সরকার পতনের পর দেশের নানা স্থানে বিশৃঙ্খলার খবর পাওয়া যায়। সেই সুযোগে প্রচারণায় নেমে পড়ে শিক্ষার্থীদের পক্ষ বিপক্ষের নানা শক্তি। ডিপ ফেক ভিডিও থেকে পুরোনো ছবি-ভিডিও ব্যবহার করে ভারতে যেসব অপতথ্য ছড়ানো হয়েছে তার কিছু বর্ণনা করা হলো।
দেশের ২৯টি জেলায় সংখ্যালঘু হিন্দুদের উপর হামলার ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান পরিষদ।
তবে এই সকল খবরের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে অনেক অপতথ্য। কে বা কারা করছে এমনটা? যাচাই করে দেখেছে বাংলাদেশের ফ্যাক্ট চেক সংগঠন ডিসমিস ল্যাব ও রুমার স্যাকানার বাংলাদেশ। বিভিন্ন সময়ে ছড়িয়ে পড়া বিভিন্ন অপতথ্যকে ফ্যাক্ট চেক করে তার সত্যতা যাচাই করে বিভিন্ন প্রতিবেদন প্রচার করেছেন তারা।
চট্টগ্রামের নবগ্রহ মন্দিরে হামলার ঘটনার দাবিতে একটি ভিডিও পোস্ট হয় এক্স-এর ডেইলি লেটেস্ট আপডেটস অ্যাকাউন্ট থেকে। অ্যাকাউন্টটি ভারত থেকে পরিচালিত হয়। যাচাইয়ে জানা যায়, চট্টগ্রামের লালদিঘী পাড় সংলগ্ন নবগ্রহ মন্দিরে কোন হামলার ঘটনা ঘটেনি।
মন্দিরের কাছাকাছি অবস্থিত চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামীলীগের কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগ এবং ভাঙচুরের ঘটনায় সৃষ্ট আগুন। মন্দিরের তত্ত্বাবধায়ক স্বপন দাসও বিষয়টি নিশ্চিত করেন। রিপাবলিক বাংলার অফিশিয়াল ইউটিউব চ্যানেল থেকেও প্রকাশিত হয় ভিডিওটি। যা একটি অপতথ্য।
এছাড়া হিন্দুদের দোকানে আগুন দেয়া হয়েছে, জাতীয় খেলোয়ার লিটন দাসের বাড়িতে আগুন দেয়া, দিনাজপুরের বোচাগঞ্জে হিন্দু নারী ধর্ষণের দাবি, ইসকন, কালীমন্দিরসহ বহু মন্দিরে আগুন দেওয়া হয়েছে এবং ৫শ জন মারা গেছে বলে দাবি করে প্রচারিত সকল তথ্য গুজব নিশ্চিত করেছেন ডিসমিস ল্যাবের কয়েকটি প্রতিবেদন।
শুধু তাই নয়, চট্টগ্রামে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের ভবন থেকে ফেলে দেওয়ার ঘটনাকে হিন্দু হোস্টেলের ঘটনা বলে চালিয়ে দেওয়া হয়েছে। চাঁদপুরে মারধরে নিহত ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সেলিম খানের ছবি দিয়ে তা হিন্দু ব্যক্তির বলে দাবি করা হয়েছে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। এছাড়া সাম্প্রতিক সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা ‘আয়নাঘর’ ও সংসদ ভবনে গনকবর পাওয়ার ঘটনাও গুজব।
সরকারের পতনের পর সারা দেশে পুলিশ আত্মগোপনে চলে যায়। ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় সড়ক সামলাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। তাঁরাই নগর পরিচ্ছন্ন রাখার দায়িত্বও পালন করছেন। বিভিন্ন জায়গায় হিন্দু সম্প্রদায়ের ঘরবাড়ি ও মন্দির নাগরিক উদ্যোগে পাহারা দেওয়া হচ্ছে।
অপতথ্য ছড়ানো নিয়ে আল-জাজিরাও একটি প্রতিবেদনে বাংলাদেশি সমাজকর্মী ও লেখক অনুপম দেবাশীষ রায় জানান, বাংলাদেশে হিন্দু সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা হয়েছে, কিন্তু সংখ্যাটি অতিমাত্রায় বাড়িয়ে বলা হচ্ছে।
ডিসমিস ল্যাবের অনুসন্ধান অনুযায়ী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের জার্নালিজম অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সাঈদ আল-জামানের করা একটি গবেষণায় জানা যায় ৬৯.৩% ব্যবহারকারী ভুল তথ্য বিশ্বাস করে। এই গবেষণাটি আরো বলে যে ধর্মীয় ভুল তথ্য দ্বারা প্রভাবিত সহিংসতার সাথে ধর্মীয় সম্পর্কগুলোর চেয়ে বেশি রাজনৈতিক সংযোগ থাকতে পারে।
বিভিন্ন ইউটিউব চ্যানেল, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে এই ধরনের অপতথ্য ছড়ানো হয়েছে। ডিসমিস ল্যাবের প্রতিবেদন অনুযায়ী অধিকাংশ মাধ্যম ভারতীয় একাউন্ট থেকে পরিচালনা করা হচ্ছে।
যেকোন তথ্য ছড়ানো ও ব্যবহারের পূর্বে অবশ্যই ফেক্ট চেক করা অত্যন্ত জরুরি বলে মনে করেন দেশের এই ফেক্ট চেক সংগঠন গুলো।