ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেওয়ার পরিকল্পনা করছে ফ্রান্স। দেশটির প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁ জানিয়েছেন, আগামী জুনেই এই স্বীকৃতি ঘোষণা করা হতে পারে। বুধবার (১০ এপ্রিল) ফ্রান্স ফাইভ টেলিভিশনে প্রচারিত এক সাক্ষাৎকারে ম্যাখোঁ এই তথ্য জানান।
ম্যাখোঁ বলেন, “আমাদের স্বীকৃতির দিকে এগোতে হবে এবং আমরা তা আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই করব।” তিনি আরও জানান, “জুনে সৌদি আরবের সঙ্গে যৌথভাবে একটি সম্মেলনের আয়োজন করার পরিকল্পনা রয়েছে, যেখানে বিভিন্ন পক্ষের পারস্পরিক স্বীকৃতি নিয়ে চূড়ান্ত আলোচনা হতে পারে।”
তিনি ব্যাখ্যা করেন, ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার মাধ্যমে একদিকে যেমন ফিলিস্তিনিদের রাষ্ট্র গঠনের অধিকারের প্রতি সমর্থন জানানো হবে, তেমনি এটি ইসরায়েলের অস্তিত্ব অস্বীকারকারী শক্তির বিরুদ্ধেও স্পষ্ট বার্তা হিসেবে কাজ করবে। ম্যাখোঁ বলেন, “আমি এই স্বীকৃতি দেব, কারণ আমি বিশ্বাস করি কোনো এক সময় এটা করাই সঠিক হবে।”
ফ্রান্সের এই পদক্ষেপ হলে এটি হবে দেশটির নীতিতে এক বড় পরিবর্তন, যা ইসরায়েলের বিরূপ প্রতিক্রিয়া ডেকে আনতে পারে। ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিদেওন সাআর ইতোমধ্যে ফ্রান্সের সম্ভাব্য স্বীকৃতিকে ‘সন্ত্রাসবাদকে পুরস্কৃত করার পদক্ষেপ’ বলে অভিহিত করেছেন। তিনি এক্স (সাবেক টুইটার)-এ দেওয়া পোস্টে বলেন, “এ ধরনের স্বীকৃতি হামাসকে আরও শক্তিশালী করবে এবং শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়াকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।”

বিশ্বের প্রায় ১৫০টি দেশ ইতোমধ্যেই ফিলিস্তিনকে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।
২০২৪ সালের মে ও জুনে আয়ারল্যান্ড, নরওয়ে, স্পেন এবং স্লোভেনিয়া ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেয়। এসব সিদ্ধান্তের পেছনে গাজায় ইসরায়েলের চলমান সামরিক অভিযান এবং হামাসের ওপর বিমান হামলার নিন্দাই বড় ভূমিকা রেখেছে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
ফরাসি প্রেসিডেন্ট ম্যাখোঁ সম্প্রতি মিসর সফরকালে দেশটির প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি এবং জর্ডানের বাদশাহ আবদুল্লাহ দ্বিতীয়ের সঙ্গে আলোচনায় মিলিত হন। এই আলোচনায় তিনি গাজা ও পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি জনবসতিস্থাপন এবং সংযুক্তিকরণের তীব্র বিরোধিতা করেন।
সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবের সমালোচনা করে ম্যাখোঁ বলেন, “গাজা কোনো রিয়েল এস্টেট প্রকল্প নয়।” তিনি বলেন, “এখন আমাদের প্রধান দায়িত্ব হচ্ছে প্রাণ রক্ষা, শান্তি প্রতিষ্ঠা, এবং একটি রাজনৈতিক কাঠামো নিয়ে আলোচনার উদ্যোগ নেওয়া।”
তিনি হুঁশিয়ার করে বলেন, “যদি মৌলিক মানবিক প্রয়োজন মেটানো না হয়, তাহলে কেউ গাজায় এক পয়সাও বিনিয়োগ করবে না।”
ফিলিস্তিনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভারসেন আঘাবেকিয়ান শাহিন ফ্রান্সের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “এটি ফিলিস্তিনি জনগণের অধিকার এবং দুই রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধান রক্ষায় একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ।”
এই স্বীকৃতি যদি কার্যকর হয়, তবে ফ্রান্স হবে প্রথম গুরুত্বপূর্ণ ইউরোপীয় শক্তি যারা এমন সিদ্ধান্ত নিল, যেটি যুক্তরাষ্ট্রসহ কিছু পশ্চিমা দেশের দীর্ঘদিনের বিরোধিতার মুখে এসেছে। তবে ম্যাখোঁর বক্তব্য স্পষ্ট—তিনি কাউকে খুশি করতে নয়, বরং ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়াতেই এই স্বীকৃতি দিতে চান।
এখন বিশ্বজুড়ে নজর থাকবে আসন্ন জুন সম্মেলনের দিকে, যেখানে বহু দেশের অংশগ্রহণে মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার একটি সম্ভাব্য কূটনৈতিক মোড় ঘুরে যেতে পারে।
পড়ুন: গাজায় ইসরায়েলি হামলায় আরও ৪০ ফিলিস্তিনি নিহত
দেখুন: কাতার বিশ্বকাপে ইসরাইলকে হারালো ফিলিস্তিনি! |
ইম/