26.8 C
Dhaka
বৃহস্পতিবার, মার্চ ২৭, ২০২৫

শহীদ পরিবারের সদস্যদের অন্তত একজনকে চাকরি দিতে হবে

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, জুলাই-আগস্টের শহীদদের স্বপ্নের দুর্নীতিমুক্ত মানবিক বাংলাদেশ গড়তে চায় জামায়াত।

রোববার সকালে রাজধানীর বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে জামায়াতের সদস্য সহযোগী সমাবেশ ২০০৬ সাল থেকে ২০২৪ পর্যন্ত বিভিন্ন আন্দোলনে শহীদদের পরিবারের সদস্যদের সাথে এক মতবিনিময় সভায় তিনি একথা বলেন। তিনি আরও বলেন, ২০০৬ সালের মাস্টার মাইন্ডদের তাণ্ডবে এ দেশ পথ হারিয়েছিল।

জামায়াত আমীর বলেন, তরুণ ও পথহারা জাতি ২০০৬ সাল থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত লড়াই করে জাতিকে মুক্ত করেছে। এতে বহু পবিত্র জীবন গেছে। তিনি বলেন, ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত ফ্যাসিবাদের হত্যাকাণ্ডের ইতিহাস পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

জামায়াত আমীর বলেন, শহীদ পরিবারের সদস্যদের যোগ্যতা অনুসারে অন্তত একজনকে চাকরি দিয়ে কৃতজ্ঞতা জানাতে হবে। ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে যারা লড়াই করেছেন তাদেরকে চাকরিতে অগ্রাধিকার দিতে হবে। ফ্যাসিবাদ বিরোধীদলগুলোকে এসব পরিবারের পাশ দাঁড়ানোর আহবান জানান তিনি।

জামায়াত আমীর বলেন, আওয়ামী লীগ প্রায় ১৭ বছর গায়ের জোরে ক্ষমতায় থাকার চেষ্টা করেছেন। কোনো শাসক নিজেকে দেশের মালিক মনে করলে বা হলে তারা জালিম হন। শহীদ পরিবারের সদস্যদের সাথে সাক্ষাত ও আহতদের অনুভূতিগুলো জানিয়ে তিনি বলেন, গতকাল আমি বগুড়ায় গিয়েছিলাম। সেখানে অন্তত ৫০ জন কালো চশমা পড়া ছেলে আমাকে জড়িয়ে ধরে বলেছেন আমরা দুনিয়ার আলো দেখতে পারিনা।

জামায়াতের নায়েবে আমীর ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের বলেন, ২৮ অক্টোবর ছিল ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠার প্রথম মহড়া। সেদিন হত্যাকাণ্ড, লাশের ওপর নৃত্য করা হয়েছে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ছাত্রলীগের ইতিহাস খুন ও ধর্ষণের ইতিহাস। গণতন্ত্রকে কেড়ে নেয়ার ঐতিহ্য আওয়ামী লীগের। ভূখন্ড ত্যাগ করার ঐতিহ্য আওয়ামী লীগের। লাশের ওপর নৃত্য করার ঐতিহ্য ছাত্রলীগের।

সালাহউদ্দিন আহমেদ আরও বলেন, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবি উঠেছে। এটি জনতার দাবি। গণহত্যা করার পর আওয়ামী লীগ আবার রাজনীতি করার অধিকার রাখে কিনা সেটি জনগণের আদালতে ফয়সালা হবে।

তিনি বলেন, সাংবিধানিক সংকট তৈরির চেষ্টা চলছে। যাতে কোনো রাষ্ট্রীয় ও সাংবিধানিক সংকট না হয় এবং ফ্যাসিবাদ কোনো সুযোগ নিতে না পারে সে বিষয়ে সতর্ক হতে হবে।

জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খান বলেন, ২৮ অক্টোবর লগি বৈঠা দিয়ে মানুষ হত্যার নির্দেশ দিয়েছিলেন হাসিনা। ২৮ অক্টোবর থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত যত হত্যাকাণ্ড হয়েছে এর সঙ্গে জড়িত শেখ হাসিনাসহ সকলের বিচার করতে হবে।

ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর নুরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, শেখ হাসিনা নেতাকর্মীদের ইয়াতিম করে দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। ৫ আগস্ট ত্যাগ ও কোরবানির মাধ্যমে নতুন বাংলাদেশ পেয়েছি। নতুন কোনো ষড়যন্ত্রকারী বাংলাদেশের পথ হারাতে পারবে না ।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে এলডিপি মহাসচিব ড. রেদোয়ান আহমদ বলেন, ১৯৭১ সালে যুদ্ধ করেছিলাম মানবিকতা প্রতিষ্ঠা করতে, কিন্তু এখনো পারিনি।

জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমীর মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিনের সভাপতিত্বে এবং কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সেক্রেটারী ড. রেজাউল করিমের সঞ্চালনায় এই সদস্য সহযোগী সমাবেশ সদস্য ও ২০০৬ সাল থেকে ২০২৪ পর্যন্ত বিভিন্ন আন্দোলনে শহীদদের পরিবারের সদস্যদের সাথে এই মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।


গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খাঁন বলেন, শহীদদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে নতুন বাংলাদেশ পেয়েছি। হত্যাকাণ্ডের মাস্টারমাইন্ড শেখ হাসিনা, ওবায়দুল কাদেরসহ সকলকে দেশে ফিরিয়ে আনতে হবে। যারা দেশে লুকিয়ে আছে তাদেরকে চিরুনি অভিযানের মাধ্যমে গ্রেফতার করতে হবে। আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগকে নিষিদ্ধ করতে হবে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দ্বিতীয় গণহত্যা হয়েছে বাংলাদেশে। নির্বাচনের আগে রাষ্ট্র সংস্কার করতে হবে। গণহত্যাকারী কোনো দল নির্বাচনে অংশ নিতে পারে না। তাদেরকে দূরে রাখতে হবে।
জাগপা মুখপাত্র ও সহ-সভাপতি রাশেদ প্রধান বলেন, আওয়ামী লীগ বাংলাদেশে রক্তের হলি খেলতে চেয়েছিল। ছাত্রজনতার আন্দোলনে শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে গেছে। তারা ভারতের সেবাদাস।

বৈষমীবিরোধী আন্দোলনের হত্যাকান্ডসহ, পিলখানা, লগি বৈঠার হত্যাকান্ড, পিলখানা হত্যাকান্ড, শাপলা চত্বরের হত্যাকান্ড ও ৫ আগস্টের হত্যাকান্ডের বিচার হতে হবে। জনতার আদালতে শেখ হাসিনার বিচার করতে হবে। আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করেতে হবে।

এতে আরো বক্তব্য দেন সেক্রটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, নির্বাহী পরিষদ সদস্য সাইফুল ইসলাম খান মিলন, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজার রহমান ইরান, ঢাকা বি্শ্ববিদ্যালয় শাখার শিবির সেক্রেটারি এস এম ফরহাদ, ১২ দলীয় জোটের আহ্বায়ক ও সাবেক মন্ত্রী মোস্তফা জামাল হায়দার, এনপিপি সভাপতি এডভোকেট ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, খেলাফত মজলিশের মহাসচিব ড আহমাদ আব্দুল কাদের প্রমুখ।
শহীদ ফারহানুল ইসলামের পিতা বলেন, ফারহান ফাইয়াজ আমার একমাত্র ছেলে পুলিশের গুলিতে নিহত হন। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে দাবি -যারা হত্যাকাণ্ড চালিয়েছেন তাদের দ্রুত বাংলার মাটিতে বিচারের মুখোমুখি করা হয়। আর যেন ফ্যাসিস্ট সরকার প্রতিষ্ঠা হয়। কোরআনের আলোকে সংবিধান করা দরকার। ৭২ সংবিধান কেটে ছেটে নিজের মতো করেছেন। আবার যদি সেরকম সংবিধান থাকে তাহলে আমাদের সন্তানদের ত্যাগ বৃথা যাবে।
শহীদ আসাদের সদ্য ভুমিষ্ট সন্তানকে কোলে নিয়ে তার স্ত্রী বলেন, আমার সন্তানের মুখ আমার স্বামী দেখতে পারে নি। আমি স্বামী হত্যার বিচার চাই। আমার স্বামী কি অপরাধ করেছিল? তাকে তিনটি গুলি করা হয়েছিল। এসময় কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।
২০০৬ সালের ২ ৮ অক্টোবরে লগি বৈঠার তাণ্ডবে শহীদ পরিবারের সদস্য ও ২০২৪ সালের শহীদ পরিবারের সদস্যরা অভিব্যক্তি ব্যক্ত করে হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি করেন।
স্বাগত বক্তব্যে সেলিম উদ্দিন বলেন, দীর্ঘ লড়াই সংগ্রামের মধ্যদিয়ে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনাকে সরিয়েছি। তাদের দোসর যারা এখনো নানাভাবে ষড়যন্ত্র করছে, পাঁয়তারা করছে- তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে।

