের ভিত্তিতে বিরোধীদের দমন শুরু করে রুশ প্রশাসন। ২০২২ সালে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরুর পর থেকে রাশিয়ায় মতপ্রকাশ ও স্বাধীন সাংবাদিকতার ওপর দমন-পীড়ন আরও বাড়ে। এখন পর্যন্ত বহু রাজনৈতিক কর্মী, মানবাধিকারকর্মী ও সাংবাদিককে জেলে পাঠানো হয়েছে, এবং অনেকে বিদেশে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছেন।
নাভালনি ছিলেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সবচেয়ে বড় সমালোচক। দুর্নীতিবিরোধী কর্মসূচির মাধ্যমে জনপ্রিয়তা অর্জনকারী এই নেতা ১৯ বছরের কারাদণ্ডপ্রাপ্ত অবস্থায় ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে আন্তর্জাতিক মহলে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া তৈরি হয় এবং অভিযোগ ওঠে যে, তাঁকে রাজনৈতিক কারণে ‘চুপ করিয়ে দেওয়া’ হয়েছে।
এই পটভূমিতে সাংবাদিকদের কারাদণ্ড অনেকের কাছে আরও বড় প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। নাভালনির সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা থাকার অভিযোগের ভিত্তিতে সাংবাদিকদের এভাবে সাজা দেওয়া যে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, তা বলছেন অনেক বিশ্লেষক। রায়ের মাধ্যমে রাশিয়ার মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও সাংবাদিকতার ভবিষ্যৎ নিয়ে আন্তর্জাতিক উদ্বেগ আরও বেড়েছে।
পড়ুন: রাশিয়া ও ক্রোয়েশিয়া সফর শেষে দেশে ফিরলেন সেনাপ্রধান
দেখুন: রাশিয়ার মারাত্মক ইয়ার্স মিসাইলের আদ্যোপান্ত |
ইম/