চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) অপহৃত ৫ শিক্ষার্থীকে অপহরণকারী ‘ব্যাপক জনরোষের মুখে’ পড়ে কয়েক দফায় মুক্তি দিয়েছে বলে জানিয়েছে সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) সহযোগী ছাত্র সংগঠন পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ (পিসিপি)। বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) দুপুরে পিসিপি চবি শাখার তথ্য, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক রিবেক চাকমার সই করা এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিবৃতিতে রিবেক চাকমা জানিয়েছেন, ‘খাগড়াছড়ি সদরস্থ গিরিফুল এলাকা থেকে অপহৃত পিসিপি সদস্য রিশন চাকমাসহ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ শিক্ষার্থীকে ব্যাপক জনরোষের মুখে পড়ে অপহরণকারীরা কয়েক দফায় মুক্তি দিয়েছে বলে বিভিন্ন সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে নিশ্চিত হয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ (পিসিপি), চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা।’
এর আগে, চাকমাদের বিঝু উৎসব শেষে ১৬ এপ্রিল চট্টগ্রামে ফেরার পথে সকাল আনুমানিক সাড়ে ৬টার দিকে খাগড়াছড়ি সদর উপজেলার গিরিফুল এলাকা থেকে পিসিপি চবি শাখার সদস্য রিশন চাকমাসহ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ শিক্ষার্থীকে অপহরণ করা হয়। অপহরণের ঘটনার দিন বিকেলে জেএসএস সমর্থিত পিসিপি অপহরণের ঘটনা তুলে ধরে এবং অপহরণের ঘটনায় প্রসিত খীসার নেতৃত্বাধীন ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টকে (ইউপিডিএফ) দায়ী করে। অপহরণের ঘটনার ৮ দিন পর ৫ শিক্ষার্থীকে অপহরণকারীরা ‘জনরোষের মুখে’ মুক্তি দেওয়ার কথা জানায় পিসিপি।

মুক্তি পাওয়া শিক্ষার্থীরা হলেন- পিসিপি চবি শাখার সদস্য ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী রিশন চাকমা, চারুকলা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী অলড্রিন ত্রিপুরা ও মৈত্রীময় চাকমা, নাট্যকলা বিভাগের শিক্ষার্থী দিব্যি চাকমা এবং প্রাণীবিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থী লংঙি ম্রো। তারা পাঁচজনই ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী।
বিবৃতিতে আরও জানানো হয়, অপহরণের দিন (১৬ এপ্রিল) টমটম ড্রাইভারকে ছেড়ে দেওয়া হলেও পাঁচ শিক্ষার্থীকে অপহরণকারীরা ছেড়ে দেয়নি। এরপর অপহৃত পাঁচ শিক্ষার্থীর মুক্তির দাবিতে আপামর সাধারণ শিক্ষার্থী, প্রগতিশীল ব্যক্তি ও ছাত্র সংগঠনসমূহ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের সাধারণ শিক্ষার্থীরা আন্দোলন গড়ে তোলে। অবশেষে ব্যাপক জনরোষের মুখে পড়ে অপহরণকারীরা কয়েক দফায় মুক্তি দিয়েছে। অপহৃত পাঁচ শিক্ষার্থীর মুক্তির দাবিতে যারা সোচ্চার ছিলেন বিশেষ করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। বিবৃতিতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ (পিসিপি), চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা আন্তরিক ধন্যবাদ জানায়।
তবে অপহৃত শিক্ষার্থীরা মুক্তি পাওয়ার খবর এখনো নিশ্চিত করেনি আইনশৃঙ্খলাবাহিনী। জানতে চাইলে খাগড়াছড়ির পুলিশ সুপার আরেফিন জুয়েল বলেন, ‘অপহৃত পাঁচ শিক্ষার্থীকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে এরকম একটা খবর শুনেছি। তবে আমরা নিশ্চিত করে বলতে পারতেছি না।’
জানতে চাইলে পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি নিপন চাকমা বলেন, ‘বিভিন্ন সূত্রের মারফত জানতে পারছি শিক্ষার্থীদের কয়েক দফায় মুক্তি দিয়েছে। দিন ও তারিখ জানা যায়নি।’
অপহৃত চবি শিক্ষার্থী দিব্যি চাকমার মা ভারতী দেওয়ান বলেন, ‘আমার মেয়েকে আমি পেয়েছি। অন্যদের বিষয়ে বলতে পারব না।’ তবে তার মেয়েকে কিভাবে, কখন মুক্তি দেয়া হয়েছে; সে ব্যাপারে তিনি জানাতে চাননি।
অন্যদিকে, বৃহস্পতিবার দুপুরে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে ইউপিডিএফ দাবি করেছে, ‘রাঙামাটির কাউখালীর জীবতলী মইন এলাকা থেকে শিক্ষার্থী দিব্যি চাকমাকে ছেড়ে দেয়ার তথ্য কাল্পনিক, মিথ্যা ও বানোয়াট। বিবৃতিতে ইউপিডিএফ রাঙামাটি জেলা ইউনিটের সংগঠক সচল চাকমা বলেন, “শুধুমাত্র জেএসএস সন্তু গ্রুপের ছাত্র সংগঠনের নেতা-কর্মীদের কাল্পনিক অভিযোগের ভিত্তিতে খাগড়াছড়িতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫ শিক্ষার্থীকে কথিত অপহরণ ঘটনায় ইউপিডিএফকে জড়ানো উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও ষড়যন্ত্রমূলক। ইউপিডিএফ সংগঠক অংগ্য মারমা ইতিমধ্যে মিডিয়ায় বিবৃতি দিয়ে উক্ত কথিত অপহরণ ঘটনার সঙ্গে ইউপিডিএফের জড়িত থাকার অভিযোগ দ্ব্যর্থহীনভাবে প্রত্যাখ্যান করেছেন। এরপরও কথিত ঘটনার সঙ্গে ইউপিডিএফকে জড়িয়ে রাষ্ট্রীয় বিশেষ মহল ও জেএসএস সন্তু গ্রুপ যেভাবে হীনস্বার্থ চরিতার্থ করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে তা অত্যন্ত নিন্দনীয়।”
পড়ুন: ৫৮ ঘণ্টা পর অনশন ভাঙলেন কুয়েটের শিক্ষার্থীরা
দেখুন: ৫ চবি শিক্ষার্থীদের উদ্ধারে খাগড়াছড়িতে চলছে যৌথ বাহিনীর অভিযান |
ইম/