তিনি বলেন, জুলাই বিপ্লবে যারা হত্যাকাণ্ড চালিয়েছেন তাদের বিচার নিশ্চিত করতে হবে।
আয়না ঘর তৈরির জন্য, জামায়াত নেতাদের হত্যাকাণ্ডের বিচার করতে, জামায়াত নেতাদের হত্যার বিচার চাই। বিচারিক হত্যাকাণ্ডের রিভিউ করে বিচার দাবি করেন তিনি। একই সঙ্গে, মুগ্ধসহ হাজারো শহীদের হত্যাকারীদের বিচার মুক্তিযো দাবি করে জুলাই আগস্টে নিহতদের মুক্তি যোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ারও দাবি জানান সেলিম উদ্দিন।
মতবিনিময় সভায় কুটনৈতিক কোরের সদস্য, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রধান,বিভিন্ন সামাজিক,পেশাজীবি সংগঠনের নেতৃবৃন্দ এবং রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত আওয়ামী জুলুমের শিকার হয়ে শাহাদাৎবরণকারীদের সন্মানিত পরিবারের সহস্রাধিক সদস্য এবং অর্ধ সহস্রাধিক চোখ,হাত-পা হারানো ব্যক্তি উপস্থিত ছিলেন।
তিনটি অধিবেশনে উক্ত আয়োজন ছিলো। সকাল ১০টায় শুরু হয়ে ১.৩০টা পর্যন্ত শহীদ পরিবার,জাতীয় নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন, ১.৩০টায় প্রামাণ্য চিত্র প্রদর্শনী উদ্বোধন,৩টা থেকে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর অধ্যাপক মুজিবুর রহমান। সকালের মতবিনিময় সভায় ১১ সহস্রাধিক সুধী অংশ গ্রহণ করেন।

উপস্থিত ছিলেন নায়েবে আমীর অধ্যাপক মুজিবুর রহমান, সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এটিএম মা’ছুম, এএইচএম হামিদুর রহমান আযাদ, মাওলানা আব্দুল হালিম, কেন্দ্রীয় প্রচার সেক্রেটারি এডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ, কেন্দ্রীয় নির্বাহি পরিষদ সদস্য আব্দুর রব, মোবারক হোসেন,কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের নায়েবে আমীর আব্দুর রহমান মূসা, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের নায়েবে আমীর ইঞ্জিনিয়ার গোলাম মোস্তফা,দক্ষিণের নায়েবে আ.সবুর ফকির, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সহকারি সেক্রেটারি মাহফুজুর রহমান,নাজিম উদ্দীন মোল্লা ও ডা. ফখরুদ্দীন মানিক দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি দেলোয়ার হোসেন,কামাল হোসেন প্রমুখ।

বিজ্ঞাপন

আরও পড়ুন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

বিশেষ প্রতিবেদন