এই শীতে প্রতিদিন গড়ে ৬৭৫ শিশু ডায়রিয়া নিয়ে আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবির) মহাখালীর হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। এদের বড় অংশ রোটাভাইরাসজনিত ডায়রিয়ায় আক্রান্ত। মৃত্যুর ঘটনাও ঘটছে।
চিকিৎসক ও গবেষকেরা বলছেন, রোগীর সংখ্যা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি। অনেক শিশুকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) রেখে চিকিৎসা দিতে হচ্ছে। বাড়িতে ভুলভাবে স্যালাইন খাওয়ানোর কারণে অনেক শিশু রক্তে মাত্রাতিরিক্ত সোডিয়াম নিয়ে বা ‘হাইপারনেট্রিমিয়া’র লক্ষণ নিয়ে হাসপাতালে আসছে। নভেম্বর থেকে এ পর্যন্ত ১৫টি শিশুর মৃত্যু হয়েছে বলে শুধ আইসিডিডিআরবিতে।
বছরের অন্যান্য সময় যে ডায়রিয়া বা কলেরা দেখা দেয়, তার থেকে শীতকালীন ডায়রিয়ার কিছুটা পার্থক্য আছে। শীতকালে শিশুদের ডায়রিয়ার মূল জীবাণু রোটাভাইরাস।

কোন এরিয়া থেকে বেশি শিশু আসছে?
বছরের প্রথম দিন অর্থাৎ ১ জানুয়ারি ডায়রিয়া নিয়ে ৮৫০ শিশু হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল। আইসিডিডিআরবির দেওয়া তথ্যে দেখা যায়, কোনো কোনো দিন নয় শর বেশি রোগী ভর্তি হচ্ছে। এদের বয়স পাঁচ বছরের কম। দুই বছর বা তার কম বয়সী শিশুর সংখ্যা প্রায় ৮০ শতাংশ।
চিকিৎসকরা বলছেন, বিভিন্ন ধরনের ডায়রিয়া নিয়ে শিশুরা হাসপাতালে আসছে। এর মধ্যে রোটাভাইরাসজনিত ডায়রিয়ায় আক্রান্ত শিশু বেশি। এতে শিশুর ঘন ঘন পায়খানা হয়। পায়খানার রং কিছুটা দুধের মতো সাদা।
ঢাকা শহরের ২০টি এলাকা থেকে শিশুরা বেশি হাসপাতালে আসছে। শীর্ষে থাকা প্রথম পাঁচটি এলাকার মধ্যে আছে মোহাম্মদপুর, গুলশান, কামরাঙ্গীরচর, আশুলিয়া ও মিরপুর। ঢাকার আশপাশ এলাকার মধ্যে বেশি রোগী আসছে গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী ও কেরানীগঞ্জ থেকে।

কাদের ঝুঁকি বেশি?
ডায়রিয়া হলে বয়স্ক মানুষের মতো শিশুদেরও স্যালাইন খাওয়ানো হয়; কিন্তু নিয়ম বা বিধি মেনে স্যালাইন না খাওয়ানোর কারণে শিশুদের ঝুঁকি বাড়ছে। আইসিইউর দায়িত্ব থাকা চিকিৎসকেরা বলেন, প্রয়োজনের চেয়ে সোডিয়াম বেশি থাকলে শিশুর খিচুনি হয়, কিডনি বিকল হওয়ার ঝুঁকি থাকে। শিশু মারাও যায়। সঠিক চিকিৎসা না হলে স্নায়ুর স্থায়ী ক্ষতির ঝুঁকি তৈরি হয়। যেসব শিশুর মৃত্যু হয়েছে, তাদের ডায়রিয়ার পাশাপাশি অন্য রোগও ছিল বলে চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন।
ওরাল রিহাইড্রেশন সল্টস বা ওআরএস একটি ওষুধ। পানিতে গুলিয়ে স্যালাইন তৈরি ও খাওয়ার নিয়ম প্রতিটি প্যাকেটে লেখা আছে। গবেষণায় দেখা গেছে, সঠিকভাবে স্যালাইন তৈরি করতে ও শিশুকে খাওয়াতে জানেন না মায়েদের একটি অংশ।

শীতকালীন ডায়রিয়াতে করণীয়?
শিশুদের মধ্যে রোটাভাইরাসজনিত ডায়রিয়া গত বছর নভেম্বর থেকে বাড়তে দেখা গেছে। এই পরিস্থিতি আরও মাসখানেক থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
শিশুস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের একটি অংশ বলছে, রোটাভাইরাসের টিকা আছে। ভারত ও আফগানিস্তানে রোটাভাইরাসের টিকা ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হয়। বাংলাদেশের সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচিতে (ইপিআই) রোটাভাইরাসের টিকা অন্তর্ভুক্ত করা উচিত বলেও তারা জানান।
শিশুস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকারের পক্ষ থেকে ওআরএসের ব্যাপারে মায়েদের ও স্বাস্থ্যকর্মীদের সচেতনতা বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে। শিশুকে ঘরের বাইরের খাবার খাওয়ানো থেকে বিরত থাকতে হবে। বিশুদ্ধ খাবার পানি খাওয়াতে হবে। শিশুকে খাওয়ানোর আগে হাত সাবান দিয়ে ধুতে হবে। শিশুর মল পরিষ্কার করার পরও হাত ভালো করে পরিষ্কার করতে হবে।
এনএ/