31 C
Dhaka
রবিবার, অক্টোবর ৬, ২০২৪
spot_imgspot_img

শেয়ারবাজার থেকে কারসাজি করে অর্থ লুটের মহড়া

বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) গত দুই চেয়ারম্যানের আমলে শেয়ারবাজার থেকে অর্থ লুটের মহড়া চলেছে। দুর্বল কোম্পানির আইপিও তালিকাভুক্ত করা, অবৈধ প্লেসমেন্ট বাণিজ্য ও শেয়ার কারসাজির মাধ্যমে এ বাজার থেকে বেরিয়ে গেছে হাজার হাজার কোটি টাকা।

বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান ড. এম খায়রুল হোসেন ও অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের সময়ে ইনসাইডার ট্রেডিং থেকে শুরু করে, বন্ধ কোম্পানি চালুর নামে কৃত্রিম শেয়ার সংকট, নানা সুবিধা আর ঘুষ বাণিজ্যে প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও) অনুমোদন ও প্লেসমেন্ট বাণিজ্যের মতো নানা অনিয়ম করে শেয়ারবাজার থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ লুটপাট হয়।

এ দুই চেয়ারম্যানের সহায়তায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টার সালমান এফ রহমান বন্ড ইস্যু ও শেয়ার কারসাজির মাধ্যমে অর্থ আত্মসাত করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি ডিএসই ব্রোকারেজ অ্যাসোসিয়েশনের (ডিবিএ) পক্ষ থেকে এ ধরণের অভিযোগ করা হয়।

এছাড়া তাদের পৃষ্ঠপোষকতায় যারা বিশেষ সুবিধা নিয়ে বিনিয়োগকারীদের ক্ষতিগ্রস্ত করেছে তাদের মধ্যে বিএসইসির পরিচালক শেখ মাহবুব-উর-রহমান, সরকারি সমবায় অধিদপ্তরের ডেপুটি রেজিস্ট্রার আবুল খায়ের হিরু, তার প্রতিষ্ঠান ডিআইটি কো-অপারেটিভ, হিরুর বাবা আবুল কালাম মাদবর, আলোচিত কারসাজিকারক আব্দুল কাইয়ুম, হিরুর প্রতিষ্ঠান মোনার্ক হোল্ডিংস, ক্রিকেটার ও সাবেক সংসদ-সদস্য সাকিব আল হাসান, বহু বিতর্কিত ও যুক্তরাষ্ট্রে আর্থিক কেলেঙ্কারিতে জড়িত থাকা নিষিদ্ধ ব্যবসায়ী জাবেদ এ মতিন এবং বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক প্রেসিডেন্ট ছায়েদুর রহমান অন্যতম বলে অভিযোগ রয়েছে।

তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, বিএসইসির সাবেক দুই চেয়ারম্যান ও তাদের চক্রটি অবৈধভাবে সুবিধা নিয়ে শেয়ার মার্কেটে দুর্বল কোম্পানি সিএনএ টেক্সটাইল, এমারেল্ড ওয়েল, রিং সাইন টেক্সটাইল, অ্যাসোসিয়েট অক্সিজেন, ডোমিনেজ স্টীল, সাউথ বাংলা অ্যাগ্রিকালচারাল অ্যান্ড কমার্স ব্যাংক, এস আলমের মালিকানাধীন গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, এনআরবি ব্যাংক, শিকদার ইস্যুরেন্স, ক্যাপিটেপ গ্রামীণ ব্যাংক গ্রোথ ফান্ড, এশিয়াটিক ল্যাবসহ বিভিন্ন দুর্বল কোম্পানির আইপিও অনুমোদন নেয়। ইস্যু ম্যানেজার এএফসি ক্যাপিটাল, এনআরবি ইক্যুইটি, শাহজালাল ইক্যুইটি ম্যানেজমেন্টসহ আরও বেশকিছু প্রতিষ্ঠান আইপিও’র মাধ্যমে প্লেসমেন্ট বাণিজ্য করে বাজার থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা তুলে নেন। এতে সহায়তা করেন খায়রুল ও শিবলী কমিশন।

এর ফলে মার্কেটে তারল্য সংকট সৃষ্টি হয়ে ধারাবাহিক পতন হয় এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীরা নিঃস্ব হয়ে যান। এছাড়াও বেক্সিমকো লিমিটেডকে ২ হাজার ৬শ কোটি টাকার জিরো কুপন বন্ড অনুমোদন দেন শিবলী রুবাইয়াত। এরপর বিএসইসির চেয়ারম্যান হিসাবে শিবলী রুবাইয়াতের পুনঃনিয়োগে সরাসরি সহায়তা করেন সালমান এফ রহমান। 

এছাড়া বন্ধ কোম্পানি চালুর উদ্যোগ নিয়ে শেয়ার কারসাজির আরও রাস্তা খোলা হয়। বন্ধ কোম্পানি চালু করার নামে পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে নিজস্ব লোকদের নতুন পরিচালনা পর্ষদে নিয়োগ দিয়ে বেশকিছু কোম্পানি দখল করা হয়। এরমধ্যে এমারেল্ড অয়েল, ইমাম বাটন ইন্ডাস্ট্রিজসহ বেশকিছু কোম্পানির পর্ষদ ভেঙে শেয়ার কারসাজি করে শতকোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক প্রেসিডেন্ট ছায়েদুর রহমান নাগরিককে জানান, শেয়ার কারসাজি ও অর্থ আত্মসাতের ইস্যুতে সালমান এফ রহমানের সঙ্গে অনেকের নাম উঠে এসেছে। এর মধ্যে দেখলাম আমার নামও রয়েছে। যা অত্যন্ত অনভিপ্রেত। সালমান এফ রহমানের সঙ্গে আমাদের কোনদিনই ব্যবসায়িক কোন সম্পর্ক তৈরিই হয়নি। তাদের বেক্সিমকো সুকুক বন্ডের মাধ্যমে বাজার থেকে যে কয়েক হাজার কোটি টাকা বের করে নিয়ে গেল তার সঙ্গে আমার কোন সম্পৃক্ততা নেই। এখন শেয়ারবাজার থেকে অর্থ উত্তোলন করতে মার্চেন্ট ব্যাংক ইস্যু ম্যানেজার হিসেবে কাজ করে। যে ইস্যু ম্যানেজার এ কাজে সহায়তা করেছে তার নাম নেই কিন্তু অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্টের নাম উঠে এসেছে যা খুবই দু:খজনক।

শেয়ার কারসাজি ও প্লেসমেন্ট বাণিজ্যেও আপনার নামে অভিযোগ রয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা একটি সিকিউরিটিজ হাউজের এমডি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। আমাদের ইস্যু ম্যানেজার যখন আইপিও নিয়ে আসে তখন কোম্পানির সবকিছু ভালো ছিল। তারা বিএসইসির আইন কানুন মেনেই তালিকাভুক্ত হয়েছে। এখন তালিকাভুক্তির পর যদি কোন অস্বাভাবিক অবস্থা দেখা যায় সেটার জন্যতো ইস্যু ম্যানেজার দায়ী হতে পারে না। যদি আমার নামে অভিযোগ থেকেই থাকে তাহলে সুষ্ঠু তদন্ত হোক। কিন্তু ব্যক্তিগত আক্রোশে কেউ যেন নিরপরাধ কারো মান সম্মান নষ্ট না করে সেজন্য মিডিয়া থেকে শুরু করে সকলের প্রতি আহবান জানান ছায়েদুর রহমান।

spot_img
spot_img

আরও পড়ুন

spot_img

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

বিশেষ প্রতিবেদন